সুপার ওভারের রোমাঞ্চে জিতে সমতায় উইন্ডিজ

বাংলাদেশের প্রথম ‘টাই’

ক্রীড়া প্রতিবেদক | বুধবার , ২২ অক্টোবর, ২০২৫ at ৮:২৯ পূর্বাহ্ণ

নাহ, এক ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ জেতা হলো না বাংলাদেশের। সিরিজে ফিরল ওয়েস্ট ইন্ডিজ, আর অপেক্ষায় থাকতে হলো বাংলাদেশকে। শেষ ম্যাচেই হবে সিরিজ জয়ের ফায়সালা। তবে তার আগে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচেই হয়ে গেল সব নাটক। সুপার ওভারের নাটক শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচটি জিতে নিল। তিন সংস্করণ মিলিয়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথমবার ‘টাই’ অভিজ্ঞতা হলো বাংলাদেশের। শেষ পর্যন্ত সেটি রূপ নিল সুপার ওভারে হারের বিষাদে।

১১ রানের লক্ষ্য টপকাতে পারেনি বাংলাদেশ। থেমে যায় ৯ রানে। আর তাতেই জয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের। তার আগে বাংলাদেশের করা ২১৩ রান টপকাতে গিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজও থেমেছিল ২১৩ রানে। শেষ পর্যন্ত সব নাটক শেষে জয়টা শাই হোপের দলের। স্নায়ুর লড়াইয়ে হেরে গেল বাংলাদেশ।

এমনিতেই মিরপুরের উইকেট নিয়ে কথা যেন শেষ নেই। তবে সে মিরপুরের উইকেটে কীভাবে ব্যাট করতে হয় সেটা যেন দেখিয়ে দিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক শাই হোপ। নিজেদের মাঠে এবং পরিচিত উইকেটে বাংলাদেশের ব্যাটাররা যেখানে ব্যর্থ হলেন সেখানে ক্যারিবীয় অধিনায়ক যেন মাটি কামড়ে ব্যাটিং করলেন। আর তাল ফলও প্রায় পেতে যাচ্ছিল তার দল। হোপের দুর্দান্ত হাফ সেঞ্চুরির সুবাধে দলকে জিতিয়েই দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ওভারে জেতা হলো না। যদিও বাংলাদেশের রিশাদ হোসেনও মিরপুরের উইকেটকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন তার চার আর ছক্কার ফুলঝুড়িতে। কিন্তু শাই হোপ তার দলকে টেনেছিলেন একেবারে দায়িত্বশীলতার সাথে। টস জিতে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ শুরুটা ভাল করতে পারেনি এ ম্যাচেও। ৬ রান করে ফিরেন ওপেনার সাঈফ হাসান। এরপর সৌম্য সরকার কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। কিন্তু অপর প্রান্তে ব্যর্থ তাওহিদ হৃদয়। ১৯ বলে ১২ রান করে ফিরেছেন হৃদয়। নাজমুল হোসেন শান্ত ব্যর্থ হলেন এ ম্যাচেও। কারো ব্যাট থেকে বড় ইনিসং আসছিল না। তবে একপ্রান্ত আগলে রেখে লড়াই করা সৌম্য পারলেন না নিজের হাফ সেঞ্চুরিটা তুলে নিতে। ৮৯ বলে ৪৫ রান করে ফিরেন সৌম্য। নাজমুল হোসেন শান্ত ফিরেন ১৫ রান করে। আর তরুণ মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন পারেননি ১৭ রানের বেশি করতে। অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ ও নাসুম আহমেদ জুটি গড়ার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হয়। নাসুম ২৬ বলে ১৪ রানের ছোট ইনিংস খেলে দলকে কিছুটা এগিয়ে নিলেও উইকেট হারানোর ধারা থামাতে পারেননি। তার বিদায়ের পর মিরাজ জুটি গড়েন নুরুল হাসান সোহানের সাথে। দুজন রানের গতি বাড়ানোর চেষ্টা চালান। তবে উইন্ডিজ স্পিন তোপে সিঙ্গেলস ছাড়া তেমন রান যোগ করতে পারছিলেন না। সোহান ২৩ বলে ২৩ রান করে বিদায় নিলে ভাঙে ৩৫ রানের জুটি। সোহান আউট হওয়ার পর রিশাদ ব্যাট হাতে ঝড় তোলেন। মাত্র ১৪ বলে অপরাজিত ৩৯ রান করেন তিনি। মেরেছেন ৩টি চার এবং ৩টি ছক্কা। তাকে সঙ্গ দেওয়া মিরাজ অপরাজিত থাকেন ৩২ রানে। ৫০ ওভার শেষে বাংলাদেশ ৭ উইকেট হারিয়ে ২১৩ রান সংগ্রহ করে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে সবচেয়ে সফল বোলার ছিলেন আকিল হোসেইন, আথানেজ ও গুডাকেশ। আকিল হোসেইন নিয়েছেন ২টি উইকেট। আথানেজও পেয়েছেন ২ উইকেট। গুডাকেশের ঝুলিতে ৩ উইকেট। যদিও তিনি দেন সবচেয়ে বেশি রান।

২১৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রথম ওভারেই ব্রেন্ডন কিংকে হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে আথানেজ ও কার্টি মিলে যোগ করেন ৫১ রান। ২৮ রান করা আথানেজকে ফিরিয়ে এজুটি ভাঙেন রিশাদ। তৃতীয় উইকেটে আরো ৩০ রান যোগ করেন অগাস্টিন এবং কার্টিং। ৩৫ রান করা কাটিংকে নিজের দ্বিতীয় শিকার বানিয়ে ফেরান রিশাদ। ৮ রান পর অগাস্টিনকে ফেরান তানভীর। এরপর দ্রুত রাদারফোর্ড, মোটি এবং চেইজ ফিরলে ১৩৩ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ঠিক তখনই প্রতিরোধ গড়ে তোলেন শাই হোপ এবং জাস্টিন গ্রেভস। ৪৪ রানের এই জুটি ভাঙে গ্রেভস রান আউট হলে। ২৬ রান করে ফিরেন গ্রেভস। এরপর লড়াই চালিয়ে যান অধিনায়ক শাই হোপ। কিন্তু ম্যাচ যতই শেষের দিকে গড়াচ্ছিল ততই বাড়তে থাকে রোমাঞ্চ। শেষ ওভারে দরকার ছিল মাত্র ৫ রানের। সাইফ হাসানের করা প্রথম দুই বল থেকে কোন রান নিতে পারেননি আকিল। তৃতীয় বল থেকে এক রান নেন আকিল। চতুর্থ বল থেকে এক রান নেন হোপ। পঞ্চম বলে বোল্ড হয়ে ফিরেন আকিল। শেষ বলে দরকার তিন রান। স্ট্রাইকে নতুন ব্যাটার ক্যারি পিরে। ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেটি নিতে পারেননি সোহান। আর সে সুযোগে দুই রান নিয়ে ম্যাচ টাই করে ফেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আর ম্যাচ গড়ায় সুপার ওভারে। শাই হোপ অপরাজিত ছিলেন ৬৭ বলে ৫৩ রান করে। বাংলাদেশের পক্ষে ৪২ রানে ৩ উইকেট নেন রিশাদ হোসেন। ২টি করে উইকেট নেন নাসুম এবং তানভীর ইসলাম।

সুপার ওভারে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে দ্বিতীয় বলেই রাদারফোর্ডকে হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পরের চার বলে শেষ বলের চার সহ ১০ রান সংগ্রহ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্য ১১ রানের। সৌম্য সরকার এবং সাইফ হাসান নামেন ইনিংস শুরু করতে। আকিল হোসেনের করা প্রথম বলটি ওয়াইড। দ্বিতীয় বলটি ছিল নো বল। সে বল থেকে দুই রান নেন সৌম্য সরকার। ফ্রি হিট বল থেকে এক রান নেন সৌম্য। পরের বলটি ডট। পরের বল থেকে আসে এক রান। পরের বলে আউট সৌম্য। জমে উঠতে থাকে নাটক। শেষ বলে দরকার পড়ে ৩ রানের। কিন্তু সাইফ নিতে পারে মাত্র এক রান। আর তাতেই জয় পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহ্রদে মৃত শাবক, পাড়ে অপেক্ষায় মা হাতি
পরবর্তী নিবন্ধটেক্সিতে কাভার্ডভ্যানের ধাক্কা, সবজি বিক্রেতা নিহত