রাঙ্গুনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকট, সেবা কার্যক্রম বিঘ্ন

জগলুল হুদা, রাঙ্গুনিয়া | শনিবার , ২৫ অক্টোবর, ২০২৫ at ১০:২৩ পূর্বাহ্ণ

রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ৫ লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসা সেবার একমাত্র সরকারি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নানা সংকটের মধ্যে চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম। হাসপাতালের ৩৭ জন চিকিৎসক পদের মধ্যে রয়েছেন ২৩ জন। ১১ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের জায়গায় আছেন ৫ জন এবং চার জন চিকিৎসক অনুমোদন ছাড়াই দীর্ঘ বছর ধরে কর্মস্থলে আসেন না। এর বাইরেও ৩০ শয্যার ভবনে চলছে ৫০ শয্যার চিকিৎসা কার্যক্রম। একদিকে ভবন সংকট, অন্যদিকে নেই পর্যাপ্ত চিকিৎসক। এভাবে ধুঁকে ধুঁকে চলছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কার্যক্রম।

সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, হাসপাতালজুড়ে বাড়তি রোগীর চাপ। কেউ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকেট সংগ্রহ করছেন। কেউ শিশুর টিকার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন। দায়িত্বরত চিকিৎসকরা নির্ধারিত কক্ষে বসে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। কক্ষের বাইরেও দীর্ঘ রোগীর সারি। এভাবে হাসপাতালের ইনডোরআউটডোর সব জায়গায় রোগীদের ভিড়।

কথা হয় সরফভাটা থেকে আসা রোগী নাসিমা আক্তারের সাথে। তিনি জানান, তিনি চর্ম রোগের চিকিৎসা নিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে এসেছেন। তবে এসে দেখেন, এই রোগের জন্য পূর্বে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকলেও পদটিতে এখন কেউ নেই। তাই ফিরে যেতে হচ্ছে। শুধু নাসিমা আক্তারই নন, আরও বেশ কিছু রোগীর সাথে আলাপচারিতার সময় তারা নির্ধারিত রোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না পাওয়ার কথা জানান।

বিষয়টি জানতে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিল্পনা কর্মকর্তা ডা. জয়নাব জমিলার সাথে কথা হয়। তিনি জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে ১১ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকার কথা। কিন্তু আছে ৫ জন। তারা যথাক্রমে গাইনী, এনেস্থিসিয়া, শিশু, কার্ডিওলজি ও অর্থোপেডিক্স বিশেষজ্ঞ। তবে পদ খালি আছে ৬টি রোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের। তারা হলেন চর্ম, মেডিসিন, নাক কান গলা, চক্ষু, ফিজিক্যাল মেডিসিন ও সার্জারি। হাসপাতালে ৩৭ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও আছে ২৩ জন। আবার ৫ জনের কর্মক্ষেত্র রাঙ্গুনিয়ায় হলেও সংযুক্তিতে চিকিৎসা দেন অন্য হাসপাতালে। চিকিৎসকের মধ্যে চারজন চিকিৎসক আছেন, যারা হাসপাতাল কতৃপক্ষকে কোন কারণ জানানো ছাড়াই অনুপস্থিত দীর্ঘ বছর ধরে। তাদের মধ্যে মেডিকেল অফিসার ডা. অর্কিড বড়ুয়া হাসপাতালে যোগদানের চার মাসের মাথায় ২০১৩ সালের ৭ জানুয়ারি থেকে অনুপস্থিত। ডা. দীপিকা দে হাসপাতালে যোগদানের এক বছর পর ২০১৫ সালের ১ নভেম্বর থেকে অনুপস্থিত, ডা. আনিকা তাবাসসুম যোগদানের মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে ২০২০ সালের ১২ জানুয়ারি থেকে অনুপস্থিত। এই তিনজন নিজেদের অনুপস্থিতির বিষয়ে কোন লিখিত কিংবা মৌখিকভাবেও কতৃপক্ষকে অবহিত করেননি। সর্বশেষ এক বছর ধরে অনুপস্থিত রয়েছেন ডা. আমিনুল ইসলাম নামে আরও এক মেডিকেল অফিসার। তিনি অবশ্য চাকরী থেকে অব্যাহতি পত্র দিয়েছেন।

তাদের অনুপস্থিতির বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাদের সহকর্মী এক চিকিৎসক জানান, তারা চাকরী এটা বাদ দিয়ে বাইরের দেশে চলে গেছেন। যাওয়ার পূর্বে হাসপাতাল কতৃপক্ষকে জানানোর প্রয়োজনও মনে করেননি। তাদের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন মহলকে লিখিতভাবে জানালেও এই পদগুলোতে নতুন কাউকে পদায়ন করা হয়নি এই দীর্ঘ বছরেও। ফলে বছরের পর বছর এভাবেই এই পদগুলো শূন্য পড়ে রয়েছে। ফলে বিঘ্নিত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। চিকিৎসক সংকটের কারণে একজন এসিস্ট্যান্ট সার্জনকে ইনডোর, ইমার্জেন্সি ও আউটডোরে দায়িত্ব পালন করতে হয়।

সূত্রে জানা যায়, ১৯৬৫ সালে ৩১ শয্যা নিয়ে প্রতিষ্ঠা লাভ করে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এরপর ২০০৬ সালে নতুন আলাদা ভবন হলে তা ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। কিন্তু জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ গত ২০২২ সনে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৩১ শয্যার মূল ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। এই জীর্ণ ভবনটি ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণ পরিকল্পনা করা হলেও এতো বছরেও তা হয়ে ওঠেনি।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৬০০ জন রোগী আউটডোরে চিকিৎসা নিতে আসেন। এক চেম্বারে বসেন একাধিক ডাক্তার। প্রতিদিন ৪০ থেকে ৭০ জন রোগী আসে ভর্তীর জন্য। এতে ভিড় জমে যায়। হাসপাতালে রয়েছে চিকিৎসক সংকট। রাতে বিদ্যুৎ চলে গেলে অন্ধকারে মোম ও টর্চের আলোয় চলে চিকিৎসা সেবা। কারণ একমাত্র জেনেরেটরটিও দীর্ঘদিন ধরে বিকল পড়ে রয়েছে।

তবে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জয়নাব জমিলার দাবি করেন, নানা সংকটের মাঝেও ডাক্তার এবং কর্মচারীরা আন্তরিকভাবে চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এসব সংকট দূর করতে জেলার সভায় এবং ঊর্ধ্বতন মহলে নিয়মিত যোগাযোগ করা হচ্ছে। প্রতি মাসেই চিকিৎসকদের তথ্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। অননুমোদিত অনুপস্থিত চার চিকিৎসকের পদগুলো খালি না হওয়া পর্যন্ত নতুন করে পদায়ন করা হচ্ছে না। ফলে নতুন করে চিকিৎসক পেতে সময় লাগবে। সেবাদান তো ব্যাহত হচ্ছে। তবে অন্য চিকিৎসকরা সেই ঘাটতি পূরণে কাজ করছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধখাগড়াছড়িতে ত্রিপুরা কিশোরীকে ধর্ষণ : গ্রেপ্তার ৪ আসামির জবানবন্দী
পরবর্তী নিবন্ধপাটওয়ারীর পদত্যাগের খবর, এনসিপির অস্বীকার