নগরীর বিমানবন্দরমুখী যান চলাচলে গতি এনেছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। মাত্র ১৫ থেকে ২০ মিনিটে লালখান বাজার বা মুরাদপুর থেকে পৌঁছানো যায় এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজায়। কিন্তু টোল প্লাজা পার হতে ভয়ংকর অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষ করে শুক্র ও শনিবার শত শত গাড়ি দীর্ঘ সময় জটলায় আটকে থাকে টোল প্লাজা ঘিরে। এক্সপ্রেসওয়ের পতেঙ্গা প্রান্তে পাঁচমুখী গাড়ি চলাচলে এই জটলা হয়।
বিদ্যমান পরিস্থিতির উত্তরণে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) প্রায় সাড়ে ৪শ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করছে ইন্টারসেকশন। কোনো গাড়িকে যাতে জটলায় পড়ে ভুগতে না হয় সেজন্য গ্রহণ করা এই প্রকল্পের একটি অংশের শতভাগ কাজ শেষ হয়েছে। অন্যান্য অংশের কাজও সম্পন্ন হয়েছে প্রায় ৬০ শতাংশ। এই ইন্টারসেকশনের জন্য তিন কিলোমিটার নতুন সড়ক নির্মাণ, তিন কিলোমিটার সড়ক প্রশস্তকরণ, প্রায় এক কিলোমিটারের একটি ওভারপাসসহ নানা অবকাঠামো নির্মাণ করতে হচ্ছে। আগামী জুনের মধ্যে ইন্টারসেকশন নির্মাণের কাজ শেষ হলে শুধু এক্সপ্রেসওয়ে নয়, রিং রোড, টানেল, সমুদ্রসৈকত এবং ইপিডজেডমুখী গাড়িগুলো নিজ নিজ পথে সমান গতিতে চলাচল করতে পারবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
সূত্রে জানা যায়, নগরীর যান চলাচলে গতি আনতে পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত ১৫.২ কিলোমিটারের চার লেনের আউটার রিং রোড নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মাণ করা হয় লালখান বাজার থেকে সাড়ে ১৬ কিলোমিটারের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে।
রিং রোড এবং এক্সপ্রেসওয়ের পতেঙ্গা প্রান্তে রয়েছে কর্ণফুলীর তলদেশের টানেলের প্রবেশ মুখ। রিং রোড ধরে ইপিজেডের গাড়ি চলাচলের পাশাপাশি ভবিষ্যতে বে টার্মিনালের গাড়ি চলাচলও ওই এলাকায় গাড়ির চাপ অস্বাভাবিকভাবে বাড়াবে। রিং রোড, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং টানেল চালু হয়েছে। পতেঙ্গা সাগরপাড়ে বেড়াতে যাওয়া লোকজনের গাড়ির চাপও পতেঙ্গা এলাকায় রয়েছে। রয়েছে বিমানবন্দরগামী মানুষের চাপ। এতে করে এক্সপ্রেসওয়ে, টানেল ও রিং রোডের গাড়ি পতেঙ্গা এলাকায় প্রতিদিন যানজট সৃষ্টি করছে।
এক্সপ্রেসওয়ে ধরে ১৫–২০ মিনিটে লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা এলাকায় পৌঁছালেও ওখানে গিয়ে বিমানবন্দর কিংবা টানেলের মুখে পৌঁছাতে যানজট মোকাবেলা করতে হচ্ছে। বিশেষ করে শুক্র ও শনিবার এক্সপ্রেসওয়ে থেকে বিমানবন্দর, বোট ক্লাব বা পতেঙ্গা অঞ্চলে যেতে হলে বাড়তি এক–দেড় ঘণ্টা পর্যন্ত যানজটে ভুগতে হচ্ছে। অপরদিকে রিং রোডের সাথে চট্টগ্রাম ইপিজেডকে যুক্ত করতে নির্মাণ করা হয়েছে ইপিজেড কানেকশন রোড। এই রোড ধরে ইপিজেড থেকে প্রতিদিন হাজার দেড়েক গাড়ি চলাচল করে। এতে করে পতেঙ্গায় যান চলাচলের চাপ আরো বেড়ে গেছে।
এই অবস্থার অবসান ঘটাতে পতেঙ্গা এলাকায় একটি ইন্টারসেকশন নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করে সিডিএ। সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সাথে আলোচনা করে তৈরি করা হয় ইন্টারসেকশনের ডিজাইন। যাতে নতুন রাস্তা, ওভারপাস, রাস্তা প্রশস্তকরণ এবং আন্ডারপাসসহ নানা অবকাঠামো নির্মাণের ব্যয় রয়েছে। প্রকল্প ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৪০ কোটি টাকা। এই ইন্টারসেকশনে পাঁচমুখী গাড়ি সিগন্যালে না দাঁড়িয়ে স্ব স্ব পথে একই গতিতে চলাচল করতে পারবে। কোনো গাড়ি অন্য গাড়িকে ক্রস করতে হবে না। ৯শ মিটার লম্বা দুই লাইনের ওভারপাসটি নির্মাণ করা হচ্ছে বিমানবন্দরমুখী যাত্রীদের জন্য। বিমানবন্দরসহ সন্নিহিত অঞ্চলের যাত্রীরা রিং রোড কিংবা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ধরে যাতায়াত করতে পারবেন।
ইন্টারসেকশন প্রকল্পের আওতায় ইপিজেড কানেক্টিং রোড রয়েছে। ইতোমধ্যে এই সড়কের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। রাস্তাটিও যান চলাচলের জন্য চালু করা হয়েছে। প্রতিদিন শত শত গাড়ি এই রাস্তা ধরে ইপিজেডে যাতায়াত করছে। ইপিজেড কানেক্টিং রোডের নির্মাণ কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। তবে প্রকল্পের অন্যান্য কাজ ৬০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে।
সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস আজাদীকে বলেন, ইন্টারসেকশন নির্মাণের কাজটি অনেক জটিল ছিল। বিশেষ করে সবগুলো গাড়িকে ব্রেক করা ছাড়া চলাচল করতে দেয়ার মতো ডিজাইন তৈরি ছিল একটি চ্যালেঞ্জ। পাঁচমুখী গাড়িকে একইসাথে ওয়ানওয়ে রোডে চলাচলের পথ করে দেয়ার জন্য আমরা বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারকে নিয়ে মিটিং করেছি। ডিজাইন ফাইনাল করেছি। কাজও শেষ হয়ে এসেছে। আগামী জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার জন্য চেষ্টা করছি।
তিনি বলেন, ইন্টারসেকশনের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে পতেঙ্গায় বর্তমানে যে যানজট তার স্থায়ী অবসান হবে। পাশাপাশি ভবিষ্যতে বে টার্মিনাল কিংবা মীরসরাই ইকোনমিক জোনের গাড়ির চাপ সামলানোও সহজ হবে।












