লোহাগাড়ায় ‘বন বিভাগের জায়গায়’ পাহাড় কেটে নির্মাণ করা হচ্ছে পাকা ভবন। উপজেলার চুনতি ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইছহাক মিয়া সড়ক সংলগ্ন মেহেরুন্নেছা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাশে এই ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে পাহাড়ের স্বাভাবিক গঠন নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি বেড়েছে ভূমিধসের ঝুঁকি।
স্থানীয়রা জানান, পাহাড় কাটার কাজ বেশিরভাগ সময় রাতে করা হয়। যাতে প্রশাসনসহ সাধারণ মানুষের নজরে না পড়ে। তবে দিনের বেলায়ও প্রকাশ্যে মাটি পরিবহনের দৃশ্য চোখে পড়ে। পাহাড় কাটার কারণে বর্ষা মৌসুমে ছোট ছোট ফাটল দেখা দিচ্ছে। যা ভবিষ্যতে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা তৈরি করছে। পাহাড় কেটে পাকা ভবন নির্মাণের ঘটনা নতুন নয়, তবে সাম্প্রতিক সময়ে তা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপের অভাবে পরিবেশের উপর এই হুমকি প্রতিনিয়ত বাড়ছে। গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, চুনতি ইউনিয়নের ইছহাক মিয়া সড়ক সংলগ্ন মেহেরুন্নেছা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পূর্ব পাশে পাহাড় কেটে পাকা ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে পিলার তৈরি করে ভবনের ভিত্তি দৃশ্যমান করা হয়েছে। পাহাড় কেটে ভবন নির্মাণ কার্যক্রম লোকচক্ষুর আড়াল করতে রাস্তার পাশে কালো পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রবাসী শরাফত আলী পাহাড় কেটে এই পাকা ভবন নির্মাণ করছেন। বনবিভাগের লোকজন এসে কয়েকবার বাধা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ভবন নির্মাণ কাজ তদারকিতে থাকা লোকজন তাদেরকে পাহাড় কাটার স্থানে যেতে দেয়নি। বনবিভাগের লোকজনকে উল্টো হুমকি দিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছেন। তাই স্থানীয় সংবাদকর্মীরা নিরাপত্তার স্বার্থে ঘটনাস্থলের অদূরে গিয়ে ড্রোন উড়িয়ে পাহাড় কেটে ভবন নির্মাণের স্থান পর্যবেক্ষণ করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, আমরা বহু বছর যাবত এখানে বসবাস করে আসছি। আগে এখানে সবুজ পাহাড় ছিল। এখন শুধু পাহাড় কেটে সমান করে বাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে। বর্ষায় পাহাড় ধসে পড়লে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে আশপাশে বসবাসকারী মানুষ।
স্থানীয় পরিবেশবাদীরা জানান, পাহাড় কেটে স্থাপনা নির্মাণ অব্যাহত থাকলে এলাকায় পানি ধারণক্ষমতা কমে যেতে পারে। যার ফলে বর্ষা মৌসুমে হঠাৎ বন্যা ও জলাবদ্ধতার ঝুঁকি বাড়বে। এছাড়া পাহাড় ক্ষয় হওয়ার ফলে আশেপাশের ছড়া–খাল ভরাট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এভাবে পাহাড় ধ্বংস হলে জীববৈচিত্র্য নষ্ট হবে এবং বন্যপ্রাণীর স্বাভাবিক আবাসস্থল চিরতরে হারিয়ে যাবে। যার প্রভাব দীর্ঘমেয়াদে পুরো পরিবেশ ব্যবস্থার উপর পড়বে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল কালাম জানান, পাহাড় কেটে যে স্থানে পাকা ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে, সেখানে খাস খতিয়াভুক্ত ও বন বিভাগের জায়গা দুটিই রয়েছে। এভাবে নির্বিচারে পাহাড় কাটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এতে পরিবেশের ক্ষতি হওয়ার পাশাপাশি ভবিষ্যতে বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
চুনতি রেঞ্জের আওতাধীন সাতগড় বনবিট কর্মকর্তা মো. মহসীন আলী ইমরান জানান, খবর পেয়ে কয়েকবার পাহাড় কেটে পাকা ভবন নির্মাণের স্থানে গিয়ে বাধা দেয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু প্রতিবার পাহাড় কেটে পাকা ভবন নির্মাণে জড়িতদের উগ্র আচরণের কারণে ঘটনাস্থল থেকে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছি।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) দেলোয়ার হোসেন জানান, খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে ওই পাহাড়টি খাস খতিয়ানভুক্ত। বনের জায়গায় পাহাড় কেটে বসতঘর নির্মাণ করলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
লোহাগাড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মং এছেন জানান, পাহাড় কাটা দণ্ডনীয় অপরাধ। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।












