নভেম্বরেও ডেঙ্গুর প্রকোপ, কমেছে চিকুনগুনিয়া

জাহেদুল কবির | মঙ্গলবার , ৪ নভেম্বর, ২০২৫ at ৮:১৩ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামে নভেম্বরেও কমছে না ডেঙ্গুর প্রকোপ। তবে সুখবর হচ্ছে গত কয়েক মাস আগে চিকুনগুনিয়ার অব্যাহত দাপট থাকলেও সেটি এখন নেই বললেই চলে। আক্রান্তের হার বেশি থাকলেও চিকুনগুনিয়ায় মৃত্যু ঝুুঁকি ছিল না। কিন্তু ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম, আক্রান্ত বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে মৃত্যুও। চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ৩ হাজার ৬৩৫ জন। এরমধ্যে গত দুই মাসে আক্রান্ত হয়েছে ১ হাজার ৯২৫ জন। এছাড়া মোট মৃত্যু হয়েছে ২০ জনের। এরমধ্যে দুই মাসে মারা গেছেন ৫ জন। এছাড়া চলতি নভেম্বরের প্রথম তিনদিনে মোট আক্রান্ত হয়েছে ১৩০ জন, তবে কারো মৃত্যু হয়নি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাধারণত নভেম্বর মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের হার কমতে থাকে। তবে এ বছর ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে। গত দুই মাসের ধারাবাহিকতায় এখনো বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী। ডেঙ্গু এডিস মশাবাহিত রোগ। এডিস মশার বংশবিস্তার থামানো গেলে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এমনিতেই কমে যাবে। বিশেষ করে আমাদের চারপাশে যেসব জায়গায় এডিস মশা জন্মায় সেসব জায়গায় যাতে এডিস মশা জন্মাতে না পারে, সে ব্যাপারে সবাইকে সচেতন হতে হবে। পরিষ্কার ও বদ্ধ পানি এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র। তাই বসতবাড়ির আশপাশে ডাবের খোসা, ফুলের টব, ছাদবাগান ও ফ্রিজের নিচের ট্রেতে তিন দিনের বেশি পানি যাতে জমে না থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বাসাবাড়ি, ছাদ আঙিনা নিজ নিজ উদ্যোগে পরিষ্কার রাখতে হবে। এটি সবার দায়িত্ব।

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, গতকাল সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৪৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ১১ জন, ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি হাসপাতালে ৩ জন, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ৬ জন, চট্টগ্রাম সিএমএইচ হাসপাতালে ১২ জন এবং বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১১ জন। চলতি বছর মোট আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ১ হাজার ৯০৬ জন পুরুষ, ১ হাজার ৯৬ জন নারী এবং ৬৩৩ জন শিশু রয়েছে। এছাড়া মোট মৃত্যুর হিসেবে পুরুষ ১১ জন, নারী ৬ জন এবং ৩ জন শিশু রয়েছে। অন্যদিকে গতকাল চিকুনগুনিয়ায় একজন আক্রান্ত হওয়ার তথ্য জানিয়েছে সিভিল সার্জন কার্যালয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জ্বর হলে অবহেলা করা যাবে না। দেরিতে ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়া এবং রোগীকে দেরিতে হাসপাতালে আনার কারণে অনেক রোগীর মৃত্যু হচ্ছে। জ্বরের প্রথম তিনদিনের মধ্যে ডেঙ্গুর (এনএসওয়ান) পরীক্ষা করাতে হবে। এরপর ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে আতঙ্কিত না হয়ে বাসায় পূর্ণ বিশ্রামে থেকে তরল জাতীয় খাবার (জুস, ডাবের পানি, স্যালাইন, স্যুপ) বেশি বেশি খাওয়াতে হবে। দিনের বেলায়ও মশারি টানিয়ে ঘুমাতে হবে। জ্বরের জন্য শুধু সাধারণ প্যারাসিটামল খাবে। কোনো ধরনের এন্টিবায়েটিক ও ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন নাই। তবে জ্বর কমার পরের সময়টা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। এ সময়টাতে অতিরিক্ত দুর্বলতা, বমি, পেট ব্যথা, পাতলা পায়খানা, রক্তচাপ কমে যাওয়া, শরীরের বিভিন্ন জায়গায় লালচে দাগ বা র‌্যাশ, প্রস্রাব পায়খানায় বা অন্য কোনোভাবে রক্ত দেখা গেলে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে। তবে অনেকে রক্তের কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট (সিবিসি) পরীক্ষায় প্লাটিলেট কমে গেলে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। প্লাটিলেট কমলে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। প্লাটিলেট কমলে রক্তক্ষরণ হবে এটি ঠিক নয়। এছাড়া ডেঙ্গুর চিকিৎসায় প্লাটিলেট কমে গেলে তাকে প্লাটিলেট দিতে হবে এটিও গাইডলাইনে নেই। চিকিৎসাটা সম্পূর্ণ নির্ভর করবে রোগীর শারীরিক অবস্থার ওপর। অনেক রোগীর ক্ষেত্রে প্লাটিলেট ১০ হাজারের নিচে নামলেও রক্তক্ষরণ হয় না। আবার অনেকের প্লাটিলেট কাউন্ট বেশি থাকলেও রক্তক্ষরণ হয়।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. আবদুর রব বলেন, বর্তমানে চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত কমে গেলেও ডেঙ্গু সেভাবে কমেনি। তবে সেটি অনিয়ন্ত্রিত অবস্থায় নেই। শীতের সময় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী কমে যায়। কারণ তখন বৃষ্টিপাত থাকে না। তাই মশাও বংশবৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত পরিবেশ পায় না। এই নভেম্বরে থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। তাই ডেঙ্গু রোগীও বাড়ছে।

উল্লেখ্য, গত বছর ২০২৪ সালে মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৪ হাজার ৩২৩ জন এবং মারা যান ৪৫ জন। এর আগে ২০২৩ সালে আক্রান্ত হয়েছিল ১৪ হাজার ৮৭ জন। এরমধ্যে মারা যায় ১০৭ জন। এছাড়া ২০২২ সালে মোট আক্রান্ত ৫ হাজার ৪৪৫ জনের মধ্যে মারা যান ৪১ জন এবং ২০২১ সালে আক্রান্ত হয় ২২১ জন এবং মারা যায় ৫ জন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকক্সবাজারের চার আসনের ৩টিতে বিএনপি প্রার্থীর নাম ঘোষণা
পরবর্তী নিবন্ধসরকার ও মুসল্লিদের যৌথ প্রয়াসে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ পুনঃনির্মাণে সক্ষম হব