এশিয়ান আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপে কুলসুম আক্তার মনির হাত ধরে এই প্রথম এককের ইভেন্ট থেকে পদক পেল বাংলাদেশ। সেমি–ফাইনালে ভারতের প্রাদ্বীপ প্রিথিকার সাথে জমজমাট লড়াই করেও পারেননি মনি ফাইনালে উঠতে। তবে এই হতাশার ক্ষতে তিনি কিছুটা প্রলেপ দেন ব্রোঞ্জ নির্ধারণী ম্যাচ জিতে। এর আগে সকালের সেশনে বন্যা আক্তার ও হিমু বাছাড়া জুটি বাংলাদেশকে এনে দিয়েছিলেন মিশ্র দ্বৈতের রুপা। চলতি আসরে এ নিয়ে দুটি পদক পেল বাংলাদেশ। আর্মি স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার দিনের দ্বিতীয় সেশনে ব্রোঞ্জ নির্ধারণী লড়াইয়ে চাইনিজ তাইপের চেন সি উকে ১৪৫–১৪৪ স্কোরে হারান কুলসুম। শুরুর সেট ৩০–২৯ ব্যবধানে তিনি হারেন এবং এরপর দুই সেট ২৯–২৯, ২৯–২৯ শেষের পর চতুর্থ সেটেও হেরে বসেন ২৯–২৮ পয়েন্টে। ব্রোঞ্জ হারানোর শঙ্কা তখন জেগেছিল প্রবলভাবে, কিন্তু পঞ্চম ও শেষ সেটে দারুণ খেলে ৩০–২৭ ব্যবধানে জিতে এশিয়ান আর্চারিতে প্রথম ব্যক্তিগত পদক পাওয়ার উচ্ছ্বাসে ভাসেন কুলসুম আক্তার মনি। বাংলাদেশও পেয়ে যায় প্রথম এককের ইভেন্ট থেকে পদকের দেখা। এর আগে ২০২১ সালের আসরে তিনটি পদক পেয়েছিল বাংলাদেশ। সেগুলো ছিল রিকার্ভ মিশ্র দ্বৈত ও রিকার্ভ নারী ও পুরুষের দলগত ইভেন্টে। এর আগে সেমি–ফাইনালে তিনি ১৪৬–১৪৫ স্কোরে হেরে যান প্রিথিকার কাছে। শুরুর দুই সেট ৩০–৩০, ২৯–২৯ সমতায় শেষের পর তৃতীয় সেট তিনি ৩০–২৯ ব্যবধানে হেরে যান। পরের দুই সেট জমজমাট লড়াই করলেও ২৮–২৮, ২৯–২৯ সমতায় শেষ হলে ফাইনালে ওঠার আশা শেষ হয়ে যায় তার। অনেক দোলাচলের পর প্রথমবারের মতো এশিয়ান আর্চারিতে পদক জিতে উচ্ছ্বসিত কুলসুম। সেমি–ফাইনালের হার থেকে শিখেছেন বলেও জানালেন ঠাকুরগাঁ থেকে উঠে আসা এই আর্চার। ‘দিনের শেষটা খুব ভালো হয়েছে, আমি কিন্তু প্রথমে ভয় পেয়ে যাই। ভেবেছিলাম, হয়তো বা কিছুই পাবো না। শেষ পর্যন্ত লড়াই করেছি, সুন্দর ফিনিশিং করেছি। এটা আর্চারি, কখন কী হয়ে যায় বলা যায় না। প্রথমে আপসেট হয়ে গিয়েছিলাম, মনে হচ্ছিল আর পারলাম না। ও যখন আট মারে তখন আমি সম্ভাবনা দেখি। আমার জীবনে সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছি আজ। অনেক রোমাঞ্চিত আমি। কারণ এটা আমার প্রথম আন্তর্জাতিক পদক। আমি পদক নিশ্চিত হওয়ার পর খুশিতে কেঁদে দিয়েছি।’ ‘ভারতের কাছে সেমি–ফাইনালে ১ পয়েন্টে হেরেছি। এটা অনেক কিছু শিক্ষা দিয়েছে। একটা তীরও এদিক সেদিক মারা যাবে না। প্রতিটি তীর আত্মবিশ্বাস নিয়ে মারতে হবে, মনোযোগ দিয়ে মারতে হবে।’
এদিকে কম্পাউন্ড মিশ্র দ্বৈতের ফাইনালে ভারতের দ্বীপশিখা–অভিষেক ভার্মা জুটির কাছে ১৫৩–১৫১ স্কোরে হেরে রুপা পায় বাংলাদেশের হিমু–বন্যা জুটি। আর্মি স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার প্রথম সেটে ৩৯ তোলে ভারত, বাংলাদেশ তুলল ৩৫। শুরুর এই কমতি পরে একটু পুষিয়ে নেওয়া গেল, কিন্তু পুরোপুরি পারলেন না বন্যা আক্তার ও হিমু বাছাড়। কম্পাউন্ড মিশ্র দ্বৈতে সোনা জয়ের আশাও তাতে গুঁড়িয়ে গেল বাংলাদেশের। প্রথম সেটে ৪ পয়েন্টে পিছিয়ে পড়ার পর দ্বিতীয় সেটে ৩৯–৩৮ ব্যবধানে জিতে নেয় বাংলাদেশ। পরের সেটেও একই ব্যবধানে জিতে ভারতের সাথে বন্যা–হিমু ব্যবধান কমিয়ে আনেন ২ পয়েন্টে। কিন্তু চতুর্থ সেটে দুই দলই সমান ৩৮ করে পয়েন্ট তুললে হার নিশ্চিত হয়ে যায় বাংলাদেশের। পদক বিতরণী অনুষ্ঠানে যাওয়ার আগে এক কোণে দাঁড়িয়ে ছিলেন বন্যা ও হিমু। বন্যার চোখে মুখে হতাশার ছাপ স্পষ্ট। ভাগ্যকে পাশে না পাওয়ার কথা বললেন এই আর্চার। ‘আলহামদুলিল্লাহ। এশিয়ান আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপসের কম্পাউন্ড ইভেন্ট থেকে দেশকে এই প্রথম পদক এনে দিতে পেরেছি, ভালো লাগছে। স্বর্ণপদক হাতছাড়া হয়েছে। আসলে আমরা চেষ্টা করেছি, এখানে ভাগ্যেরও ব্যাপার থাকে। ভাগ্য আজ আমাদের পাশে ছিল না। শুরুতে আমরা একটু খারাপ করেছি, পরে চেষ্টা করলেও পারিনি।’ শুরুর সেটে নিজের সেরাটা মেলে ধরতে না পারার কারণ হিসেবে হিমু বললেন নিজের অনভিজ্ঞতার কথা। রুপা জয়ের উচ্ছ্বাসের ফাঁকে সোনা হারানোর হতাশার মিশেল তার কণ্ঠে। ‘এই প্রথম আমি এশিয়ান আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপসে খেললাম। আমি আসলে ওইরকম নার্ভাস ছিলাম না। আমার অভিজ্ঞতা একটু কম, শুরুতেই তাই একটু খারাপ হয়ে গেছে। তবে এশিয়ান আর্চারিতে আমরা এই প্রথম দেশকে পদক এনে দিতে পারলাম, এটা আমাদের সামনের পথচলায় আত্মবিশ্বাস যোগাবে।’ এশিয়ান আর্চারির সর্বোচ্চ আসরে কম্পাউন্ড ইভেন্ট থেকে এই প্রথম পদক পেল বাংলাদেশ। রিকার্ভ ও কম্পাউন্ড মিলিয়ে রুপা হলো দুটি। ২০২১ সালে রিকার্ভ মিশ্র দ্বৈত থেকে বাংলাদেশকে প্রথম রুপার পদক এনে দিয়েছিলেন হাকিম আহমেদ রুবেল ও দিয়া সিদ্দিকী জুটি।
একটি দলগত রুপা ও একটি ব্রোঞ্জ পেয়ে এশিয়ান আর্চারির এবারের আসর শেষ করল বাংলাদেশ। ২০২১ সালের একটি রুপা ও দুটি ব্রোঞ্জ জয়ের অর্জনকে ছাপিয়ে যেতে পারলেন না সাগর–বন্যারা। দুটি পদক পাওয়ার আনন্দ থাকলেও সব মিলিয়ে, বিশেষ করে রিকার্ভ ইভেন্টে পদক না পাওয়ায় হতাশ বাংলাদেশ কোচ মার্টিন ফ্রেডরিখ। ‘অবশ্যই রিকার্ভ নিয়ে হতাশ। তবে আমাদেরকে এটাও মেনে নিতে হবে, দক্ষিণ কোরিয়া আমাদের চেয়ে অনেক ভালো। কয়েকটা ইভেন্টে একটু আগেভাগে তাদের সাথে আমাদের লড়তে হয়েছে। এটা না হলে হয়ত আরেকটু ভালো ফল পেতাম আমরা।’










