একক প্রার্থী নিয়ে ঐক্যের বার্তা দেবেন তারেক রহমান

বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীর সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক আজ ডাক পেয়েছেন অর্ধশতাধিক

মোরশেদ তালুকদার | রবিবার , ২৬ অক্টোবর, ২০২৫ at ৬:১৫ পূর্বাহ্ণ

সংসদীয় আসন চট্টগ্রাম(কোতোয়ালী)। প্রচলিত আছে, এ আসন থেকে যে দলের প্রার্থী নির্বাচিত হন সে দল সরকার গঠন করে। তাই আসনটি শুধু চট্টগ্রাম নয়, জাতীয় রাজনীতির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী আছেন অন্তত ৬ জন।

শুধু সংসদীয় আসনটি নয়। আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের প্রতিটিতেই দলের একাধিক নেতাকর্মী মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন। সর্বশেষ ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি। সেবার ১৬টি সংসদীয় আসনের বিপরীতে ১২১ জন দলের পার্লামেন্টরি বোর্ডে ফরম জমা দেন। এবার এখন পর্যন্ত অর্ধশতাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশীর তথ্য পেয়েছে বিএনপির হাই কমান্ড। আবার স্থানীয় রাজনীতিতে এসব মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে আছে বিরোধ ও কোন্দল। এ অবস্থায় নির্বাচনকে সামনে রেখে কোন্দল মিটিয়ে দলের অভ্যন্তরে ঐক্য বাড়াতে চায় বিএনপি। একইসঙ্গে আগেভাগেই একক প্রার্থী বাছাই করতে চায় দলটি। এর অংশ হিসেবে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম বিভাগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গে আজ রোববার বৈঠক করবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিকেল ৪টায় রাজধানীর গুলশান অফিসে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে ভার্চুয়ালি যোগ দেবেন তিনি। এজন্য চট্টগ্রাম১৬ আসনের অর্ধশতাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এছাড়া ওসব মনোনয়ন প্রত্যাশীর জাতীয় পরিচয়পত্র, ছবি এবং যে আসন থেকে মনোনয়ন চান তার তথ্য সংগ্রহ করেছে বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর।

বিএনপির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা আজাদীকে জানিয়েছেন, আজকের বৈঠকে কোনো প্রার্থীর নাম ঘোষণা করার সম্ভাবনা নেই। অন্যান্য বিভাগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত ধারাবাহিক বৈঠকের অংশ হিসেবেই চট্টগ্রামের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গেও বৈঠকটি আয়োজন করা হচ্ছে। বৈঠকে তারেক রহমান দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যের বার্তা দেবেন। ভবিষ্যতে দল যাকে মনোনয়ন দিবে তার সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা এবং দলের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে কাজ করার জন্য কঠোর নির্দেশনা দেবেন। একইসঙ্গে মনোনয়ন প্রত্যাশী এবং দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের ভবিষতে দলে নানাভাবে মূল্যায়ন করারও আশ্বাস দেবেন তারেক রহমান। বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা আজাদীকে জানিয়েছেন, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর দল থেকে মনোনয়ন ফরম বিক্রি করা হবে। দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা এ ফরম সংগ্রহ করতে পারবেন। যারা ফরম জমা দেবেন তাদের সাক্ষাৎকার নিবে দলের পার্লামেন্টারি বোর্ড। এরপর চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা করা হবে। তবে এর আগে সম্ভাব্য প্রার্থীকে ‘সবুজ সংকেত’ দেয়া হবে। যা এ মাসের মধ্যেই দিতে চান তারেক রহমান। যাতে নির্বাচনী মাঠ গুছিয়ে কাজ শুরু করতে পারেন ওই প্রার্থী। পরবর্তীতে তফসিল ঘোষণার পর আনুষ্ঠানিকভাবে ওই প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হবে।

বিএনপির ঘনিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, হাইকমান্ডের নির্দেশে নির্বাচনকে সামনে রেখে একক প্রার্থী বাছাই এবং দলের অভ্যন্তরীণ বিরোধ মেটাতে দীর্ঘদিন ধরে সারা দেশে কাজ করছে বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। এক্ষেত্রে বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকরা বিষয়গুলো সমন্বয় করছেন। সম্প্রতি চট্টগ্রামের বিভিন্ন সংসদীয় আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গেও এমন বৈঠক হয়েছে। এর আগে গত মাসে তারেক রহমান সারা দেশের বিভাগীয় সাংগঠনিক এবং সহসাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি বৈঠক করে কোন্দল নিরসনে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা দেন।

আজকের বৈঠক প্রসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার আজাদীকে বলেন, এটা প্রিনমিনেশন মিটিং। যেসব আসনে একের অধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী আছেন তাদের সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ভার্চুয়ালি বৈঠক করবেন। এখানে কে প্রার্থী হবেন তার সিদ্ধান্ত হবে না। দলের প্রার্থী ঘোষণার ক্ষেত্রে কিছু প্রসেস আছে। দলের মনোনয়ন ফরম বিক্রি হবে, এরপর পার্লামেন্টারি বোর্ড তাদের সাক্ষাৎকার নিবেন। সবশেষে প্রার্থী ঘোষণা করা হবে। তবে এ বৈঠকে বার্তা দেয়া হবে, নিজেদের মধ্যে কোনো কোন্দল থাকা যাবে না। দল যাকে মনোনয়ন দিবে তার জন্য কাজ করতে হবে সবাইকে।

এ বিষয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল আজাদীকে বলেন, মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ডাকা হয়েছে। হয়তো আমাদের চেয়ারম্যান বার্তা দেবেন, যেটা আগেও দিয়েছেন। বার্তা হলোযেখানে একের অধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী আছেন সেখানে শেষ পর্যন্ত যাকে চূড়ান্ত করা হবে তার জন্য যেন সবাই কাজ করি। এ কথাটা চেয়ারম্যান মহোদয়ের নির্দেশে আমরা আগেও বলেছি। এখন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সরাসরি বললে সেটা আরো বেশি এফেক্টিভ হবে। তাছাড়া ভবিষ্যতে দলে মূল্যায়নের বিষয়টিও বলবেন তিনি। দলের জন্য যাদের ত্যাগ আছে তাদের নানাভাবে মূল্যায়নের সুযোগ আছে। চট্টগ্রাম থেকে কতজন মনোনয়ন প্রত্যাশীকে ডাকা হয়েছে জানতে চাইলে গত রাতে তিনি বলেন, সঠিকভাবে বলা যাবে না। অনেকে বাদ পড়েছেন, তাদের আজকেও ডাকা হচ্ছে। অর্ধশতাধিকের বেশি হবে।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম১৬ আসন ছাড়াও কক্সবাজারের ৪টি; তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের ৩টি; নোয়াখালীর ৬টি; লক্ষ্মীপুরের ৪টি এবং ফেনী জেলার ৩টি সংসদীয় আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশীদেরও ডাকা হয়েছে আজকের বৈঠকে।

এদিকে অভিযোগ আছে, আজকের বৈঠকে সব মনোনয়ন প্রত্যাশীকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য দলের হাইকমান্ডের নির্দেশনা ছিল। কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্তদের অনেকে নিজ পছন্দের বাইরের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের বাদ দিয়েছেন। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর গত রাতেও অনেককে বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়।

এদিকে আজকের বৈঠক প্রসঙ্গে নগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন আজাদীকে বলেন, বৈঠকে আমন্ত্রণ পেয়েছি। যোগ দিব। দল যদি বলে মেয়র কন্টিনিউ করতে তাহলে সেটা করব। যদি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে বলে তাহলে তাই করব। দলের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত।

এছাড়া আজকের বৈঠক আমন্ত্রণ পাওয়ার বিষয়টি আজাদীকে নিশ্চিত করেন মনোনয়ন প্রত্যাশী দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবু সুফিয়ান ও নগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর। আজকের বৈঠকে ডাক পাওয়ার কথা জানিয়েছেন নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব লায়ন হেলাল উদ্দিন।

চট্টগ্রাম১৪ আসনে (চন্দনাইশসাতকানিয়া আংশিক) মনোনয়ন প্রত্যাশী শফিকুল ইসলাম রাহী আজাদীকে বলেন, আমাকে কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে ফোন করে জানিয়েছে, গুলশান অফিসে তারেক রহমান স্যার ভার্চুয়ালি ইন্টারভিউ নিবেন। এর আগে আমার ছবি ও এনআইডি কার্ড নিয়েছিল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআজ ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে নিম্নচাপ
পরবর্তী নিবন্ধএইচএসসির সোয়া ৪ লাখ খাতা পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন