চারজন কৃষককে ব্যবসায়ী সাজিয়ে ৩১ কোটি ৬৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, তার স্ত্রী, বোন, ভাই ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেডের (ইউসিবিএল) বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাসহ মোট ২৯ জনের বিরুদ্ধে পৃথক চারটি মামলা দায়ের করেছে দুদক। গতকাল দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম–১ মামলাগুলো দায়ের করেন দুদক প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. মাইনউদ্দীন, উপ–সহকারী পরিচালক মো. সজীব আহমেদ, মো. রুবেল হোসেন ও উপ–পরিচালক মো. মশিউর রহমান।
আসামিরা হলেন– সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, স্ত্রী ও ইউসিবিএল’র সাবেক চেয়ারম্যান রুকমীলা জামান, বোন ও সাবেক পরিচালক রোকসানা জামান চৌধুরী, ভাই ও সাবেক পরিচালক আনিসুজ্জামান চৌধুরী রনি, আসিফুজ্জামান চৌধুরী, ব্যাংকটির সাবেক পরিচালক বশির আহমেদ, পরিচালক এম এ সবুর, ইউনুছ আহমদ, নুরুল ইসলাম চৌধুরী, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান বজল আহমেদ বাবুল, ব্যাংকটির চকবাজার শাখার ভিপি ও শাখা প্রধান মো. আব্দুল হামিদ চৌধুরী, সঞ্জয় বোস, এফএভিপি ও ম্যানেজার অপারেশন মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, জুনিয়র অফিসার ও রিলেশনশিপ অফিসার ইমতিয়াজ মাহবুব, জুনিয়র অফিসার শ্রাবণ তহুরা, সিনিয়র এঙিকিউটিভ অফিসার ও ক্রেডিট ইনচার্জ হোসনি মোবারক জিকু, সিনিয়র অফিসার সুস্মিতা আক্তার, পোর্ট শাখার এভিপি ও অপারেশন ম্যানেজার মো. আব্দুল আউয়াল, ভিপি ও শাখা প্রধান মো. জাহিদ হায়দার, ব্যাংকটির এঙিকিউটিভ অফিসার মো. আবু বকর খান, সিনিয়র এঙিকিউটিভ অফিসার জামাল উদ্দিন, এভিপি জিয়াউল করিম খান, বিএন্ডবি ইলেক্টট্রনিঙ নামের প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান, দিদারুল আলম, মো. সুমন, মডেল ট্রেডিং ও আরামিটের এও মোহাম্মদ মিছবাহুল আলম, ক্লাসিক ট্রেডিং ও আরামিটের এজিএম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, আলোক ইন্টারন্যাশনালের প্রদীপ কুমার বিশ্বাস এবং বশির আহমেদের স্ত্রী ও মেঘনা ব্যাংকের পরিচালক তারানা আহমেদ। এদের মধ্য থেকে ১৩ জন একটিতে, ১৫ জন একটিতে, ১৯ জন একটিতে ও ১৭ জনকে অপর একটি মামলায় আসামি করা হয়। সাইফুজ্জামান চৌধুরী, স্ত্রী রুকমিলা জামাল ও বোন রোকসানা জামান চৌধুরীর নাম রয়েছে দুটি মামলায়। সাইফুজ্জামানের ভাই আনিসুজ্জামান চৌধুরী, আসিফুজ্জামান চৌধুরী ও ইউসিবিএল এর সাবেক পরিচালক বশির আহমেদের নাম রয়েছে চারটি মামলাতেই।
মামলাগুলোর এজাহারে বলা হয়, গ্রামের সহজ সরল কৃষক ইউনুছ, মো. আয়ুব, ফরিদুল আলম ও নুরুল বশরদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে ব্যাংক কর্মকর্তাদের দিয়ে ভুয়া ও অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংক হিসাব খুলে ঋণ নেওয়া হয়। এরপর উক্ত ঋণের টাকা আত্মসাৎ করে হস্তান্তর, স্থানান্তর, ও রূপান্তর করা হয়।
১৩ জনের বিরুদ্ধে করা মামলার এজাহারে বলা হয়, কৃষক ইউনুছকে ব্যবসায়ী সাজিয়ে ইউনাইটেড ট্রেডিং নামের একটি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স গ্রহণ করা হয়। পরে সেটি দিয়ে সইবিহীন ও ভুয়া মোবাইল নম্বর দিয়ে একটি হিসাব খুলে ৯ কোটি ৯৯ লাখ ২৫ হাজার ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করা হয়। ১৭ জনের বিরুদ্ধে করা মামলার এজাহারে বলা হয়, কৃষক নুরুল বশরকে বশর ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক ও ইলেকট্রনিঙ পণ্যের আমদানিকারক সাজিয়ে ৮ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয। এরপর উক্তঋণ উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়েছে। ১৯ জনের নামে করা মামলার এজাহারে বলা হয়, কৃষক ফরিদুল আলমকে ইউনিক এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক ও ইলেকট্রনিঙ, কসমেটিকস ও খাদ্য পণ্যের আমদানিকারক সাজিয়ে ৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা ঋণ নেওয়া হয়। এরপর উক্ত ঋণ আত্মসাৎ করা হয়। ১৫ জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়, কৃষক মো. আয়ুবকে মোহাম্মদীয়া এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক ও ইলেকট্রনিঙ ও খাদ্যদ্রব্যের আমদানিকারক সাজিয়ে ৫ কোটি ২০ লাখ টাকা ঋণ নেওয়া হয়। পরে তা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন আসামিরা।
দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম–১ এর উপ–পরিচালক সুবেল আহমেদ দৈনিক আজাদীকে বলেন, আসামিদের দ্বারা সংঘটিত অপরাধ দণ্ডবিধি, দুর্নীতি প্রতিরোধ ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।










