আলকরণে শত কোটি টাকার সরকারি সম্পত্তি যেভাবে ‘আত্মসাৎ’ হলো

দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে চাঞ্চল্যকর তথ্য এলবার্ট সরকারের পাশাপাশি ঘটনায় আরো ৫ জনের নামে অভিযোগ

হাবীবুর রহমান | মঙ্গলবার , ২৮ অক্টোবর, ২০২৫ at ৭:৫৩ পূর্বাহ্ণ

একজন ইহুদির পরিচয়কে খ্রিষ্টান হিসেবে দেখানো হয়। জালজালিয়াতি করে মৃত্যু সনদ, ওয়ারিশ সনদ, এমনকি কবর সনদ (সার্টিফিকেট অফ বুরিয়াল) তৈরি করে তার ওয়ারিশ দাবি করা হয়। এরপর এসব ডকুমেন্ট আদালতে দাখিল ও প্রদর্শন করে রায়, ডিক্রি হাসিল করা হয়। তারও পরে নিয়ে নেওয়া হয় দখল। নগরীর কোতোয়ালীর জিপিও’র বিপরীতের আলকরণ রোডের মুখের দু’পাশের শত কোটি টাকার সরকারি অর্পিত সম্পত্তি এভাবেই আত্মসাৎ করেছেন এলবার্ট সরকার নামের একজন খ্রিষ্টান। তার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কলেজ রোড এলাকায়। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দীর্ঘ অনুসন্ধানেই উঠে এসেছে সরকারি সম্পত্তি আত্মসাতের চাঞ্চল্যকর এমন ঘটনা।

দুদক পরিচালিত অনুসন্ধানে এলবার্ট সরকারের পাশাপাশি ঘটনায় অভিযুক্ত আরো ৫ জনের নাম এসেছে। তারা এলবার্ট সরকারকে সরকারি সম্পত্তি আত্মসাতের ক্ষেত্রে নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন। এ ৫ জন হলেন৩২ নং আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডের সাবেক সচিব ও বর্তমান দেওয়ান বাজার ওয়ার্ডের সচিব মোহাম্মদ মনজুর আলম, পাঁচলাইশের সুগন্ধা আবাসিকের আফরোজা বুলবুল, পটিয়ার কাশীয়াইশ এলাকার রতন কুমার মল্লিক, সংশ্লিষ্ট আইনজীবী ও চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণের মো. শামসুল আলম রানা।

দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় জানিয়েছে, সরকারি সম্পত্তি আত্মসাতের অভিযোগের প্রেক্ষিতে চলতি বছরের ১৯ মার্চ থেকে কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা উক্ত বিষয়ে অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করে। সম্প্রতি উক্ত অনুসন্ধান শেষ করে দুদক কমিশন বরাবর মামলা রুজুর অনুমতি দানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশসহ অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। কমিশনের নির্দেশক্রমে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

দুদক জানায়, ইজিক্যাল নামের একটি ইহুদি পরিবার উনিশ শতকের শেষের দিকে চট্টগ্রামে ব্যবসা করতেন। পরিবারটি নগরীর কোতোয়ালী থানাধীন জিপিওর সামনে আলকরণ এলাকায় প্রায় ৬৯.৭ শতক ভূমিতে তিনটি ভিন্ন ভিন্ন প্লটে কয়েকটি ভবন নির্মাণ করে সেখানে বসবাস এবং ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। যার চিহ্ন স্বরূপ এখনো একটি ভবনের মূল ফটকে ইজিক্যাল এন্ড কোং., ইএসটিডি. ১৮৮১ লেখা দৃশ্যমান। ইজিক্যাল পরিবারের সদস্য ডেভিড ইজিক্যাল ছিলেন ইজিক্যাল এন্ড কোং মূল কর্ণধার। তার দুটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল। একটি কলকাতায়, যার নাম ডেভিডসন এন্ড কোম্পানী এবং অন্যটি চট্টগ্রামে, যার নাম ইজিক্যাল এন্ড কোম্পানী। ডেভিড ইজিক্যালের স্ত্রীর নাম ছিল রিমা ইজিক্যাল। তাদের ঘরে ছিল তিন কন্যা সন্তান যথাক্রমে রমা ইজিক্যাল, রাচেল ইজিক্যাল ও ন্যান্সি ইজিক্যাল এবং একমাত্র পুত্র হাবার্ট হিউ এলিস ইজিক্যাল। রমা ইজিক্যালের স্বামীর নাম ছিল ম্যাথিউস ভিকটর। ইজিক্যাল দম্পতির কনিষ্ঠ কন্যা ন্যান্সি নেভিনসন একজন জনপ্রিয় ব্রিটিশ অভিনেত্রী ছিলেন, যার জন্ম ১৯১৮ সালে চট্টগ্রামে এবং মৃত্যু ২০১২ সালে যুক্তরাজ্যে। ন্যান্সি যখন খুব ছোট ছিলেন, তখন ইজিক্যাল পরিবার প্রথমে কলকাতায় এবং পরবর্তীতে ১৯৩০ এর দশকে লন্ডনে চলে যান, সেখানে ১ এভিনিউ রোডে তারা বসবাস শুরু করেন। ১৯৪৬ সালের ১২ নভেম্বর ডেভিড ইজিক্যাল যুক্তরাজ্যের ১ এভিনিউ রোডে মারা যান এবং সেন্ট মেরিলেবোনে তাকে কবরস্থ করা হয়। মৃত্যুর ১ দিন পরে ডেভিড ইজিক্যালের মৃত্যু সনদ উত্তোলন করেন তার জামাতা ম্যাথিউস ভিকটর। যুক্তরাজ্যের মৃত্যু নিবন্ধন ইনডেক্স এ ডেভিড ইজিক্যালের মৃত্যু নিবন্ধিত আছে। ১৯৩৮ সালের ২০ জানুয়ারি কলকাতার আদালতে ডেভিড ইজিক্যালের পুত্র এইচ. ইজিক্যালের দায়েরকৃত এইচ. ইজিক্যাল বনাম ক্যারু এন্ড কোং মামলার রায় (অওজ ১৯৩৮ ঈঅখ ৪২৩)পর্যালোচনায় দেখা যায়, এইচ. ইজিক্যালের মতে তার পিতা ডেভিড ইজিক্যাল ১৯৩৫ সালের মার্চ মাসে শেষবারের মতো ভারতবর্ষ ত্যাগ করেন এবং আর কখনো ফিরে আসেননি। ডেভিড ইজিক্যালের দেশত্যাগ পরবর্তী সময়ে তার এস্টেট তার পরিবার তথা স্ত্রীকন্যা দ্বারা পরিচালিত হত। তারা রশিদ মূলে ভাড়া আদায় করত। পরবর্তীতে ডেভিড ইজিক্যালের পরিবারের সকল সদস্য লন্ডন চলে গেলে তার যাবতীয় সম্পত্তি সরকার অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে রেকর্ডভুক্ত করে। ডেভিড ইজিক্যালের ভাড়াটিয়া বাংলাদেশ সরকার থেকে উক্ত সম্পত্তি লিজ নিয়ে নিয়মিত ইজারা আদায় করে সেখানটার দখলদার ছিলেন এবং কিছু অংশে এখনো আছেন।

দুদক জানায়, সরকার অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণের উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করার পর ২০১৩ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এলবার্ট সরকার নামের একজন খ্রিষ্টান ব্যক্তি নিজেকে ডেভিড ইজিক্যালের ওয়ারিশ (মেয়ের ঘরের নাতি) দাবি করেন এবং ডেভিড ইজিক্যালের সম্পত্তি সরকারের অর্পিত সম্পত্তির তালিকা থেকে অবমুক্ত করে তার বরাবরে প্রত্যর্পণ করার জন্য নিযুক্ত আমমোক্তারদের মাধ্যমে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ ট্রাইব্যুনাল আদালত, চট্টগ্রামে যথাক্রমে মামলা নং২৫৮৪/২০১৩, ২৫৮৬/২০১৩, ২৫৮৭/২০১৩, ২৫৮৮/২০১৩, ২৫৮৯/২০১৩, ২৫৯০/২০১৩ ও ২৫৯১/২০১৩ দায়ের করেন। এলবার্ট সরকারের মতে, ডেভিড ইজিক্যালের স্ত্রীর নাম কেরিন ইজিক্যাল এবং একমাত্র মেয়ের নাম কনক ইজিক্যাল। এলবার্ট সরকারের পিতা গোপাল সরকারের সাথে বিয়ের পর কনক ইজিক্যালের নাম হয় কনক সরকার। সে হিসেবে তিনি ওয়ারিশ সূত্রে ডেভিড ইজিক্যালের সম্পত্তির মালিক। উল্লিখিত মামলাসমূহ সংক্রান্তে এলবার্ট সরকার ৩২নং আন্দরকিল্লা ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয় থেকে ইস্যুকৃত ডেভিড ইজিক্যালের ওয়ারিশ সনদ ও কনক ইজিক্যালের ওয়ারিশ সনদ এবং ৩৩, ৩৪ ও ৩৫ নং ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলর কার্যালয় থেকে ইস্যুকৃত কনক ইজিক্যালের ওয়ারিশ সনদ, কেরিন ইজিক্যালের মৃত্যু সনদ, কনক ইজিক্যালের মৃত্যু সনদ, এছাড়া নগরীর পাথরঘাটাস্থ ক্যাথেড্রেল অফ আওয়ার লেডি অফ দা হলি রুজারি কার্যালয় থেকে ইস্যুকৃত স্মারকবিহীন ডেভিড ইজিক্যালের সার্টিফিকেট অফ বুরিয়ালসহ অন্যান্য রেকর্ডপত্র আদালতে দাখিল ও প্রদর্শন করেন। আদালত তা সত্য ধরে নিয়ে উল্লিখিত মামলাসমূহে এলবার্ট সরকারের পক্ষে ২০১৯ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ও ৬ অক্টোবর রায়ডিক্রি প্রদান করেন। উক্ত রায়ডিক্রির বিরুদ্ধে সরকার পক্ষ অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আপীল ট্রাইব্যুনাল, চট্টগ্রামে আপীল মামলা নং১২৫/২০১৯, ১২৬/২০১৯, ১২৭/২০১৯, ১২৮/২০১৯, ১২৯/২০১৯, ১৩০/২০১৯, ১৩১/২০১৯ রুজু করেন। আদালত ২০২২ সালের ৩১ অক্টোবর ও ৬ নভেম্বর রায়ডিক্রি মূলে আপীল না মঞ্জুর করেন অর্থাৎ নিম্ন আদালতের রায়ডিক্রি বহাল রাখেন। এরই প্রেক্ষিতে নামজারি খতিয়ান নং ২৫৯১৫ সৃজন করে জেলা প্রশাসন, চট্টগ্রাম উল্লিখিত সম্পত্তি অবমুক্ত করে ও উক্ত সম্পত্তির লিজ গ্রহীতাদের উচ্ছেদ করে বাদী এলবার্ট সরকারকে চলতি বছরের ৫ মার্চ সম্পত্তির দখল বুঝিয়ে দেন।

দুদক সূত্র জানায়, ২০১৯ সালে এলবার্ট সরকার অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ ট্রাইব্যুনাল ও যুগ্ম জেলা জজ ১ম আদালত, চট্টগ্রামে আরেকটি মামলা দায়ের করেন (মামলা নং০৮/২০১৯)। উক্ত মামলা সংক্রান্তে বাদী ৩২নং আন্দকিল্লা ওয়ার্ড কাউন্সিলর কর্তৃক প্রদত্ত ডেভিড ইজিক্যালের উত্তরাধিকার সনদ, কনক ইজিক্যালের উত্তরাধিকার সনদ, কনক ইজিক্যালের মৃত্যু সনদ, কেরিন ইজিক্যালের মৃত্যু সনদ এর অনলাইন কপির মূলকপিসহ অন্যান্য রেকর্ডপত্র আদালতে দাখিল ও প্রদর্শন করেন। আদালত তা সত্য ধরে নিয়ে উক্ত মামলায় বাদী এলবার্ট সরকার এর পক্ষে ২০২৩ সালের ২৩ আগস্ট ও ৩১ আগস্ট রায়ডিক্রি প্রদান করেন। উক্ত রায়ডিক্রির বিরুদ্ধে সরকার পক্ষ অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আপীল ট্রাইব্যুনালে মামলা নং১৪৫/২০২৪ রুজু করেন যা বিচারাধীন রয়েছে। রেকর্ডপত্র পর্যালোচনান্তে দেখা যায়, এলবার্ট সরকার কর্তৃক মামলা নং২৫৮৪/২০১৩, ২৫৮৬/২০১৩, ২৫৮৭/২০১৩, ২৫৮৮/২০১৩, ২৫৮৯/২০১৩, ২৫৯০/২০১৩ ও ২৫৯১/২০১৩ সংক্রান্তে আদালতে দাখিলকৃত যাবতীয় ওয়ারিশ সনদ, মৃত্যু সনদ ও সার্টিফিকেট অফ বুরিয়াল জালজালিয়াতির মাধ্যমে সৃজিত। তৎকালীন ৩২নং আন্দরকিল্লা ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী এবং ৩৩, ৩৪ ও ৩৫নং ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলর লুৎফুন্নেছা দোভাষ (বেবী) পত্রমূলে এলবার্ট সরকারের দাখিলকৃত ওয়ারিশ ও মৃত্যু সনদসমূহ জাল এবং সনদসমূহে স্বাক্ষর তাদের নয় বলে প্রত্যয়ন দিয়েছেন। এলবার্ট সরকারের দাখিলকৃত মৃত ডেভিড ইজিক্যালের সার্টিফিকেট অফ বুরিয়ালও সঠিক নয় বলে ২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর প্রত্যয়ন দিয়েছেন চট্টগ্রামের পাথরঘাটাস্থ ক্যাথেড্রেল অফ আওয়ার লেডি অফ দা হলি রুজারি কার্যালয়ের ফাদার রিগ্যান ক্লেমেন্ট ডিকস্তা।

উল্লেখ্য, এলবার্ট সরকারের আদালতে দাখিলকৃত সনদসমূহের বিষয়ে সে সময়ে ৩২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী প্রত্যয়ন দেন যে, অনলাইন সনদসমূহ তার কার্যালয় থেকে ইস্যু করা হলেও পরবর্তীতে সরেজমিন তদন্ত করে তিনি জানতে পারেন, যে ঠিকানা ব্যবহার করে যাদের নামে মৃত্যু ও উত্তরাধিকার সনদ গ্রহণ করা হয়েছে তাদের মধ্যে কেউই উক্ত ঠিকানায় ছিলেন না। তথ্য গোপন করে মৃত্যু ও উত্তরাধিকার সনদ গ্রহণ করায় তা বাতিলের জন্য তিনি যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট অনুরোধ জানান। এরই প্রেক্ষিতে যথাযথ কর্তৃপক্ষ (অলিভিন লি.) কনক ইজিক্যালের মৃত্যু সনদ ব্যতীত বাকি সনদসমূহ বাতিল করে। অনুসন্ধানকালে আরও জানা যায়, প্রকৃতপক্ষে এলবার্ট সরকার একজন খ্রিষ্টান, যিনি ইহুদি ডেভিড ইজিক্যালের ওয়ারিশ নন। এলবার্ট সরকারের পিতার নাম মৃত গোপাল সরকার, মায়ের নাম মৃত সুপ্রীতি লতা সরকার ওরফে লক্ষী সরকার, নানীর নাম মৃত পারুল সরকার ও নানার নাম মৃত তাড়িনীমোহন সরকার। গোপাল সরকারের কবর চাঁদপুরের খ্রিষ্টান পাড়ায় এবং বাকিদের কবর ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জে। এলবার্ট সরকারের সৎমা কনক সরকার, যিনি এখনো জীবিত আছেন। এলবার্ট সরকারের আপন ভাই মাইকেল প্রদীপ সরকার এবং সৎবোন সম্পা সরকার ও রীমা সরকার। সুতরাং, এলবার্ট সরকার খ্রিষ্টান হয়েও ইহুদি ডেভিড ইজিক্যালের ওয়ারিশ দাবি করে আদালতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে মামলা করেন, ওয়ারিশ দাবির সমর্থনে কতিপয় ওয়ারিশ সনদ, মৃত্যু সনদ ও সার্টিফিকেট অফ বুরিয়াল জালজালিয়াতির মাধ্যমে সৃজন করে আদালতে দাখিল ও প্রদর্শন করে রায়ডিক্রি হাসিলক্রমে সরকারের প্রায় শতকোটি টাকা মূল্যের অর্পিত সম্পত্তি আত্মসাৎ করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।

দুদক জানায়, আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডের সাবেক সচিব মোহাম্মদ মনজুর আলম সরকারি দায়িত্বে থাকা অবস্থায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে সরকার পক্ষে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ ট্রাইব্যুনাল আপীল মামলায় এলবার্ট সরকার কর্তৃক আদালতে দাখিলকৃত মৃত ডেভিড ইজিক্যালের জাল ওয়ারিশ সনদ এবং মৃত কনক ইজিক্যালের জাল ওয়ারিশ সনদ তার কার্যালয় থেকে ইস্যুকৃত এবং জাল সনদগুলোতে থাকা স্বাক্ষরসমূহ তার কার্যালয় তথা আন্দরকিল্লা ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহর লাল হাজারীর বলে ২০২২ সালের ৫ জুন আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান করে এলবার্ট সরকারকে রায়ডিক্রি হাসিলের ক্ষেত্রে সাহায্য করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। আফরোজা বুলবুল ও রতন কুমার মল্লিক কর্তৃক এলবার্ট সরকার থেকে আমমোক্তারনামা গ্রহণ এবং উক্ত আমমোক্তারনামা মূলে এলবার্ট সরকারের পক্ষে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ ট্রাইব্যুনালে মামলা নং২৫৮৪/২০১৩, ২৫৮৬/২০১৩, ২৫৮৭/২০১৩, ২৫৮৮/২০১৩, ২৫৮৯/২০১৩, ২৫৯০/২০১৩ ও ২৫৯১/২০১৩ দায়ের করে উক্ত মামলা সমূহের রায়ডিক্রি হাসিলের ক্ষেত্রে এলবার্ট সরকারকে সহযোগিতা করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।

দুদকসূত্র আরো জানায়, এ আত্মসাৎ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট আইনজীবী ও জনৈক মো. শামসুল আলম রানা জড়িত রয়েছেন। সংশ্লিষ্ট আইনজীবী একদিকে জাল ওয়ারিশ সনদ, মৃত্যু সনদ ও সার্টিফিকেট অফ বুরিয়াল আদালতে দাখিল ও প্রদর্শন করে আদালতের রায়ডিক্রি হাসিলক্রমে এলবার্ট সরকারকে অর্পিত সম্পত্তি আত্মসাতে সহযোগিতা করেছেন। পাশাপাশি তিনি আত্মসাৎকৃত উক্ত সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণ, ক্রয়বিক্রয়, হস্তান্তরসহ যাবতীয় ক্ষমতা অপ্রত্যাহারযোগ্য পাওয়ার অব এটর্নি দলিলমূলে এলবার্ট সরকারের কাছ থেকে পরবর্তীতে গ্রহণ করেন। এতে এলবার্ট সরকারের সাথে তার প্রত্যক্ষ যোগসাজশ রয়েছে মর্মে প্রতীয়মান হয় বলেও জানায় দুদক। দুদক জানায়, আমমোক্তার রতন কুমার মল্লিক জালিয়াতি চক্রের সাথে জড়িত হন মূলত মো. শামসুল আলম রানার মাধ্যমে। মো. শামসুল আলম রানা আমমোক্তার রতন কুমার মল্লিককে এলবার্ট সরকারের কাছ থেকে পাওয়ার অব এটর্নি গ্রহণক্রমে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়েরে সাহায্য করে একদিকে এলবার্ট সরকারকে অর্পিত সম্পত্তি আত্মসাতে সহযোগিতা করেছেন।

অন্যদিকে তিনি আত্মসাৎকৃত উক্ত সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণ, ক্রয়বিক্রয়, হস্তান্তরসহ যাবতীয় ক্ষমতা অপ্রত্যাহারযোগ্য পাওয়ার অব এটর্নি দলিলমূলে এলবার্ট সরকারের কাছ থেকে পরবর্তীতে গ্রহণ করেছেন। এতে এলবার্ট সরকারের সাথে তার প্রত্যক্ষ যোগসাজশ রয়েছে মর্মে প্রতীয়মান হয়। সেই হিসেবে সংশ্লিষ্ট আইনজীবী ও মো. শামসুল আলম রানা দুজনেই এলবার্ট সরকারকে জালজালিয়াতির মাধ্যমে সরকারের অর্পিত সম্পত্তি আত্মসাতে সহযোগিতা করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম১ এর উপপরিচালক সুবেল আহমেদ দৈনিক আজাদীকে বলেন, অনুসন্ধান কার্যক্রম শেষ করে আমরা কমিশন বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করেছি। কমিশনের নির্দেশনা অনুসারে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ চূড়ান্ত, আজ সরকারকে হস্তান্তর
পরবর্তী নিবন্ধবাজারে যাওয়ার পথে নিখোঁজ, একদিন পর পুকুরে মিলল লাশ