চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন–এর এক বছর পূর্ণ হয়েছে গতকাল ৫ নভেম্বর। এই এক বছরের দায়িত্বকালে তিনি কী করেছেন এবং কী করতে পারেননি, তা নিয়ে হিসেবনিকেশ চলছে নগরে। দৈনিক আজাদীতে ৩ নভেম্বর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে মেয়র শাহাদাত আজাদীকে বললেন সাফল্য, চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনার কথা। তিনি বলেছেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল খননসহ নানা পদক্ষেপ গ্রহণ, দিনের পরিবর্তে রাতে বর্জ্য অপসারণ, বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তরে প্রকল্প নেয়া, প্রশাসনিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় অস্থায়ীদের স্থায়ীকরণ, দুর্নীতি করলে ব্যবস্থা নেয়া, চসিককে স্বাবলম্বী করতে পুনর্মূল্যায়নের আলোকে বন্দর থেকে পৌরকর আদায়ের উদ্যোগ, খেলার মাঠ নির্মাণ, সেবা সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় নিশ্চিত, বেদখলে থাকা প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি উদ্ধার, কর্মস্থলে পরিচ্ছন্নকর্মীদের উপস্থিতি নিশ্চিতে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে পরিদর্শন ও পরিচ্ছন্নকর্মীদের হাজিরা নেয়াসহ নাগরিক সেবা নিশ্চিতে নানা উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সাংগঠনিক দক্ষতা, আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও নাগরিক সম্পৃক্ততাসহ ১৫ ক্যাটাগরিতে দেশের সিটি কর্পোরেশনগুলোর পরিচালন ব্যবস্থার (সিটি গভর্ন্যান্স) ওপর একটি মূল্যায়ন করে। ১০০ মূল্যায়ন নম্বরের মধ্যে ৯০ পেয়ে আমরা প্রথম হয়েছি। কাজেই এটা বলতে পারি, জনগণের সার্বিক সহযোগিতায় চসিক প্রথম স্থান অর্জন করে। এটা আমাদের জন্য একটা বিশাল অর্জন, যা চট্টগ্রামবাসীকে উৎসর্গ করতে চাই।
আরো অনেক অর্জনের কথা তিনি বলেছেন। ডা. শাহাদাত বলেন, ওয়েস্ট প্রোডাক্টগুলো বায়োগ্যাসে পরিণত করতে হালিশহর টিজিতে ফিজিবিলিটি স্টাডি চলছে। সেটা ঢাকাতেও হয়নি। প্রথমবার চট্টগ্রামে হচ্ছে। এটা নিয়ে একটা কোরিয়ান কোম্পানির সাথে আমাদের চুক্তি হয়েছে। যদি বায়োগ্যাস উৎপাদন করতে পারি সেটা নতুন মাত্রা যোগ করবে। আমেরিকান আরেকটা কোম্পানির সাথে চুক্তি হচ্ছে। তারা আরেফিন নগরে গ্রিন ডিজেল উৎপন্ন করবে। জাপান, সিঙ্গাপুর, ইউকে এবং কোরিয়ান আরেকটা কোম্পানিও আমাদের সাথে কাজ করতে চায়। তাদের সাথেও কথাবার্তা চলছে। গ্রিন সিটির জায়গায় কাজগুলো চলছে। তিনি বলেন, ডোর টু ডোরে এখন ৭০ থেকে ৮০ টাকা নেয়া হচ্ছে। আমরা যদি আমাদের প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করে আয় বাড়াতে পারি, তখন ডোর টু ডোর সার্ভিসটা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দিব। এটার জন্য হয়তো ৫ থেকে ৬ মাস লাগবে। শুধুমাত্র ময়লাটাকে আমাদের লাগবে বিধায় ডোর টু ডোর করা হয়েছে।
অনেক বিষয়ে অর্জনের কথা স্বীকার করেই বলতে হয়, নগরীকে পরিচ্ছন্ন রাখার ক্ষেত্রে মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের আন্তরিক তৎপরতা আরো বৃদ্ধি করতে হবে। উন্নয়ন পরিকল্পনার পাশাপাশি পরিচ্ছন্ন নগরী গড়ে তুলতে সাধারণ মানুষকে সচেতন করে তোলা জরুরি। তা না হলে সব উন্নয়ন প্রকল্প ভেস্তে যাবে বলে আশংকা রয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন বিভাগের কর্মীদের ওপর খোদ মেয়রের আস্থা নেই। তিনি তাদের বিরুদ্ধে কাজে ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ করেছেন। গত ২৬ মে দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা যায়, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) পরিচ্ছন্ন বিভাগের অনেক কর্মীর বিরুদ্ধে দায়িত্বে ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, অভিযোগ রয়েছে অনেকে সাইন করে চলে যাচ্ছেন, কিন্তু কাজ করছেন না। এই ধরনের কাজে যারাই জড়িত থাকবেন, সেই ওয়ার্ডের সুপারভাইজারদের আমি দায়ী করব। সবাইকে কাজে লাগিয়ে শহরকে পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
আমরা জানি, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের অনেকগুলো কাজের মধ্যে মূল দায়িত্ব তিনটি। রাস্তাঘাট নির্মাণ ও মেরামত, পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম পরিচালনা, শহর আলোকায়ন করা। কিন্তু সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব আয়ে পরিচ্ছন্ন কার্যক্রমসহ অন্যান্য অপরিহার্য সেবা শতভাগ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়ে উঠছে না। কয়েক বছর আগে বিলবোর্ড অপসারণ করে নগরীর সৌন্দর্য রক্ষায় যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল, তার জন্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে অভিনন্দন জানিয়েছিল নগরবাসী। কিন্তু এখন নগরী আবার পরিণত হয়েছে জঞ্জালে। এর বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে অ্যাকশনে নামতে হবে। যে সমস্ত প্রতিষ্ঠান অবৈধ সাইনবোর্ড ব্যবহার করে রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে এবং নগরীর সৌন্দর্যহানি করছে, অনতিবিলম্বে সেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে। সাইনবোর্ড– বিলবোর্ড সরিয়ে ফেলতে হবে। জনস্বার্থে একটা বিজ্ঞপ্তি জারি করতে হবে এভাবে, সাত দিনের মধ্যে অবৈধ সাইনবোর্ড স্ব–উদ্যোগে সরিয়ে ফেলুন, নইলে সিটি কর্পোরেশন তা উচ্ছেদ করবে এবং জরিমানা প্রদান করবে।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের এখন চলছে ক্রান্তিকাল। সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত প্রচুর পরিশ্রম করছেন। কিন্তু নগরীর অপরিচ্ছন্ন রূপ তাঁকেও ব্যথিত করছে। নগরের অপরিচ্ছন্ন চিত্র দেখলে কান্না আসে। দিনের পর দিন ডাস্টবিন থেকে ময়লা নিয়ে না যাওয়া একটা নিয়ম হয়ে পড়েছে। যেখানে–সেখানে, উন্মুক্ত স্থানে ময়লা–আবর্জনা, কফ, থুতু ও মলত্যাগে পরিবেশ দূষিত হয়ে স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি করছে। নোংরা ও দূষণযুক্ত পরিবেশ রোগব্যাধির প্রধান কারণ। এ অবস্থায় নগরীর সৌন্দর্য রক্ষায় সিটি মেয়রকেই ত্বরিত পদক্ষেপ নিতে হবে। নগরীর অপরিচ্ছন্ন রূপ কারো প্রত্যাশিত নয়।







