নগরীর গোঁয়াছি বাগান এলাকায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিট প্রকল্পের কাজ অবশেষে গতি পাচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ না পাওয়ার কারণে ৮ মাস ধরে প্রকল্পের কাজ চলেছে ঢিমেতালে। প্রকল্প কাজের প্রয়োজনীয় নির্মাণ সামগ্রী আসবে চীন থেকে। এসব সামগ্রীর যাবতীয় ভ্যাট–ট্যাক্স পরিশোধ করার কথা সরকারের। তবে অর্থ ছাড় না হওয়ায় এসব নির্মাণ সামগ্রী আনতে পারেনি এতদিন। গত সপ্তাহে মিলেছে সেই কাঙ্ক্ষিত অর্থ বরাদ্দ। ফলে এখন জটিলতা কেটে গেছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় ৮ মাসে ২০ শতাংশ কাজের অগ্রগতিও হয়নি। এতে প্রকল্পের মেয়াদের সময়ক্ষেপণ হয়েছে। তবে এখন সেই বাধা কেটে যাওয়ায় চীনা প্রকৌশলীরা দ্রুততার সাথে কাজ এগিয়ে নিতে পারবেন বলে আমরা আশাবাদী। গতকাল বিকালে সরেজমিনে প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতাল ভবনের মূল ভিত্তির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কয়েকজন শ্রমিক পাহাড়ে পাইলিংয়ের কাজ করছেন। ভারী বৃষ্টিতে যাতে মূল ভবনের পার্শ্ববর্তী পাহাড় ধসে না পড়ে সে কারণে নকশা অনুযায়ী সয়েল নেইলিং (খাড়া পাহাড় কেটে ঢালু করা) করে চীনা প্রযুক্তি ব্যবহার করে কলাম বসানো হবে। পরবর্তীতে সেখানে উন্নতমানের ঘাস লাগানো হবে; যাতে বৃষ্টি হলে তা গড়িয়ে ড্রেনেজ ব্যবস্থার মাধ্যমে নিষ্কাশন করা যায়। পরে পাহাড় রক্ষার জন্য রিটেইনিং দেয়াল নির্মাণ করা হবে।
চমেক হাসপাতাল বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান ও বার্ন ইউনিট প্রকল্পের পরিচালক ডা. রফিক উদ্দিন আহমেদ আজাদীকে বলেন, অর্থ বরাদ্দ সংক্রান্ত জটিলতার কারণে প্রকল্পের কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি হয়নি। তবে এখন সেই জটিলতা কেটে যাওয়ায় আশা করি এই শুষ্ক মৌসুমে কাজ দ্রুততার সাথে এগিয়ে যাবে।
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন বলেন, অর্থ বরাদ্দ পাওয়ায় চীনের নির্মাণ সামগ্রী এই মাস থেকে আসা শুরু হবে। আগামী ৩–৪ মাসের মধ্যে মূল ভবন দৃশ্যমান হবে আশা করছি।
জানা গেছে, বর্তমানে চমেক হাসপাতালের ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে অগ্নিদগ্ধ রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তবে যন্ত্রপাতির সংকট ও নানা সমস্যার কারণে গুরুতর আগুনে পোড়া রোগীদের এখানে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হয় না। ফলে এ রোগীদের ঢাকার বিশেষায়িত ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারিতে ছুটতে হয়। সারা দেশের রোগীর চাপ থাকায় অনেক সময় চিকিৎসকদের চিকিৎসা দিতেও হিমশিম খেতে হয়।
উল্লেখ্য, চমেক হাসপাতালের গোঁয়াছি বাগান এলাকায় ১৫০ বেডের বিশেষায়িত ‘বাংলাদেশ–চায়না ফ্রেন্ডশিপ বার্ন ইউনিট চট্টগ্রাম’ প্রকল্পের চূড়ান্ত নকশা অনুমোদন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল গত বছরের ১২ জুন। এর আগে গত বছরের ৯ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় বার্ন ইউনিট প্রকল্পের অনুমোদন দেয় তৎকালীন সরকার। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ২৮৪ কোটি ৭৬ লাখ ৫১ হাজার ৫৫৫ টাকা। এর মধ্যে চীন দেবে ১৭৯ কোটি ৮৩ লাখ ১৯ হাজার ৬০০ টাকা এবং সরকার দেবে ১০৪ কোটি ৯৩ লাখ ৩১ হাজার ৯৫৫ টাকা। এছাড়া চীন থেকে আমদানিতে ট্যাঙ ভ্যাট বাবদ ৭০ কোটি টাকাসহ সংযোগ রাস্তা, সীমানা প্রাচীর, বৈদ্যুতিক সংযোগ, দুটি অ্যাম্বুলেন্স ও কেমিক্যাল রিঅ্যাজেন্ট আনার খরচ ধরা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ছয় তলা ভবন, জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ, ল্যাবরেটরি, অপারেশন থিয়েটার, ১০টি আইসিইউ বেড, ১০টি পুরুষ এইচডিইউ বেড, ১০টি মহিলা এইচডিইউ বেড ও ৫টি শিশু এইচডিইউ রয়েছে। এছাড়া ১১৫ বেডের ওয়ার্ডে মহিলাদের জন্য বেড রাখা হয়েছে ৪৫টি। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৬ সালের জুনে।












