ইন্দোনেশিয়া তাদের সাবেক প্রেসিডেন্ট সুহার্তোকে জাতীয় নায়কের খেতাবে ভূষিত করেছে। স্বৈরাচারী শাসনের জন্য কুখ্যাত সুহার্তোকে এমন মর্যাদা দেওয়া নিয়ে দেশটিতে ব্যাপক বিতর্কও চলছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। খবর বিডিনিউজের।
১৯৬০ এর দশক থেকে শুরু করে ১৯৯০ এর দশক পর্যন্ত সুহার্তোর নতুন ব্যবস্থার শাসনামলে ইন্দোনেশিয়া ব্যাপক অর্থনৈতিক অগ্রগতি দেখেছে, একইসঙ্গে সাক্ষী হয়েছে তীব্র রাজনৈতিক দমনপীড়নেরও। ওই সময়ে লাখ লাখ রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীকে প্রাণ দিতে হয়। সোমবার তাকেসহ ১০ জনকে যে অনুষ্ঠানে জাতীয় নায়কের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়, তার সভাপতিত্ব করেন ইন্দোনেশিয়ার এখনকার প্রেসিডেন্ট প্রাবোয়ো সুবিয়ান্তো। তিনি সুহার্তোর সাবেক জামাতা। গত বছরের অক্টোবরে ইন্দোনেশিয়ার সমাজ ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এ খেতাবের জন্য সুহার্তোসহ প্রাথমিকভাবে প্রায় ৫০ জনকে মনোনীত করেছিল। সোমবার জাকার্তার মেরদেকা প্রাসাদে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সুহার্তোর ছেলেমেয়েরা উপস্থিত ছিলেন। ইন্দোনেশিয়ার স্বাধীনতা অর্জনের কালে খ্যাতির চূড়ায় ওঠেন সুহার্তো, তিনি ১৯৪৫ সালে ইয়োগিয়াকার্তার লড়াইয়ে জাপানি সেনাদের আত্মসমর্পণকালে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, পুরস্কার বিতরণের সময় প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের লাইভস্ট্রিমের ভয়েসওভারে এমনটা শোনা যায়। তবে সুহার্তোকে জাতীয় নায়ক ঘোষণা দেশটির নাগরিক সমাজের তীব্র বিরোধিতার মুখে পড়েছে। সুহার্তোকে এ খেতাবের জন্য মনোনীত করার প্রতিবাদে গত সপ্তাহে জাকার্তায় প্রায় শতাধিক মানুষ জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছে, একই দাবিতে অনলাইনে এক আবেদনে প্রায় ১৬ হাজার স্বাক্ষর জমা পড়েছে। সোমবারও সুহার্তোকে জাতীয় নায়ক মর্যাদায় ভূষিত করার প্রতিবাদে জাকার্তায় বিক্ষোভ হওয়ার কথা রয়েছে।
পরিস্থিতি মোকাবেলায় রাজধানীতে নিরাপত্তা বাহিনীর শত শত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এর আগে এক বিবৃতিতে বেসরকারি সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্দোনেশিয়া জাতীয় নায়ক খেতাব দেওয়ার এ পদক্ষেপকে ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টা আখ্যা দিয়ে বলেছে, এ পদক্ষেপের মাধ্যমে সুহার্তোর কর্তৃত্ববাদী শাসনের পাপ মুছে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে। এমনিতেই সুহার্তোর শাসনামল নিয়ে ইন্দোনেশিয়ায় সমালোচনা আছে, তারওপর প্রাবোয়োর আমলে তাকে জাতীয় নায়ক ঘোষণা বিতর্কের মাত্রা দ্বিগুণ করেছে। দুজনের বিরুদ্ধেই মানবাধিকার লঙ্ঘনের এমন সব অভিযোগ আছে, যা উপেক্ষা করা অসম্ভব।
১৯৬৫ সালে ক্ষমতা দখলের পর রক্তগঙ্গা বইয়ে দিয়েছিলেন সুহার্তো। ইন্দোনেশিয়ার ইতিহাসে চরম অরাজকতার ওই সময়ে অন্তত ৫ লাখ কমিউনিস্ট হত্যার অভিযোগ পাওয়া যায়। তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা তার শাসনামলকে চিহ্নিত করা যায় নির্যাতন, গুম ও ব্যাপক দমনপীড়নের কাল হিসেবে। ৫০ বছর আগে পূর্ব তিমুরে তার আগ্রাসনকে স্নায়ুযুদ্ধকালীন অন্যতম নির্মম সামরিক অভিযান বিবেচনা করা হয়। তবে তার দীর্ঘ শাসনই যে আধুনিক ইন্দোনেশিয়ার ভিত গড়ে দিয়েছিল, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। শক্তি প্রয়োগের ক্ষেত্রে অতুলনীয় হলেও তার মূল মনোযোগ ছিল উন্নয়ন ও দেশে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করা। ব্যাপক মাত্রায় দুর্নীতি থাকলেও ওই লক্ষ্য অর্জনে তাকে মোটামুটি সফলই বলা যায়। তার শাসনামলে প্রতিবছর ইন্দোনেশিয়া গড়ে ৭% প্রবৃদ্ধি দেখেছে, মূল্যস্ফীতি ১৯৬৬ সালের ৬০০% থেকে ১৯৯৭ সালে ১০% এর আশপাশে নেমে আসে। দেশটি এখন দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম অর্থনীতি। সুহার্তো যে খেতাব গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করেছিলেন, সেটি হচ্ছে বাপাক পেমবাঙ্গুনান বা উন্নয়নের জনক। ক্ষমতায় থাকাকালে তিনি শত শত কোটি ডলার আত্মসাত করেছিলেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। ১৯৯৮ সালে তীব্র অর্থনৈতিক সঙ্কটকালে সুহার্তো তীব্র বিরোধিতার সম্মুখীন হয়েছিলেন। এরপর তিনি আপসেই পদত্যাগ করেন এবং তুলনামূলক শান্তিপূর্ণভাবেই ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। বেশিরভাগ ইন্দোনেশীয়ই এখন সুহার্তোর শাসনামলের ইতিবাচক পদক্ষেপগুলোকেই বেশি স্মরণ করেন, লিখেছে বিবিসি।












