প্রায় দুই বছর আগে উদ্বোধন করা হয়েছিল রাউজানের ট্রমা সেন্টার। সেই থেকে প্রতিষ্ঠানটি পড়ে আছে পরিত্যক্ত অবস্থায়। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘ সময় ধরে পড়ে থাকা এই প্রতিষ্ঠান থেকে ইতিমধ্যে চুরি হয়েছে বেশ কয়েকটি সিলিং ফ্যান, বার বার চুরির চেষ্টা চলছে কয়েক লাখ টাকা দামের সেন্টারের আধুনিক জেনারেটরটি। জানা যায়, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অর্থায়নে এই প্রতিষ্ঠানটি নির্মাণ করা হয় রাউজান পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডে।
লক্ষ্য ছিল সড়ক পথে দুর্ঘটনায় আহত মানুষকে দ্রুত চিকিৎসা সেবা দিয়ে বাঁচিয়ে তোলা। অভিযোগ আছে এই প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা পরিকল্পনার সময় রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে প্রভাবশালীরা স্থানীয়দের কিছু জায়গা নকল কাগজপত্রে দখলে করে নিয়েছিল। পরে জবরদখল করে নেয়া জায়গা নকল কাগজপত্র তৈরি করে তারা স্বাস্থ্য বিভাগকে ওসব জায়গা হস্তান্তর করেছিল। সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখা যায়, প্রায় দুই একর জমির উপর নির্মিত ট্রমা সেন্টারের কয়েকটি ভবন নিরিবিলি পরিবেশে ঠাঁই দাঁড়িয়ে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। রাঙামাটি সড়কের সাথে প্রতিষ্ঠানটির প্রবেশমুখে তোরণটির লোহার দরজা তালাবদ্ধ। পরিদর্শনের সময় ভিতরে উঁকি মেরে দেখতে গেলে নাসিমা আকতার নামের স্থানীয় এক নারী এই প্রতিবেদকের পরিচয় পেয়ে বিকল্প পথে ভিতরে প্রবেশ করে নিজে তোরণের দরজার চাবি এনে খুলে দেন। তিনি নিজেকে ওই এলাকার বাসিন্দা বলে জানিয়ে বলেন, তার এক আত্মীয় কিছুদিন ধরে এই প্রতিষ্ঠানটির দেখাশুনা করছেন। অনেকদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকা এই প্রতিষ্ঠান থেকে কিছু সিলিং ফ্যান চুরি হয়েছে। জেনারেটর রুম থেকে বড় জেনারেটরটি চুরি করতে চোরেরদল বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেছে। এটি বের করে নিতে একাধিকবার ইলেকট্রিকের তার কেটে ফেলেছে। সবাই সজাগ থাকায় নিতে পারেনি। সুযোগ পেলে চোরচক্র এসিগুলোও খুলে নেবে।
তার সাথে কথার বলার সময় কাছে আসেন ভবনের পাশে থাকা একটি বাড়ির নারী বাসিন্দা। তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সোয়েব এ খানের স্ত্রী পরিচয় দিয়ে বলেন, ট্রমা সেন্টারের সীমানা প্রাচীরের ভিতর তাদের ১৬ শতক জায়গা রয়েছে। তার অভিযোগ ট্রমা সেন্টার নির্মাণ পরিকল্পনাকালে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক নেতা তার স্বামীকে প্রলোভনে ফেলে তাদের জায়গাটি দখল করে নিয়ে পরে বুঝিয়ে দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে। তিনি দাবি করেন তার স্বামী বৈধ কাগজপত্রে ওই জায়গা হস্তান্তর করেননি। ওই এলাকার আবুল ফয়েজ তালুকদার নামের অপর এক বাসিন্দা বলেন, ট্রমা সেন্টারের ভিতর কিছু জায়গা তাদের মালিকানায় রয়েছে। খতিয়ানে আবুল কাসেম তালুকদার গংয়ের মালিকানায় থাকা জায়গাটি জবরদখলমুক্ত করতে এখন তারা আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ট্রমা সেন্টারের চৌহদ্দীর ভিতরে ঘুরে দেখা গেছে, বিশাল এলাকা জুড়ে আছে তিনতলা প্রশাসনিক ও চিকিৎসা কেন্দ্র। বিভিন্ন কক্ষে লাগানো আছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র। পাশে রয়েছে আরো দুটি পাঁচ তলা ভবন। এসব ভবনে রয়েছে কনসালটেন্ট, মেডিকেল অফিসার ও স্ট্যাফ ডরমিটরি। পৃথক পৃথক স্থানে আছে গাড়ির গ্যারেজ, জেনারেটরের ঘর। মূল ভবনের সামনের দেয়ালে সাঁটানো শীলালিপিতে দেখা যায় ২০২৩ সালের ১৭ অক্টোবর প্রতিষ্ঠানটি উদ্বোধন করেছিলেন বর্তমান কারাবন্দি রাউজানের সাবেক সংসদ সদস্য ফজলে করিম চৌধুরী। গত এক মাস থেকে এই ট্রমা সেন্টারের দেখাশুনার দায়িত্ব পালন করছেন মোহাম্মদ বাবুল নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি। তাকে এই দায়িত্ব কে দিয়েছে জানতে চাইলে শুধু বলেন ম্যানেজারের মাধ্যমে তিনি চাকুরি পেয়েছেন। অবশ্য তিনি সেই ম্যানেজারের নাম পরিচয় জানাতে পারেননি। রাউজানের ট্রমা সেন্টার নিয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী কর্মকর্তা মনি কুমার শর্ম্মা বলেন, ট্রমা সেন্টারের একজন কেয়ারটেকার দায়িত্ব পালন করছেন। এ প্রসঙ্গে কথা বললে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা.জাহাঙ্গীর আলম বলেন, রাউজানের ওই ট্রমা সেন্টারটির নিয়ন্ত্রণ এখনো ঠিকাদারের হাতে রয়েছে। সম্প্রতি তিনি এটি পরিদর্শন করেছেন বলে জানা গেছে।












