চট্টগ্রামে ৫ বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ

বিদ্যুৎ সেক্টরে জ্বালানি সংকট ।। কক্সবাজারে উইন্ডমিল পরিচালিত ৬০ মেগাওয়াট কেন্দ্রটিও বন্ধ দেশে মোট বন্ধ রয়েছে ৩০টি, ১৮টিতে উৎপাদন সীমিত

হাসান আকবর | বুধবার , ১২ নভেম্বর, ২০২৫ at ৪:০৭ পূর্বাহ্ণ

দেশের বিদ্যুৎ সেক্টরে জ্বালানি সংকট প্রকট হয়ে উঠছে। প্রয়োজনীয় জ্বালানির অভাবে দেশের মোট ১৩৫টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে গ্যাসনির্ভর ১৫টি কেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এছাড়া ফার্নেস অয়েলভিত্তিক ১০টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদনও বন্ধ। যান্ত্রিক ত্রুটিতে বন্ধ হয়ে আছে আরো পাঁচটি। আবার ১৮টি কেন্দ্রে জ্বালানি সংকটে উৎপাদন সীমিত করা হচ্ছে। বন্ধ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মধ্যে ৫টি আছে চট্টগ্রামে। এছাড়া কক্সবাজারের উইন্ডমিল পরিচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রটিও বন্ধ রয়েছে।

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দেশে ব্যবহৃত বিদ্যুতের বড় একটি অংশ আমদানি করা হচ্ছে নেপাল ও ভারত থেকে। বিদ্যুৎ খাতের আমদানিনির্ভরতা আর্থিক বোঝা বাড়ানোর পাশাপাশি জ্বালানি নিরাপত্তা নিয়ে সংশয় তৈরি করছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো মন্তব্য করেছে।

সূত্রে জানা যায়, দেশে বর্তমানে দৈনিক গড় বিদ্যুৎ চাহিদা প্রায় ১৫ হাজার মেগাওয়াট। দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোর পাশাপাশি আমদানিকৃত বিদ্যুৎ দিয়ে এই চাহিদা পূরণ করা হয়। দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলো প্রাকৃতিক গ্যাস, এলএনজি, ফার্নেস অয়েল এবং কয়লা দিয়ে পরিচালিত হয়। কিন্তু গত বেশ কিছুদিন ধরে বিদ্যুৎ খাতের জ্বালানি নিয়ে সংকট দেখা দিয়েছে।

বিদ্যুৎ বিভাগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানিয়েছে, প্রয়োজনীয় গ্যাসের অভাবে সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে ১৫টি কেন্দ্রের উৎপাদন। এগুলো হলো ঘোড়াশাল রিপাওয়ারড ইউনিট(৪১০ মেগাওয়াট), ঘোড়াশাল ইউনিট(২১০ মেগাওয়াট), ঘোড়াশাল ইউনিট(৩৬৫ মেগাওয়াট), ঘোড়াশাল (১০৮ মেগাওয়াট), টঙ্গী (৮০ মেগাওয়াট), সিদ্ধিরগঞ্জ (১২০ মেগাওয়াট), মেঘনাঘাট (৩৩৫ মেগাওয়াট), মেঘনাঘাট (৫৮৩ মেগাওয়াট), মেঘনাঘাট জেরা (৭১৮ মেগাওয়াট), রাউজান তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র (৪২০ মেগাওয়াট), কর্ণফুলী পাওয়ার লিমিটেড (১১০ মেগাওয়াট), আশুগঞ্জ (৪৫০ মেগাওয়াট), ফেঞ্চুগঞ্জ (৯৭ মেগাওয়াট), বাঘাবাড়ী (৭১ মেগাওয়াট) ও সিরাজগঞ্জ ইউনিট ২(২২৫ মেগাওয়াট)

একইভাবে তেলভিত্তিক ১০টি কেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এগুলো হচ্ছে রূপসা (১০৫ মেগাওয়াট), মধুমতী (১০০ মেগাওয়াট), চৌমুহনী (১১৩ মেগাওয়াট), সাইদপুর (১৫০ মেগাওয়াট), সাইদপুর (২০ মেগাওয়াট), গাগনগর (১০২ মেগাওয়াট), মেঘনাঘাট (১০৪ মেগাওয়াট), পতেঙ্গা (৫০ মেগাওয়াট), শিকলবাহা (১০৫ মেগাওয়াট), কর্ণফুলী পাওয়ার লিমিটেড (১০০ মেগাওয়াট)। তেল সংকটের কারণে সীমিত পরিমাণে উৎপাদন চালাচ্ছে আরো ১৮টি কেন্দ্র। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে উৎপাদন সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে পাঁচটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের। এর মধ্যে আছে আশুগঞ্জ (২২৫ মেগাওয়াট), শাহজিবাজার (৩৩০ মেগাওয়াট), বাঘাবাড়ী (১০০ মেগাওয়াট) ও বড়পুকুরিয়া (২৭৫ মেগাওয়াট)

এসব কেন্দ্রসহ উৎপাদন সীমিত করায় অন্তত সাড়ে ৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কমেছে। সরকার পরিস্থিতি সামাল দিতে ভারত ও নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করছে। গত কয়েকদিনের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সরকার গড়ে আড়াই হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ আমদানি করছে। এর মধ্যে ভেড়ামারা থেকে ১ হাজার মেগাওয়াট, ত্রিপুরা থেকে ১৬০ মেগাওয়াট, আদানি পাওয়ার থেকে প্রায় দেড় হাজার মেগাওয়াট এবং নেপাল থেকে গড়ে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে।

আমদানিকৃত বিদ্যুৎ দিয়ে দেশের চাহিদার প্রায় ১৬ শতাংশ পূরণ করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করে সূত্রগুলো বলেছে, আমদানি বাড়াতে হলে সরকারের খরচও বেড়ে যাবে; যা দেশের জ্বালানি নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বড় ধরনের প্রশ্ন তৈরি করছে।

বিদ্যুতের আমদানিনির্ভরতা কমাতে সরকারের সঠিক পলিসি তৈরি এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে গুরুত্ব দেয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করে সূত্রগুলো বলেছে, নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বাংলাদেশ অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে এ খাতের ভূমিকা সামান্যই। বর্তমানে ১৩টি সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে গড়ে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়। উইন্ডমিল পরিচালিত কঙবাজার ৬০ মেগাওয়াট ও সিরাজগঞ্জ ২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এই দুটি কেন্দ্র থেকে কোনো বিদ্যুৎ পাওয়া যায় না।

বিদ্যুৎ বিভাগের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা গতকাল আজাদীকে জানান, শীতকালে বিদ্যুতের চাহিদা কমে এলে আমদানিনির্ভরতা কমবে। উত্তরাঞ্চলে কিছু লোডশেডিং করতে হলেও চট্টগ্রামে বিদ্যুতের কোনো সংকট নেই বলে জানান তারা। তারা বলেন, সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে সরকার এগুচ্ছে। নিশ্চয় সামনের দিনগুলোতে বিদ্যুতের এসব সংকট কেটে যাবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএক বছর পর যেভাবে জট খুলল হাসান তারেক হত্যার
পরবর্তী নিবন্ধব্যাংক কর্মকর্তাসহ দুই ব্যক্তিকে ১৪ বছর করে কারাদণ্ড