ইসলামের শিক্ষা হচ্ছে, ছোটরা বড়দের আগে সালাম দেবে। নবীজি (সা.) বয়োজ্যেষ্ঠদের প্রতি সম্মান প্রকাশে ব্যবহারিক নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘যুবকের উচিত বয়োজ্যেষ্ঠকে সালাম দেওয়া, পথচারীর উচিত বসে থাকা ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া, এবং ছোট দলের উচিত বড় দলকে সালাম দেওয়া। তিনি বলেছেন,‘যদি কোনো যুবক বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিকে তাঁর বয়সের কারণে সম্মান করে, তবে আল্লাহ তার বৃদ্ধ বয়সে তাকে সম্মান করার জন্য কাউকে নিযুক্ত করবেন।’
বয়োজ্যেষ্ঠদের সম্মান করতে রাসুল (দঃ) যুবসমাজকে উৎসাহিত করেছেন, যাতে প্রজন্মের মধ্যে দূরত্ব কমে এবং ভালোবাসা ও বোঝাপড়ার পরিবেশ সৃষ্টি করে। হাদিসে ‘বয়োজ্যেষ্ঠ’ শব্দটি সাধারণভাবে ব্যবহার করা হয়েছে, যা জাতি বা ধর্মের সীমাবদ্ধতা ছাড়াই সব বয়োজ্যেষ্ঠের প্রতি সম্মান প্রকাশ করে।
হাদিস ও ফিকহের কিতাবগুলোতে একটি মাসআলা আছে, যদি নামাজের কাতারে কোনো মুরব্বি, বয়স্ক ব্যক্তি এবং দুর্বল শ্রেণির মানুষ থাকেন তাহলে ইমাম সাহেব কেরাত সংক্ষিপ্ত করবেন। কারণ লম্বা কেরাত পড়লে তিনি কষ্ট পাবেন। একবার মুআজ (রা.) কেরাত লম্বা করায় তিরস্কার করেন।
ইসলামের শিক্ষা হলো, সন্তানের অসহায়ত্বের সময় যেভাবে মা–বাবা তাকে স্নেহভরে সযত্নে প্রতিপালন করেন। মা–বাবার অসহায়ত্ব তথা বৃদ্ধাবস্থায় তাদেরও সেভাবে লালন–পালন করা সন্তানের অবশ্য কর্তব্য। এ দায়িত্ব পালনে অবহেলা করা অমানবিক ও ইসলাম বিবর্জিত কাজ। এমন কাজ যারা করে তাদের কোনো ক্ষমা নেই। এ অবহেলার জন্য সন্তানদের পরকালে কঠিন শাস্তি জাহান্নামের আগুনে জ্বলতে হবে আর দুনিয়াতেও তাদের বার্ধক্য অবস্থায় আরও চরম পরিণতি ভোগ করতে হবে। ইসলামের এ নির্দেশনা মেনে চললে প্রবীণ নিবাসে বেদনাদায়কভাবে প্রবীণদের জীবনযাপন করার প্রয়োজন হতো না। একজন সুস্থ বিবেকসম্পন্ন ও মানবিক গুণাবলিসম্পন্ন মানুষ তার বৃদ্ধা মা–বাবাকে এবং তার আত্মীয়স্বজনকে অবহেলা ও উপেক্ষা করতে পারে না। প্রত্যেক মুসলমানের উচিত নিজেদের ধর্মীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রবীণদের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা এবং এর মাধ্যমে নিজেদের দুনিয়া ও আখেরাতের মুক্তির ব্যবস্থা করা। আল্লাহতায়ালা সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে প্রবীণদের প্রতি যত্ন নেওয়ার তওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক : প্রাবন্ধিক, সংগঠক।












