নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় : রসিকতার জগতে এক অনন্য স্রষ্টা

| বৃহস্পতিবার , ৬ নভেম্বর, ২০২৫ at ৯:২৬ পূর্বাহ্ণ

নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় (১৯১৮১৯৭০)। তিনি বাংলা সাহিত্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, যিনি গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক ও শিশুসাহিত্যে তাঁর অনন্য অবদানের জন্য চিরস্মরণীয়। তাঁর জন্ম ১৯১৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি, ফরিদপুর জেলার নবাবগঞ্জ মহকুমার বালিয়াকান্দি গ্রামে। পূর্ণ নাম নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় হলেও তিনি মূলত ‘টেনিদা’র স্রষ্টা হিসেবেই সর্বাধিক জনপ্রিয়। তাঁর রসাত্মক ও মানবিক লেখনী বাংলা সাহিত্যে এক নতুন স্বাদ এনেছিল। প্রাথমিক শিক্ষা বালিয়াকান্দি ও ফরিদপুরে শেষ করে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা সাহিত্যে এম.. ও পরে পিএইচ.ডি. ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসেবে দীর্ঘদিন অধ্যাপনা করেন। নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের সাহিত্যকর্মের বৈশিষ্ট্য হলো তাঁর সহজবোধ্য ভাষা, তীক্ষ্ণ রসবোধ, সামাজিক বাস্তবতা ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি। তাঁর সৃষ্ট চরিত্রগুলো বিশেষত টেনিদা, প্যালা, হাবুল, ক্যাবলা বাংলা কিশোর সাহিত্যে এক অনন্য জগৎ সৃষ্টি করেছে। তার রচিত পদ্মপাতার দিন, পঞ্চাননের হাতি, লালমাটি, তারা ফোটার সময়, ক্যাম্বের আকাশ, বাংলা গল্প বিচিত্রা, ঘণ্টাদার কাবলু কাকা, খুশির হাওয়া, কম্বল নিরুদ্দেশ, চারমূর্তির অভিযান, ঝাউবাংলার রহস্য ও ছোটদের শ্রেষ্ঠ গল্প বাংলা শিশুকিশোর সাহিত্যে নতুন সংযোজন। তাঁর ভাষা ছিল প্রাণবন্ত, ছন্দোময় ও কথ্যধর্মী, যা পাঠকের হৃদয়ে সরাসরি পৌঁছে যায়। তিনি রসিকতাকে কেবল হাসির উপকরণ হিসেবে নয়, বরং জীবনের গভীর সত্য প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেছেন। শিক্ষক হিসেবে তিনি ছিলেন প্রিয়, নির্ভীক ও চিন্তাশীল আর লেখক হিসেবে অকৃত্রিম, মানবিক ও হৃদয়স্পর্শী। নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় ১৯৭০ সালের ৬ নভেম্বর মাত্র বাহান্ন বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন, কিন্তু তাঁর সৃষ্ট চরিত্র ও সাহিত্য আজও জীবন্ত। তাঁর রচনায় যে উষ্ণ মানবতা, সূক্ষ্ম রসবোধ ও জীবনের প্রতি মমতা প্রকাশ পেয়েছে, তা বাংলা সাহিত্যে তাঁকে চিরকাল প্রাসঙ্গিক করে রেখেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনগরীর অপরিচ্ছন্ন রূপ কারো প্রত্যাশিত নয়
পরবর্তী নিবন্ধঅন্ধকারের ফুল