ওয়ার্ডের চিকিৎসক দিয়েই চলছে বহির্বিভাগের সেবা

চমেক হাসপাতাল ।। বহির্বিভাগে অন্তত ৩ জন মেডিকেল অফিসার পদায়নের দাবি আজ বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস

জাহেদুল কবির | শুক্রবার , ১৪ নভেম্বর, ২০২৫ at ৪:৩৭ পূর্বাহ্ণ

আমাদের দেশে এক সময় ডায়াবেটিস ছিল স্বল্প পরিচিত একটি রোগের নাম। তবে আজকে সেটি মহামারি আকার ধারণ করেছে। শহর অঞ্চল ছাড়া গ্রামেও ডায়াবেটিস রোগী আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাচ্ছে। শহর ও গ্রামের হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীর চাপ। এছাড়া চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের বহির্বিভাগ এবং ওয়ার্ডে সেবা নিতে প্রতিদিনই ভিড় করছেন ডায়াবেটিস রোগীরা। অন্যদিকে বহির্বিভাগে নেই কোনো মেডিকেল অফিসার। তাই রোগীদের ওয়ার্ডের চিকিৎসকদের সেবা দিতে হচ্ছে। এদিকে চিকিৎসকরা ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সচেতন হওয়ার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন। কারণ ডায়াবেটিস আক্রান্ত অর্ধেক লোক জানেই না, তারা এ রোগে আক্রান্ত। সবচেয়ে আতঙ্কের বিষয় হচ্ছেদেশে ডায়াবেটিস আক্রান্তদের অর্ধেক মানুষ জানেই না তারা এ রোগে আক্রান্ত। প্রায় সময় অন্য কোনো রোগের পরীক্ষানিরীক্ষা করাতে গিয়ে রোগটি ধরা পড়ে। বিশেষ করে, যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি, তারা প্রথম দিকে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি বুঝতেই পারেন না। এমন পরিস্থিতিতে আজ বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশের পালিত হচ্ছে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস। দিবসটিতে এ বছর প্রতিপাদ্য ধরা হয়েছে-‘কর্মস্থলে ডায়াবেটিস সচেতনতা গড়ে তুলুন’।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত ডায়াবেটিস বংশগত কারণে ও পরিবেশের নানা প্রভাবে হয়। কখনো কখনো অন্যান্য রোগের ফলেও ডায়াবেটিস হয়ে থাকে। সব বয়সীদের এ রোগ হতে পারে। ডায়াবেটিস একবার হলে আর সারে না। বলা যায়এটি আজীবনের রোগ। ঘনঘন প্রস্রাব হওয়া ও পিপাসা লাগা, দুর্বল লাগা, ক্ষুধা বেড়ে যাওয়া, সময় মতো খাওয়াদাওয়া না হলে রক্তের শর্করা কমে হাইপো হওয়া, মিষ্টি জাতীয় জিনিসের প্রতি আকর্ষণ বেড়ে যাওয়া, কোনো কারণ ছাড়াই অনেক ওজন কমে যাওয়া, শরীরে ক্ষত বা কাটাছেঁড়া হলে দীর্ঘদিনেও সেটা না সারা, চামড়ায় শুষ্ক, খসখসে ও চুলকানি ভাব, বিরক্তি ও মেজাজ খিটখিটে হয়ে ওঠা এবং চোখে কম দেখতে শুরু করাডায়াবেটিস রোগের অন্যতম লক্ষণ। ডায়াবেটিস প্রতিরোধে প্রচুর শাকসবজি, ফলমূল ও মোটা শস্যদানা জাতীয় খাবার খেতে হবে। এতে টাইপ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব হবে। এছাড়া ডায়াবেটিসের বোঝা কমানোর জন্য অবশ্যই স্বাস্থ্য সম্মত খাবার খেতে হবে। সুষম খাবার টাইপ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি অনেকাংশে কমিয়ে আনে। তবে বর্তমানে হাইক্যালরি ও অপুষ্টিকর সস্তা খাবার বিশেষত ফাস্টফুড গ্রহণ বেড়ে যাওয়ায় বাড়ছে টাইপ২ ডায়াবেটিস। এছাড়া স্থূলতা, কায়িক পরিশ্রম না করাও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম একটি কারণ। তবে সুশৃঙ্খল জীবনযাপন করলে রোগী নিজেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম মেডিকেলে কলেজের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগে বর্তমানে একজন অধ্যাপক, একজন সহযোগী অধ্যাপক, দুইজন সহকারী অধ্যাপক, একজন রেজিস্ট্রার এবং একজন সহকারী রেজিস্ট্রার কর্মরত আছেন। এছাড়া ওয়ার্ডে নেই কোনো ইনডোর মেডিকেল অফিসার। বিভিন্ন বিভাগ থেকে আগত স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী এবং অনারারি চিকিৎসক দিয়ে ওয়ার্ড চালাতে হচ্ছে। বিশেষ করে বহির্বিভাগে মেডিকেল অফিসার না থাকায় ওয়ার্ডের চিকিৎসক দিয়েই বহির্বিভাগ চালাতে হচ্ছে। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে বহির্বিভাগের জন্য জরুরি ভিত্তিতে ৪ জন মেডিকেল অফিসার পদায়ন করা জরুরি বলে মত দিয়েছেন চিকিৎসকরা। ওয়ার্ডে মোট শয্যা আছে ১৬টি। এরমধ্যে ৮টি পুরুষ এবং ৮টি মহিলার জন্য সংরক্ষিত। তবে বর্তমানে ডায়াবেটিস ও অন্যান্য হরমোন রোগ বাড়ার কারণে নির্ধারিত শয্যার বাইরে দেড় থেকে দ্বিগুণ বেশি রোগী ভর্তি থাকছে। শয্যার অতিরিক্ত রোগীকে মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। ওয়ার্ডে নেই কোনো এইচডিইউ বেড। জটিল রোগীদের তাই বাধ্য হয়ে মেডিসিন ওয়ার্ডে রেখে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। এতে রোগীদের চিকিৎসা ও ফলোআপ করতেও ডায়াবেটিস চিকিৎসকদের মেডিসিন ওয়ার্ডে দৌঁড়াদৌড়ি করতে হচ্ছে। তাই ওয়ার্ডে অন্তত চারটি এইচডিইউ বেড স্থাপনসহ মোট শয্যা ১৬ থেকে ৩২ এ উন্নীত করা প্রয়োজন।

চমেক হাসপাতালের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. ফারহানা আক্তার দৈনিক আজাদীকে বলেন, ডায়াবেটিস আজীবনের রোগ। এই রোগ সম্পূর্ণ নিরাময়ের কোনো সুযোগ নেই। তবে বর্তমানে ডায়াবেটিস রোগের চিকিৎসার নামে অনেক অপচিকিৎসা চলছে। এখানে কিটো ডায়েট তত্ত্ব সামনে এনে বলা হচ্ছেওষুধ না খেয়েই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। সোশ্যাল মিডিয়ায় এ নিয়ে অনেক চটকদার বিজ্ঞাপনও হচ্ছে। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছেএ তালিকায় স্বীকৃত মেডিকেল থেকে এমবিবিএস পাশ করা ডাক্তারও কিটো ডায়েট তত্ত্ব নিয়ে ‘ফেসবুকইউটিউবে ভিউ’ ব্যবসা করছেন। সাধারণ মানুষ তাদের সেই তত্ত্ব গ্রহণ করছে। এছাড়া ডায়াবেটিসের রোগের চিকিৎসায় অনেকে মনে করেনএকবার ইনসুলিন দিলে সারা জীবন দিতে হবে। আসলে ইনসুলিন দেয়ার পরে অবস্থার উন্নতি হলে আবার মুখের ওষুধে ফিরিয়ে আনা যায়। সাধারণ মানুষকে এসব বিভ্রান্তি থেকে সরে আসতে হবে। কোনো ধরনের অপপ্রচারে প্রলুব্ধ হয়ে অপচিকিৎসা নেয়া যাবে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রায় ৫ কোটি টাকার নষ্ট গম রোদে শুকিয়ে বাজারজাত করার প্রক্রিয়া
পরবর্তী নিবন্ধপুলিশ দেখে পালালো চালক, কারে মিলল ৩ কোটি টাকার ইয়াবা