একাত্তর এবং চব্বিশের বিপ্লবে যে ঐক্য সৃষ্টি হয়েছে, তাতে কিছু মানুষ ভাঙন ধরাতে চায় অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তারা এই ভাঙনের বিপক্ষে। বিভাজন নয়, ঐক্যের রাজনীতি করার দৃঢ় প্রত্যয় জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব। বর্তমান সময়টি অনেক কঠিন মন্তব্য করে তিনি বলেন, কিছু মানুষ চেষ্টা করছে আমাদের যে একাত্তর সালের যুদ্ধে আমরা যে দেশ তৈরি করেছি, যে ঐক্য সৃষ্টি করেছি, চব্বিশের বিপ্লবে যে ঐক্য সৃষ্টি করেছি, সে ঐক্যের মধ্যে ভাঙন ধরাতে চায়। বিভিন্ন রকম কথা বলে, বিভিন্ন রকম কর্ম করে ভাঙাতে চায়। খবর বিডিনিউজের।
ফখরুল বলেন, আমরা অত্যন্ত সচেতনভাবে এই ভাঙনের বিপক্ষে। আমরা বাংলাদেশের মানুষ এক, আমরা যারা এই ভূখণ্ডে বাস করি আমরা সবাই এক–হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান এবং চাকমা, মারমা, উরাং সবাই আমরা একই সঙ্গে শান্তিতে বসবাস করতে চাই। আমাদের প্রতিটি সম্প্রদায়ের ছেলেমেয়েরা যেন লেখাপড়ার সুযোগ পায়, স্বাস্থ্য সেবার সুযোগ পায়, কর্মসংস্থানের সুযোগ পায়, সেটা আমরা নিশ্চিত করতে চাই। আপনারা নিশ্চয়ই দেখেছেন যে, আমাদের চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেব ২০২২ সালে যে ৩১ দফা দিয়েছেন সেই ৩১ দফায় খুব পরিষ্কার করে উল্লেখ করা আছে।
গতকাল সোমবার বিকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের অর্ধশতাধিক সদস্য বিএনপিতে যোগদানের এক অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল কথা বলছিলেন। তিনি বলেন, যে কথাটা আমরা বলি সেটা হচ্ছে, শত ফুল ফুটবে। সেই শত ফুল থেকে একটা স্লোগান সেই বাগান থেকে বেরিয়ে আসবে, সেটাই হচ্ছে বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদ। অনেক ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে, অনেক রক্তপাত হয়েছে বাংলাদেশে, অনেক বিভাজন হয়েছে। আমরা এখন এগুলো থেকে বেরিয়ে আসতে চাই।
আওয়ামী সরকারের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, গত ১৫ বছর ফ্যাসিস্ট সরকার বাংলাদেশের অর্থনীতি, রাজনৈতিক কাঠামো সবকিছুকে ধ্বংস করে ফেলেছে। আমরা সেই ধ্বংসস্তূপ থেকে একটা নতুন বাংলাদেশ দেশ তৈরি করতে চাই, যা এই কথা আমাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ২০২৪–এর ৫ আগস্ট রাতেই একটা ছোট্ট একটা বাণীর মধ্য দিয়ে বলেছিলেন যে, আমরা এই দেশে আর প্রতিশোধ–প্রতিহিংসা চাই না, আমরা ভালোবাসার মধ্য দিয়ে মানুষকে জয় করি একটা ঐক্যের রাজনীতি সৃষ্টি করতে চাই। সেটাই হচ্ছে মূল কথা।
তিনি বলেন, আজকে অনেকে অনেক কথা বলবে, স্বার্থের কথা বলবে এবং বলছেও। আমরা রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন কথা বলছি। এখন আমাদের দর কষাকষি করছি, এখন আমাদের স্বার্থগুলো সামনে এসে গেছে। কোনটাকে মেনে নেব, কোনটাকে মেনে নেব না, তাই না? কেউ বলছি যে পিআর করতে হবে, কেউ বলছে পিআর করা যাবে না। আমরা ওই সমস্ত পথে যেতে চাই না। আমরা ১৯৭১ সালে যে বাংলাদেশ আমরা তৈরি করেছিলাম, যে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম এবং ২০২৪ সালে ৩৬ জুলাই আমরা অভ্যুত্থানে নতুন বাংলাদেশে আভির্ভূত হলাম, সেই বাংলাদেশ নির্মাণ করতে চাই।
এ সময়ে জুলাই আন্দোলন এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান বিএনপি মহাসচিব। নতুন যোগদানকারীদের অভিনন্দন জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আসুন আমরা আমাদের মধ্যে আরও বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলি। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা আমাদের ভাই, আমরা আপনাদের পাশে আছি এবং সমস্ত শক্তি নিয়ে আমরা আপনাদের পাশে থাকব।