আজ ২২ অক্টোবর, জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস। নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হবে আজ। প্রায় তিনদশক আগে এই দিনে বান্দরবানে শুটিংয়ে থাকা স্বামী ইলিয়াস কাঞ্চনের কাছে যাওয়ার পথে চট্টগ্রামের অদূরে চন্দনাইশে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন জাহানারা কাঞ্চন। সেই থেকে নিরাপদ সড়কের জন্য আন্দোলন করে আসছেন চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। ‘পথ যেন হয় শান্তির, মৃত্যুর নয়’ এই স্লোগান নিয়ে গড়ে তোলেন সামাজিক সংগঠন–নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)। নিসচার পক্ষ থেকে প্রতিবছর ২২ অক্টোবরকে নিরাপদ সড়ক দিবস হিসেবে পালনের দাবি জানানো হয়। ২০১৭ সালে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ২২ অক্টোবরকে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও অনুমোদন দেওয়া হয়। সেই থেকে প্রতিবছর দিবসটি উপলক্ষে সরকারি কর্মসূচির পাশাপাশি নিসচাসহ বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করে থাকে।
গবেষণায় দেখা গেছে, ৯০ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী যানবাহনের অতিরিক্ত গতি এবং চালকের বেপরোয়া মনোভাব। মহাসড়কে যান চলাচলের সর্বোচ্চ গতি বেঁধে দিয়ে এবং গতি পরিমাপক যন্ত্র ব্যবহার করে চালকদের ওই নির্দিষ্ট গতি মেনে চলতে বাধ্য করা হলে দুর্ঘটনা অনেক কমে আসবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তাছাড়া চালকের দক্ষতার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে। মহাসড়ক নির্মাণ ও সংস্কারের কাজ করতে হবে সঠিক পরিকল্পনা অনুযায়ী।
সড়ক দুর্ঘটনার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে ইতোপূর্বে নানা ধরনের পরামর্শ ও সুপারিশ করা হয়। কিন্তু কেউ তাতে কর্ণপাত করেন বলে মনে হয় না। কর্তৃপক্ষও যেন নির্বিকার। ফলে একের পর এক ঘটে চলেছে দুর্ঘটনা। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ২০১৯ সালে একটি আইন কার্যকর করা হলেও এর যথাযথ বাস্তবায়ন আজও নিশ্চিত করা হয়নি। ফলে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিরা পার পেয়ে যাচ্ছেন সহজেই। দেশে সড়ক দুর্ঘটনা উদ্বেগজনক মাত্রায় বৃদ্ধি পাওয়ায় এ আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মতে, সড়ক দুর্ঘটনার কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে জাতীয় মহাসড়কে রোড সাইন বা রোড মার্কিং, সড়কবাতি না থাকা। অতি বৃষ্টিতে সড়কে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় যানবাহন চলাচলে ঝুঁকি বেড়েছে। জাতীয়, আঞ্চলিক ও ফিডার রোডে টার্নিং চিহ্ন না থাকার ফলে নতুন চালকরা এসব সড়কে দুর্ঘটনায় পড়েছেন। উল্টোপথে চলাচল, অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, অতিরিক্ত যাত্রী বহন, বেপরোয়া যানবাহন চালানো এবং অতিরিক্ত সময় ধরে চালকের আসনে একজন থাকায় দুর্ঘটনার সংখ্যা কমছে না। ধীর ও দ্রুতগতির বাহনের জন্য পৃথক লেনের ব্যবস্থা করতে সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।
বিশ্বব্যাংকের পরিসংখ্যান মতে ১০,০০০ যানবাহনের মধ্যে ৮৫.৬ শতাংশ মারাত্মক ভাবে সড়ক দুর্ঘটনায় দৃশ্যমান। সুতরাং বাংলাদেশের সড়ক সমূহের অবস্থা ভীষণ জীবন বিধ্বংসী বললেও অত্যুক্তি হবে না। রাস্তা বা সড়কগুলোতে যানবাহনের অনিয়ন্ত্রিত উপচে পড়া ভিড় এবং চালকের বেপরোয়া যানবাহন চালানো সড়ক দুর্ঘটনার মূল কারণ। অধিকন্তু পথচারী এবং পশুদের রাস্তা বা সড়ক দখল করে চলাচলও সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। সড়ক নিরাপত্তা একটি সমন্বিত দায়িত্ব। নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যাপারে প্রত্যেক নাগরিককে স্ব স্ব অবস্থান থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। সড়ক অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনায় সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহকে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে নজরদারি বাড়াতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, দুর্ঘটনা রোধে চালকদের ওভারটেকিং করার মানসিকতাও পরিহার করতে হবে। তাছাড়া দেশের সড়কব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়ন প্রয়োজন। অপ্রয়োজনীয় রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ করতে হবে। শুধু চালকদের দক্ষতা বিচার করে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়ার বিষয়টিও নিশ্চিত করা জরুরি। এক্ষেত্রে যেন কোনো ধরনের অনিয়ম বা দুর্নীতি না ঘটে, সে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের থেকে নিশ্চিত করা আবশ্যক। সড়ক দুর্ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের রাজনৈতিক পরিচয় বিবেচনা না করে কঠোর জবাবদিহিতার আওতায় আনা এবং নিরপেক্ষভাবে বিচারের মাধ্যমে শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি। সড়কে শৃঙ্খলার দায়িত্ব পালনে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা দূর করতে হবে।







