সরকারি চাকরির কোটা সংস্কার আন্দোলনের মাঝামাঝি থেকে সরকার পতন পর্যন্ত বিভিন্ন সময় হামলার ঘটনায় জড়িত ৪০৩ জনকে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতও রয়েছেন।
গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর দপ্তরের এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে হামলায় জড়িত শিক্ষার্থীদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেন স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না–তা লিখিতভাবে সাত কার্য দিবসের মধ্যে জানাতে বলা হয়েছে। অন্যথায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে একতরফা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। খবর বিডিনিউজের।
সরকার পতনের পর ২০২৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সহিংসতার ঘটনা অনুসন্ধানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ‘সত্যানুসন্ধান কমিটি’ করে। এর সাড়ে পাঁচ মাস পর এ বছর ১৩ মার্চ অনুসন্ধান প্রতিবেদন উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খানের হাতে তুলে দেন কমিটির আহ্বায়ক, আইন অনুষদের সহযোগী অধ্যাপক মাহফুজুল হক সুপণ। সেই প্রতিবেদনে বল হয়, হামলাকারীদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২৮ শিক্ষার্থীকে শনাক্ত করা গেছে। আর অন্তত ৭০ জন শিক্ষক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে হামলাকে উসকে দিয়েছেন।
মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমদ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ২০২৪ সালের ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সংঘটিত বেআইনি ও সহিংস ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে প্রশাসনিক ব্যবস্থার আওতায় নিয়ে আসার জন্য তথ্যানুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়। সেখানে কমিটি ১২৮ জন শিক্ষার্থীকে অভিযুক্ত করে রিপোর্ট প্রদান করেন। এবং গত ১৭ মার্চ সিন্ডিকেট সভায় বিস্তারিত আলোচনা শেষে ওই শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়। তবে প্রতিবেদনে উসকে দেওয়ার অভিযোগ তোলা শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পরবর্তীতে অধিকতর তদন্তের জন্য সিন্ডিকেট ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করার বিষয়টি তুলে ধরে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, তদন্ত কমিটির দ্বিতীয় সভায় ১২৮ জনসহ মোট ৪০৩ জন শিক্ষার্থীর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে গত ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পিটিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। সেদিন সাংবাদিকসহ শতাধিক আহত হন। ওই ঘটনার পর থেকে সারাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন তীব্রতা পায়। এরপর দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘাত, সহিংসতার ঘটনা ঘটতে থাকে। ব্যাপক প্রাণহানির মধ্য দিয়ে চলা আন্দোলন পর্যায়ক্রমে রূপ নেয় সরকার পতনের এক দফার আন্দোলনে। একপর্যায়ে ছাত্র–জনতার তুমুল গণআন্দোলনে গত ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে যান শেখ হাসিনা। সে বছর ২৩ অক্টোবরে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে অন্তর্বর্তী সরকার।











