কোন জাতীয়তা সনদ নেই আব্দুল জলিলের। কক্সবাজারের একটি এলাকায় জন্মেছেন বলা হলেও এর সপক্ষে কোনো রেকর্ডপত্র নেই। পূর্ব পুরুষদের বাংলাদেশি নাগরিকত্বের কোন বৈধ রেকর্ডপত্র পাওয়া যায়নি। পিতা–মাতার নামে কোনো ভূমির রেকর্ডপত্র কিংবা ভূমিহীন সনদ কিংবা মৃত্যুর সনদ পাওয়া যায়নি। সেই তিনি তথা আব্দুল জলিল নির্বাচন কর্মকর্তা ও জন্ম নিবন্ধন সহকারীর সহযোগিতায় ভুয়া তথ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) তৈরি করে ফেলেছেন।
দুদকের অনুসন্ধানেই উঠে এসেছে এ তথ্য। এ ঘটনায় দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম–১ এ দুদক প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক অংটি চৌধুরী বাদী হয়ে আব্দুল জলিলসহ তিনজনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছেন। বাকী দুই আসামি হলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৮ নং শুলকবহর ওয়ার্ডের সাবেক জন্ম নিবন্ধন সহকারী পিন্টু কুমার দে এবং বন্দর থানার সাবেক নির্বাচন অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম।
মামলার এজহারে বলা হয়, আব্দুল জলিলের কোনো জাতীয়তা সনদ নেই। কঙবাজারের নতুন মহল চৌফলদন্ডীতে তিনি জন্মগ্রহণ করেছেন বলা হলেও এর সপক্ষে কোনো রেকর্ডপত্র নেই। তার পূর্ব পুরুষদের বাংলাদেশি নাগরিকত্বের কোনো বৈধ রেকর্ডপত্র পাওয়া যায়নি। তার বাবা–মার নামে কোন ভূমির রেকর্ডপত্র কিংবা ভূমিহীন সনদ কিংবা মৃত্যুর সনদ পাওয়া যায়নি। তিনি দাবি করেছেন যে, তার পিতা–মাতা ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে মারা গিয়েছেন। কিন্তু কোনো মৃত্যু সনদ পাওয়া যায়নি।
এজহারে বলা হয়, ২০১১ সালের ২২ জুলাই চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৮ নং শুলকবহর ওয়ার্ড অফিসের জন্ম নিবন্ধন সহকারী পিন্টু কুমার দে’র সহযোগিতায় বৈধ রেকর্ডপত্র ছাড়া তিনি (জলিল) জন্ম নিবন্ধন করেন। এরপর ২০১৭ সালের ১৪ মে শুলকবহর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোরশেদ আলম ও জন্ম নিবন্ধন সহকারী অশোক কুমার দত্তের জাল সই দিয়ে জাল জন্ম নিবন্ধন তৈরি করেন। নির্বাচন কমিশনে অন্য কোন রেকর্ডপত্র না দিয়ে, নির্বাচনী ফর্মের অনেকগুলো ঘর খালি রেখে এবং ভুয়া স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা ব্যবহার করে নগরীর বন্দর থানা নির্বাচন অফিসের কার্যালয় থেকে তৎকালীন থানা নির্বাচনী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলমের সহায়তায় কোনো রেজিস্ট্রার ছাড়াই জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেন। এর জন্য তিনি বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন অনুযায়ী নিবন্ধন ফর্ম নম্বর ৪২২৯২১৯২ পূরণ করেন।
এ বিষয়ে বলা হয়, নির্বাচন কমিশন ফর্মে মোট ৪৬টি ঘর পূরণ করতে হয়। কিন্তু আব্দুল জলিলের নির্বাচন কমিশন রেকর্ডপত্র অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন ফর্মের অধিকাংশ ঘর ফাঁকা ছিলো। নির্বাচন কমিশন ফর্মে বাবা–মার নাম থাকলেও বাবা–মার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বরের ঘর ফাঁকা। একইভাবে, স্ত্রীর জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বরের ঘর ফাঁকা। নির্বাচন কমিশন ফর্মের ২৫ নম্বর ঘরে স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে চট্টগ্রামের পটিয়া পৌরসভার পটিয়া পশ্চিম জলিলের বাড়ি ব্যবহার করলেও জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির জন্য নির্বাচন কমিশনে যে জন্ম নিবন্ধন জমা দিয়েছেন সেখানে তিনি স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে কঙবাজারের নতুন মহল চৌফলদন্ডী এবং নগরীর শুলকবহর এলাকাকে বর্তমান ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করেছেন। এজহারে বলা হয়, আব্দুল জলিলের উল্লেখিত স্থায়ী এবং বর্তমান ঠিকানাগুলোতে তার এবং তার পরিবারের সদস্যদের বসবাসের কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। এছাড়া নির্বাচন কমিশন ফর্মে মোবাইল নম্বর, ধর্ম, বাদ পড়া ভোটারের কারণ, শনাক্তকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র নং, তথ্য সংগ্রহকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র নং, সুপারভাইজারের জাতীয় পরিচয়পত্র নং, যাচাইকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র নং ও ডাটা এন্ট্রি অপারেটরের জাতীয় পরিচয়পত্র নং ঘর খালি রাখা হয়েছে। জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন ফর্ম পূরণ করতে হলে নির্বাচন কমিশন অফিসে জমির কাগজ, জাতীয়তা সনদ, শিক্ষা সনদ, বিদ্যুৎ বিলের কপি, প্রত্যায়ন পত্র ইত্যাদি রেকর্ডপত্র সংযুক্ত করতে হয়। কিন্তু আসামি আব্দুল জলিলের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র একটি জন্ম নিবন্ধন পাওয়া গেছে। তিনি কোনো জাতীয়তা সনদ ছাড়াই জাতীয় পরিচয়পত্র করেছেন। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ডাটাবেইস সার্ভারে তিনি যে জন্ম সনদ জমা দিয়েছেন তার সাথে সনদের যাচাইকারীর স্বাক্ষর ও নিবন্ধকের স্বাক্ষরে সঠিক পাওয়া যায়নি। তার জন্ম সনদটি শুলকবহর ওয়ার্ড থেকে করা হলেও সেখানে তার জন্ম নিবন্ধনের স্বপক্ষে ক্রমিক নং ০৬৬২১৫ ছাড়া আর কোন তথ্য লিপিবদ্ধ নেই। আব্দুল জলিল উক্ত জাল জন্ম সনদ দিয়ে বন্দর থানা নির্বাচন অফিসের কার্যালয় থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেন বলেও এজহারে বলা হয়।
দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম–১ এর উপপরিচালক সুবেল আহমেদ আজাদীকে মামলার তথ্যটি নিশ্চিত করেন।










