দেশে কয়েকদিনের মধ্যে বড় ধরনের কয়েকটি অগ্নিকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে একটি কোর কমিটি গঠন করেছে সরকার। কমিটিতে স্বরাষ্ট্র সচিবকে প্রধান করা হয়েছে জানিয়ে দুর্যোগ ও ত্রাণ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক–ই–আজম বলেন, ধারাবাহিক অগ্নিকাণ্ড তদন্তে ৭ সদস্যের কোর কমিটি করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে সদস্য আরো বাড়তে পারে। কোর কমিটির ৫ নভেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আশা করা যায় একটি পরিচ্ছন্ন প্রতিবেদন আমরা পাব। খবর বিডিনিউজের।
ঢাকা ও চট্টগ্রামে পাঁচ দিনের মধ্যে তিনটি বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড ঘটে। প্রথম ঘটনাটি ঘটে ঢাকার মিরপুরে রূপনগর এলাকায়। মঙ্গলবার সেখানে পোশাক কারখানা ও রাসায়নিকের গুদামে অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ১৬ জনের মৃত্যু হয়। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে প্রায় ২৮ ঘণ্টা পরে। এরপর বৃহস্পতিবার আগুন লাগে চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল– সিইপিজেড এলাকার একটি কারখানায়। সেখানে কেউ হতাহত না হলেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে প্রায় ১৭ ঘণ্টা পর।
সবশেষ শনিবার বড় ধরনের আগুন লাগে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে পরের দিন। একদিন পর পর এ ধরনের বড় তিনটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নানা মহলে নানা সমালোচনা শুরু হয়। এসব ঘটনা পরিকল্পিত কিনা, সেই প্রশ্নও ওঠে। ‘জনগণের বিশ্বাস এসব অগ্নিকাণ্ড পরিকল্পিত’–এমন মন্তব্য আসে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের কাছ থেকে।
এমন প্রেক্ষাপটে গতকাল বিকালে সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভা কক্ষে জরুরি সভায় বসেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সংস্থা ও বাহিনীর প্রতিনিধিরা। সভায় বাণিজ্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, দুর্যোগ ও ত্রাণ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক–ই–আজম ও ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামালও উপস্থিত ছিলেন।
জাহেদ কামাল বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানের অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের করণীয় সম্পর্ক ছাড়াও পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, সচেতনতা আরো কীভাবে বাড়ানো যায়, এসব বিষয়ে আলোচনা হয়। সচেতনার কোনো বিকল্প নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ব্যবস্থাপনাগুলোকে কাজে লাগানোটা অত্যন্ত জরুরি। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর নিরপত্তার বিষয়টিও আলোচনায় আসে।
এ ব্যাপারে পুলিশের আইজি বাহারুল আলম বলেন, নিরাপত্তার বিষয়টি শুধু পুলিশের একার নয়। এতে সংশ্লিষ্ট সবার দায়িত্ব রয়েছে। সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। কেপিআই স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তার ব্যাপারে সরকারের পৃথক ব্যবস্থাপনা আগে থেকেই রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বৈঠকের পর দুর্যোগ ও ত্রাণ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক–ই–আজম সাংবাদিকদের বলেন, আমরা অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। তদন্তের বহু বিষয় পর্যালোচনা করা হচ্ছে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নাশকতা বা দেশি–বিদেশি ষড়যন্ত্র আছে কিনা, তা তদন্ত কমিটির রিপোর্ট না দেওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাবে না।
বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে আগুনের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস দেরিতে গেছে–এমন অভিযোগের বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, সেখানে কিছু ঘাটতি ছিল। সিভিল এভিয়েশনের নিজস্ব ব্যবস্থাপনাও রয়েছে। তারাও সেখানে কাজ করেছে। তবে সব বিষয়ে খতিয়ে দেখা হবে।