লালদিয়া বন্দর নির্মাণ-পরিচালনায় হচ্ছে ৩০ বছরের চুক্তি

কাজ পাচ্ছে ডেনমার্কের প্রতিষ্ঠান এপিএম টার্মিনালস ।। বর্তমান সক্ষমতার দ্বিগুণ আকারের জাহাজ ধারণ করতে পারবে, মাদারভেসেলে সরাসরি আপলোড ।। অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটিতে প্রস্তাব অনুমোদন

| বৃহস্পতিবার , ১৩ নভেম্বর, ২০২৫ at ৪:৫৮ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং টার্মিনালের দ্বিগুণ ক্ষমতায় এর অদূরেই লালদিয়ায় আরেকটি আধুনিক কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ করা হচ্ছে, যা পরিচালনার দায়িত্ব পাবে ডেনমার্কভিত্তিক এপিএম টার্মিনালস। শিপিং কোম্পানি মার্স্ক গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এপিএম টার্মিনালসের সঙ্গে এ টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনায় ৩০ বছরের চুক্তি করতে যাচ্ছে সরকার। গতকাল বুধবার ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন পাবলিকপ্রাইভেট পার্টনারশিপ অথরিটির (পিপিপিএ) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আশিক চৌধুরী, যিনি বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষবিডারও চেয়ারম্যান। খবর বিডিনিউজের।

এদিন অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটিতে এ চুক্তি উপস্থাপন করা হলে তা অনুমোদন করা হয় বলে জানান তিনি। পরে আশিক চৌধুরী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গত কয়েকমাস ধরে আমরা এই প্রকল্প নিয়ে কাজ করছিলাম। আজকে (গতকাল বুধবার) অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটিতে প্রস্তাবটি উত্থাপন করা হয়েছে এবং অনুমোদন পেয়েছে। আগামী সপ্তাহে চুক্তি স্বাক্ষর করব। জানুয়ারিতে নির্মাণকাজ শুরু হয়ে যাবে। ২০২৯ সালের মধ্যে বন্দরটি চালু হবে বলে আশা করছি। চুক্তি করার সঙ্গে সঙ্গে এপিএম টার্মিনাল ‘সাইনিং মানি’ হিসেবে বাংলাদেশ সরকারকে ২৫০ কোটি টাকা দেবে বলে জানান তিনি।

চট্টগ্রামে নিউমুরিং টার্মিনাল থেকে ৯ কিলোমিটার দূরে এবং মূল সমুদ্র থেকে ৫ কিলোমিটার ভূভাগে জেগে ওঠা লালদিয়ার চরে এ কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। এ নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে কার্যক্রম চালাচ্ছে সরকার। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও এপিএম এর মধ্যে চূড়ান্ত চুক্তি হবে জানিয়ে আশিক চৌধুরী বলেন, দেশের প্রথম গ্রিন ও স্মার্ট পোর্ট, যা বর্তমান সক্ষমতার দ্বিগুণ আকারের জাহাজ ধারণ করতে পারবে এবং ২৪ ঘণ্টা নাইট ন্যাভিগেশন সুবিধাসহ পূর্ণমাত্রায় পরিচালিত হবে। এই বন্দরের হ্যান্ডলিং সক্ষমতা ৮ লাখ টিইইউ, যা বর্তমান সক্ষমতার তুলনায় প্রায় ৪৪ শতাংশ বেশি। আগে শ্রীলংকা ও সিঙ্গাপুর বন্দরে অবস্থান করা মাদারভেসেলের জন্য ফিডার ভেসেলে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কনটেইনার নিয়ে যেতে হত। এখন সেটা সরাসরি আপলোড করা যাবে।

বিডা, বেজাসহ বিনিয়োগ ও শিল্পোন্নোয়ন সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রধান আশিক চৌধুরী বলেন, চরাঞ্চলের সম্পূর্ণ সবুজ ঘাস থেকে বন্দর নির্মাণ কাজ শুরু করবে এপিএম। বন্দরের মালিকানা আমাদের কাছেই থাকছে। ৩০ বছর পর বন্দরটা আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। তবে সরকার ভালো মনে করলে সময় বৃদ্ধি করতে পারবে। ইউরোপ থেকে এত বড় বিনিয়োগ আর কখনও আসেনি।

এছাড়া প্রতিবছর আট লাখ টিইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের শর্ত থাকার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রতি টিইউএস এর জন্য ২১ ডলার করে পাবে সরকার। আট লাখের বেশি হ্যান্ডল করলে প্রতি টিইউএসের জন্য ২৩ ডলার করে দেবেন। আবার ৯ লাখ টিইউএসের বেশি হলে বাকিটার জন্য মাশুল কমবে। ওনারা বেশি কনটেইনার হ্যান্ডেল করবেন এমনভাবেই বিষয়টি সাজিয়েছি।

পিপিপি কর্তৃপক্ষ জানায়, এপিএম টার্মিনালস এই প্রকল্পে ডিজাইন, ফাইন্যান্স, বিল্ড ও অপারেট করবে। তবে বন্দরটির মালিকানা থাকবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের অধীনে। বিশ্ব ব্যাংকের তথ্যনুযায়ী, ডেনমার্কের শিপিং কোম্পানিটি ২০২৪ সাল পর্যন্ত ৩৩টি দেশে ৬০টির বেশি টার্মিনাল পরিচালনা করছে। বিশ্বের শীর্ষ ২০টি বন্দরের মধ্যে ১০টি বন্দরের অপারেটর করে আসেছে। ইউরোপ ছাড়াও চীন, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়ায় তাদের বন্দর পরিচালনার অভিজ্ঞতা রয়েছে।

এই প্রকল্পের নির্মাণ ও পরিচালনা পর্যায়ে ৫০০ থেকে ৭০০ মানুষের কর্মসংস্থান হবে জানিয়ে আশিক চৌধুরী বলেন, পরে এপিএম টর্মিনালের অন্য দেশের বন্দরগুলোতেও তারা কাজ করার সুযোগ পাবেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅযথা পরিস্থিতি ঘোলাটে করবেন না
পরবর্তী নিবন্ধদুই শ্যুটার পান দুই লাখ টাকা