আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পিছিয়ে গেলে দেশের সর্বনাশ হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘আজকে যে চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র চলছে নির্বাচনকে বানচাল করে দেওয়ার, নির্বাচনকে পিছিয়ে দেওয়ার; সেই নির্বাচনকে পিছিয়ে দেওয়া মানে আমাদের সর্বনাশ হওয়া। এ দেশের সর্বনাশ হওয়া। কারণ এখন একটা নির্বাচিত সরকার খুব দরকার। এই সরকারটা এখন তাড়াতাড়ি নির্বাচনটা করবে। প্রফেসর ইউনূসকে আমরা সম্মান করি, শ্রদ্ধা করি। তিনি অতি দ্রুত আর কোন কালবিলম্ব না করে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার ব্যবস্থা করবেন। দেশের একটা নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা করবেন।’ খবর বিডিনিউজের।
গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঠাকুরগাঁও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের আয়োজনে মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা করেন। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা বিরোধীদের সঙ্গে এ দেশের মানুষের কোনো আপস হতে পারে না বলেও মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘আজকে সুপরিকল্পিতভাবে একটি চক্র, একটি মহল যারা ১৯৭১ সালে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর সঙ্গে যোগসাজশ করে এদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করেছিল, তাদের পরিবারকে হত্যা করেছিল; তাদের মেয়েদের তুলে দিয়েছিল খান বাহিনীর হাতে, তাদের সঙ্গে কি এদেশের মানুষ আপোষ করতে পারে? পারে না। এজন্য মুক্তিযোদ্ধাদের গর্জে উঠতে হবে তো। আজকে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনা সেই চেতনাকে সামনে আনতে হবে। আমরা এদেশের মানুষ লড়াই করেছি, সংগ্রাম করেছি, মুক্তিযুদ্ধ করে ৭১ সালে দেশকে স্বাধীন করেছি।’
একাত্তরের দিনগুলো স্মরণ করিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘নয়টা মাস আমরা দীর্ঘকাল যুদ্ধ করেছি, পরিবার–পরিজনের খবর নেওয়া হয়নি, কত মানুষ কোথায় চলে গেছে। সেই ৭১–কে ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে কি সেটা ভোলা যাবে? আমি কি আমার জন্মটাকে ভুলতে পারি, এটা মাথার মধ্যে রাখতে হবে।’
বাংলানিউজ জানায় : নিজের প্রয়াত পিতা মির্জা রুহুল আমিনকে স্মরণ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ঠাকুরগাঁও জেলার যা কিছু আধুনিক, এর শুরু আমার বাবার হাতে। এই জেলার প্রতিটি সৎ মানুষ জানে আমার বাবার কথা। আমার বাবা মারা যাওয়ার পরে তার স্মৃতি রক্ষার জন্য নিয়ে যে ফাউন্ডেশন হয়, তার নেতৃত্বে ছিলেন ঠাকুরগাঁওয়ের সব নামকরা রাজনীতিবিদ। ১৯৯৭ সালে বাবার মৃত্যুতে সরকারি শোক প্রকাশ করা হয়।
গতকাল সোমবার বিকেলে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে তিনি এ কথা লেখেন। তিনি লিখেছেন, ‘আমার আব্বা মরহুম মির্জা রুহুল আমিন ১৯৭১ সালে মার্চের ২৭ তারিখে আমার নানাবাড়ি যান আমার দুই বোন এবং মাকে নিয়ে। তারপর এপ্রিল এ চলে যান ভারতের ইসলামপুরে। রিফিউজি ক্যাম্প এ ছিলেন যুদ্ধের প্রায় পুরোটা সময়। ৩ ডিসেম্বর ঠাকুরগাঁও স্বাধীন হয়। আমার বাবা ঠাকুরগাঁও ফিরে আসেন তখনই। যখন ফিরে আসেন, দেখেন সব লুট হয়ে গেছে। আমার মরহুম মা তার গয়না বিক্রি করেন। আমি যোগ দিই অর্থনীতি শিক্ষকতায়। প্রথম বেতন তুলে দিই আম্মার হাতে। আল্লাহর রহমতে জীবন চলে যায়। ১৯৭১ এর পরে বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষ এভাবেই ধ্বংসস্তূপ থেকে তৈরি করেছে জীবন।’












