চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (সিইপিজেড) এলাকায় কারখানার আগুন দীর্ঘ ১৭ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। ভবনটি অতি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস ও ইপিজেড কর্তৃপক্ষ দুইটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক তাজুল ইসলাম বলেন, ইপিজেড কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই। দ্রুত সবাইকে বের করে নেওয়া হয়েছে। এটা বড় পাওনা। তাই হতাহতের ঘটনা নেই। তিনি বলেন, ভবনটি বহুমুখী কাজে ব্যবহৃত হতো। চারটি ফ্লোর গুদাম ছিল। ডাক্তারদের গাউন তৈরি হতো। দাহ্য পদার্থ পুড়তে সময় লেগেছে। ভবনটি দুইদিকে খোলা। পাশের ভবন ছিল খুবই কাছে। তাই আমাদের বেগ পেতে হয়েছে। ভবনটি কোড মেনে করা হয়নি। তাই ফায়ার ফাইটাররা পৌঁছাতে পারেননি। আমাদের বড় সাফল্য, অন্য ভবনের এক চতুর্থাংশ ক্ষতি হয়েছে। আগুন অন্য ভবনে ছড়িয়ে পড়েনি। এর জন্য সবাই কাজ করেছি। ১৭ ঘণ্টা টিম হিসেবে কাজ করেছি। তিনি দ্রুত ইপিজেডের সব ভবন দ্রুত কমপ্লায়েন্স ভবনে রূপান্তর করে কার্যকারিতা সনদ নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, এ ধরনের অগ্নিকাণ্ড শুধু কারখানা মালিকের নয়, দেশের জন্য ক্ষতি। এ ধরনের ক্ষতি চাই না। সিজন খারাপ। দ্রুত আগুন লেগে যাবে। সবাইকে প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে আসুন। ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। ১৫ কার্যদিবসে কমিটি প্রতিবেদন জমা দেবে। তখন আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে জানা যাবে। ভবনটির কলাম, কাঠামো দুর্বল হয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ ভবনে কেউ যেন না ঢোকে। খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ভবন। ভবনের সামনে ব্যানার দিতে অনুরোধ জানিয়েছি। সার্ভে করার পর ভবনটি অপসারণ করা হবে কি–না সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এদিকে, রাজধানীর মিরপুরের রূপনগরে একটি পোশাক কারখানা ও রাসায়নিকের গুদামে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মুহূর্তের মধ্যে নিভে গেল কয়েকটি তাজা প্রাণ। ভস্মীভূত হলো শ্রমিকদের স্বপ্ন। খোঁজ মিলছে না কারও কারও– দাবি পরিবারের। জানা গেছে, ১৪ অক্টোবর দুপুরে রূপনগরে একটি কেমিক্যাল গোডাউনে বিস্ফোরণে লাগা আগুন পাশের একটি বস্ত্র ওয়াশিং কারখানায় ছড়িয়ে পড়ে। এতে ১৬ জন কর্মী পুড়ে অঙ্গার হয়ে মারা যান। দগ্ধ আরও বেশ কয়েকজনকে বার্ন ইউনিটসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট কাজ করে।
এসব অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা থেকে অনেকগুলো দুর্বলতা বেরিয়ে আসে। প্রথমত, এসব ভবন করার পর অগ্নিনির্বাপণ বিভাগের অনেকগুলো নির্দেশনা থাকে। এ ক্ষেত্রে সেগুলো মানা হয়েছে কি না। আর মানা না হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না। তদন্ত হলে হয়তো বিস্তারিত জানা যাবে। সেখানকার কর্মীরা প্রশিক্ষিত হলে এবং আগুন নেভানোর ব্যবস্থাদি থাকলেও শুরুতে আগুন নেভানো সম্ভব হলে এ দুর্ঘটনা এড়ানো যেত।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রতিটি ভবনে প্রশস্ত ও বিকল্প সিঁড়ি থাকা প্রয়োজন, যাতে দুর্ঘটনা ঘটলে মানুষ দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরে যেতে পারেন। ভবন নির্মাণের পর ফায়ার সার্ভিসসহ সরকারের অনেকগুলো বিভাগ থেকে ছাড়পত্র নিতে হয়। বিল্ডিং কোডগুলো মেনে চলতে হয়। কিন্তু অনেক ভবনমালিকই সেটা মানেন না। আবার তদারককারী যেসব সংস্থা আছে, তারাও ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করে না। আমাদের আইন আছে কিন্তু আইনের সঠিক প্রয়োগ হয় না।
তাঁরা বলেন, অগ্নিকাণ্ড অন্যান্য দেশেও হয়ে থাকে। কিন্তু সেখানে মানুষ অধিক সচেতন বলে মানুষের প্রাণহানি কিংবা সম্পদের ক্ষতি কম হয়। যেকোনো কাঠামো সেটি রেস্তোরাঁ কিংবা কারখানা–অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা জোরদার করতে পারলে দুর্ঘটনা কমানো যায়। একই সঙ্গে ভবন ব্যবহারকারীদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এটি স্থায়ী কিংবা অস্থায়ী ব্যবহারকারীর জন্য সত্য।
প্রতিটি ভবনের নিরাপত্তার জন্য ভবনটি যাঁরা নির্মাণ করেন, তাঁদের সজাগ থাকতে হবে। আইন মেনে চলতে হবে। প্রতিটি ভবনে ফায়ার সেফটি প্ল্যান ও বহির্গমনের পরিকল্পনা বা ব্যবস্থা থাকতে হবে। কর্মীদের প্রশিক্ষণ বাড়াতে হবে।
এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা থেকে আমাদের বিবেক জাগ্রত হোক। আমরা আর কোনো পুনরাবৃত্তি চাই না। প্রতিটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা হোক বাধ্যতামূলক, কর্মজীবী মানুষের প্রাণ হোক সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।