বন্দরে পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল শুরু

ভারী যানবাহন প্রবেশ ফি’র বর্ধিত ট্যারিফ স্থগিত চার ঘণ্টা কর্মবিরতিতে কার্যক্রম ব্যাহত ১ হাজার ৬৫ কন্টেনার না নিয়ে বন্দর ছেড়েছে ছয়টি জাহাজ

হাসান আকবর | সোমবার , ২০ অক্টোবর, ২০২৫ at ৬:০২ পূর্বাহ্ণ

প্রায় ৫ দিন ধরে টানাপোড়নের পর গতকাল বিকাল থেকে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য পরিবহন শুরু হয়েছে। স্বাভাবিক হয়েছে দেশের বেসরকারি ডিপোগুলো থেকে বন্দরে কন্টেনার আনানেয়ার কাজও। বন্দর কর্তৃপক্ষের সাথে বৈঠকে ভারী যানবাহন প্রবেশ ফি’র বর্ধিত ট্যারিফ স্থগিত করা হলে ট্রেইলার মালিকশ্রমিকেরা কাজ শুরু করেন। এতে বন্দরের অচলাবস্থা কিছুটা কেটেছে।

তবে পোর্ট ইউজার্স ফোরামের আহ্বানে প্রতিদিন ৪ ঘণ্টা করে কর্মবিরতির ফলে সকালে বন্দরে স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দেশের রপ্তানি পণ্য বোঝাই ১ হাজার ৬৫ টিইইউএস কন্টেনার না নিয়ে ছয়টি জাহাজকে বন্দর ছাড়তে হয়েছে। অপরদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ড এবং ১৯টি ডিপোতে কন্টেনারের সংখ্যা বেড়ে গেছে। পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হলেও এই জট সামলাতে বেগ পেতে হবে উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছে, এর মধ্যে পোর্ট ইউজার্স ফোরামের সপ্তাহব্যাপী দৈনিক চার ঘণ্টা করে কর্মবিরতি এবং সপ্তাহান্তে বন্দর বন্ধ হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।

বর্ধিত ট্যারিফ নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্র্তৃপক্ষের সাথে মুখোমুখি অবস্থানে আছে বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত পোর্ট ইউজার্স ফোরাম। ফোরামের পক্ষ থেকে গত শনিবার ব্যবসায়ী সমাবেশ করে সরকারকে এক সপ্তাহের আল্টিমেটাম দেয়া হয়। আগামী এক সপ্তাহ প্রতিদিন চার ঘণ্টা করে কর্মবিরতির কর্মসূচি ঘাষণা করা হয় গত শনিবার। এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত চার ঘণ্টা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশন কোনো কাজ করেনি। ফলে ওই চার ঘণ্টা বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম অনেকটা অচল হয়ে পড়ে। এই কর্মসূচি আগামী এক সপ্তাহ প্রতিদিন চলবে। দিনের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে কর্মবিরতি পালন করার নেতিবাচক প্রভাব বন্দরের প্রাত্যহিক কার্যক্রমে বড় ধাক্কা দেবে বলে সূত্রগুলো মন্তব্য করেছে। অপরদিকে প্রাইম মুভার ট্রেইলার মালিকচালকদের সাথে বন্দরের সমঝোতা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরে ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও প্রাইম মুভার প্রবেশের ওপর বাড়তি হারে যে মাশুল আরোপ করা হয়েছিল, পরবর্তী সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত তা স্থগিত করেছে কর্তৃপক্ষ।

বর্ধিত মাশুলের প্রতিবাদে ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, প্রাইম মুভার মালিকদের আন্দোলনের মধ্যে গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দর ভবনে পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়। গতকাল বেলা ১২টায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামানের সভাপতিত্বে শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আন্দোলনকারী পরিবহন মালিকশ্রমিকদের বৈঠক হয়। বৈঠকে বন্দরে পণ্যবাহী যানবাহন প্রবেশের ফি পূর্বের মতো বহাল থাকার সিদ্ধান্ত নেয়া হলে ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও প্রাইম মুভার মালিকেরা যান চলাচল শুরুর ঘোষণা দেন। বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে এসব গাড়ি চলাচল শুরু হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, দেশের অর্থনীতির স্বার্থে বন্দরে যানবাহনের প্রবেশ মাশুল যেটা বৃদ্ধি করা হয়েছে, পরবর্তী সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত সেটা স্থগিত থাকবে। বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, যেহেতু এ বিষয়ের সাথে দেশের আমদানিরপ্তানি এবং অর্থনীতি জড়িত, তাই দেশের স্বার্থে এ কার্যক্রমটা (বন্দরে গাড়ি প্রবেশ) দ্রুত চালু হওয়া উচিত। বৈঠকে বন্দর চেয়ারম্যান এবং অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন উল্লেখ করে তিনি জানান, পরবর্তী সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত শুধুমাত্র যানবাহন খাতে যে ট্যারিফটা বৃদ্ধি করা হয়েছে সেটা স্থগিত থাকবে।

মাশুলের হার পুনর্নির্ধারণ করা হবে কিনা জানতে চাইলে বন্দর সচিব বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়ে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠাবে। সেটা ফাইনালি অনুমোদন হয়ে এলে আপনারা জানতে পারবেন কীভাবে এটা রিফিঙ হচ্ছে। সেই সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত এটা স্থগিত থাকবে।

বৈঠকের পর বাংলাদেশ কাভার্ডভ্যান ট্রাক প্রাইম মুভার পণ্য পরিবহন মালিক অ্যাসোসিয়েশনের বন্দর বিষয়ক সম্পাদক মো. শামসুজ্জামান সুমন বলেন, বৈঠকে বর্ধিত প্রবেশ ফি স্থগিত করার কথা বলেছে। বৈঠক শেষ হওয়ার পরপরই আমরা আমাদের সংগঠনভুক্ত সকলকে কাজে ফিরতে বলেছি।

এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনও বর্ধিত মাশুলের প্রতিবাদে গতকাল ৪ ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করে।

ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, প্রাইম মুভার ট্রেইলার চলাচল শুরু হওয়ায় বন্দর থেকে ডিপোতে এবং ডিপো থেকে বন্দরে কন্টেনার পরিবহন স্বাভাবিক হয়। তবে প্রায় ৫ দিন ধরে যে টানাপোড়ন চলেছে তাতে ডিপো থেকে বন্দরে রপ্তানি পণ্য বোঝাই কন্টেনারগুলো পৌঁছেনি। ফলে রপ্তানি পণ্য আংশিক নিয়ে ৬টি জাহাজ বন্দর ছেড়েছে। উক্ত ছয়টি জাহাজে রপ্তানি পণ্য বোঝাই এবং খালি মিলে আরো ১ হাজার ৬৫ টিইইউএস কন্টেনার নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। সময়মতো শিপমেন্ট না হওয়ায় এসব রপ্তানি পণ্যের আন্তর্জাতিক ট্রান্সশিপমেন্ট শিডিউল ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

গতকাল সকাল থেকে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের কর্মবিরতি ও পরিবহন মালিকশ্রমিকদের যান চলাচল বন্ধের কারণে শনিবার এবং গতকাল সকালের জোয়ারের সময় এসব জাহাজ বন্দরের বিভিন্ন জেটি থেকে পণ্য না নিয়ে নোঙর তোলে।

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের একটি সূত্র জানিয়েছে, বন্দরের জিসিবি, সিসিটি১ ও ৩ এবং এনসিটি ২, , ৫ নম্বর জেটি থেকে এসব জাহাজ ছেড়ে গেছে। জাহাজগুলো হচ্ছে এক্সপ্রেস লোতসে, এমএসসি কাভায়া, সোল রেসিলেন্স, ইন্টারেশিয়া ফরোয়ার্ড, আমালফাই বে এবং এমএসসি সাইজিং। এসব জাহাজে ১ হাজার ৬৫ টিইইউএস কন্টেনার পণ্য সিঙ্গাপুর, চীন, শ্রীলঙ্কা, স্কটল্যান্ডের বন্দরে যাওয়ার কথা ছিল। কন্টেনারগুলো বন্দরে যথাসময়ে না পৌঁছায় এই সংকট তৈরি হয়েছে। এতে ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরে মাদার ভ্যাসেলের শিডিউল বিপর্যয়ের শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপাইকারিতে কমলেও খুচরায় বাড়ছে ডিমের দাম
পরবর্তী নিবন্ধপতেঙ্গায় গাছে ঝুলছিল তরুণের লাশ