ইংরেজি পারস্পেক্টিভ, বাংলায় যার অর্থ দৃষ্টিকোণ বা দৃষ্টিভঙ্গী, সেটির কারণে একের ভেতরে একের অধিক অর্থ বা সত্য বিরাজ করে, সেটি ইংরেজি অংকের ৬ বা ৯ দিয়ে সহজে ব্যাখ্যা করা গেলেও, বাংলায় তেমন কোন সহজ উদাহরণ আছে বলে জানা নাই। এই কারণেই কি না জানি না, এই বাংগাল সেই উদাহরণই পেলাম হালে, হাতে কলমে এই রিয়াদে।
হ্যাঁ অবশেষে জানা গেছে, কী কারণে সাত আট দিন আগে দুবাইগামি এমিরেটসে চেক ইন হয়ে যাওয়ার পরও সৌদি ছাড়ার ছাড়পত্র দেয়নি আমাকে ইমিগ্রেশন। অনেকবারই বলেছি যে, এবারের সৌদি ভিসাটি ছিল আমার তিন মাসের সিঙ্গেল এন্ট্রি ভিসা। এ ভিসা মোতাবেক একবার সৌদিতে ঢোকার পর অক্লেশে তিন মাস থাকতে পারার কথা। গত তিনমাস যেহেতু ছিলাম সৌদির চৌহদ্দিতেই, তাতে তো কোন সমস্যা হওয়ারই কথা নয়।
কিন্তু তারপরও সমস্যায় পড়েছিলাম ঐ ভিসারই সময়কাল হিসাব করার পারস্পেক্টিভের ফেরকাতেই। আমি, না আমি তো না, আমাদের মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান গিউসি, ভিসায় উল্লিখিত ঐ তিন মাসকে যখন গুনেছে খ্রিস্টান দৃষ্টিভঙ্গিতে, সেই একই তিন মাসকে রিয়াদ এয়ারপোর্টের ইমিগ্রেশনকর্মী দেখেছে মুসলিম দৃষ্টিকোন থেকে। সৌদিআরবের অফিস, আদালত, লেনদেন, সবই বিশ্বব্যাপি প্রচলিত খ্রিষ্টীয় ক্যালেন্ডার ধরে চললেও, এইবার যেদিন আমি রিয়াদ এয়ারপোর্টের ইমিগ্রেশন পার হচ্ছিলাম, সেদিন ঐ ডেস্কের ইমিগ্রেশনকর্মী হিজরি মাসের হিসাবে আমার সৌদি ত্যাগের তারিখ নির্দিষ্ট করে রেখেছিল কম্পিউটার সিস্টেমে। কী কারনে যে এই অধমের ক্ষেত্রে হঠাৎ সে ঐরকম হিজরিপ্রেমী হয়ে উঠেছিল সে রহস্য ভেদ করতে না করা গেলেও, এটুকু অন্তত জানা গেছে। এতে দুবাই যাওয়ার প্রাক্কালে আমার এয়ারপোর্ট থেকে ফেরত যাওয়ার যুৎসই ব্যাখ্যা পাওয়া গেছে যেমন, তেমনি এখানকার সকলের জন্যই সেটি হয়ে গেল বিশেষ একটি সতর্কবার্তা। সৌর ও চান্দ্র বছরের মধ্যে বছরে যে ১১/১২ দিনের ব্যবধান আছে, এই তিন মাসে আমার ক্ষেত্রে সেটি দাঁড়িয়েছিল হয়তো ৩/৪ দিনে। ফলে দুবাই যাওয়ার প্রাক্কালে ইমিগ্রেশনকর্মী আমার ইনপুট সিস্টেমে দেয়ার পর দেখেছিল সে লালপতাকা! সেজন্যই গতিরোধ করেছিল সে আমার।
এবিষয়ে, হোক কারণ কারো ক্ষেত্রে যা ইচ্ছা তা; শুনেছি ভিসায় বা পারমিটে উল্লিখিত দিনের চেয়ে বেশী দিন থাকা, মানে ওভারস্টে করাকে বেশ গুরুতর অপরাধ বলেই গণ্য করা হয় সৌদিতে। এ বিষয়েও অবশ্যই এদের গাত্রবর্ণসম্পর্কিত পারস্পেক্টিভগত বিরাট ফেরকাও আছে। সেদিক থেকে বলতে হয় বরং, ভয়ানক এক ফাঁড়াই এক্কেবারে কানের পাশ দিয়ে গিয়েছিল সেদিন আমার! কারণ সৌদিদের চোখে যে মিসকিন বাংলা, সে মনুষ্যপদবাচ্য কি না, তা নিয়ে গবেষণার অবকাশ আছে। তাতে সেদিন সেই ইমিগ্রেশনকর্মী এয়ারপোর্ট থেকে শুধুই ফিরিয়ে না দিয়ে, ঢুকিয়েও দিতে পারতো সোজা গারদে আমায়। তা তো সে করেনি! এ জন্য একদিকে যেমন তুমুল শোকরগোজার করা উচিৎ আমার, তেমনি সেইসাথে কায়মনে ধন্যবাদ জানানোও উচিৎ সেই ইমিগ্রেশন কর্মীটিকে তার অঘাধ বদান্যতার জন্য।
কথা হচ্ছে দিন গোনার ঐ পারস্পেক্টিভ ফেরকায়, নিজের অজান্তেই এ কয়দিন ঘাড়ের উপর আমার যে খাড়া ঝুলছিল, মুক্তি পেয়েছি যা থেকে, গত পরশু যেই সালমানের কারিশমায়, গোটা ব্যাপারটির উপরের ব্যাখ্যাটিও দিয়েছে সেই।
দুবাই মিটিং শেষে রিয়াদ অফিসে সকলে ফিরে আসার তিনদিন পর, গিউসি আমাকে সালমান নামের এক ছিপছিপে ঢেঙ্গা গড়নের তরুণ সৌদির হাতে সপে দিয়েছিল। আমারই নামের শেষ অংশের কাছাকাছি নামের এই তরুণ, গিউসির সাথে রুমে এসে সালাম বিনিময় শেষে, “কাম”, “কাম” বলে তার সাথে এগুবার তাড়া দিতেই, সাথে আসা গিউসি জানিয়েছিল যে, এই সালমানের হাতেই আছে আমার মুক্তির চাবিকাঠি । শুনে নিশ্চিন্তে তার ঐ ‘কামের’ আহ্বানে তারই পিছু পিছু এগুতে এগুতে, কথা বলতে গিয়ে টের পেয়েছিলাম যে ইয়েস, নো, ভেরি গুড, ছাড়া কাম, গো, টক, গিভ, টেক পর্যন্তই সালমানের ইংরেজির দৌড়। ফলে তার পিছু হেঁটে অফিস থেকে বেরিয়ে আমেরিকান জেনারেল মোটরস কোম্পানির তার ঢাউসাকার এস ইউ ভি তে উঠার পর, কথা আর না বাড়িয়ে বসে ছিলাম চুপচাপ।
অন্যদিকে ড্রাইভিং সিটে বসা সালমান ক্ষণেক্ষণে নানানজনের সাথে ফোনে নানান স্বর, সুর , তাল লয়ে কথা বলতে বলতে, রিয়াদ শহরের অচেনা সব পথ দিয়ে সৌদি গতিতে গাড়ী চালাতে শুরু করলে, বুকে তুমুল ধড়পড় শুরু হয়েছিল। এরই মধ্যে জেনেছি সৌদিচালকদের প্রবল গতিপ্রিয়তার কারনে, এখানে রোড এক্সিডেন্টে মৃত্যুর হার পৃথিবীর সর্বোচ্চ।
ভিসার মেয়াদ নিয়ে দুই ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির গল্প এরই মধ্যে করে ফেলেছি উপরে, যদিও জেনেছিলাম তা সালমানের বরাতে পরে। তবে ঐমুহূর্তে তার গাড়িতে যেতে যেতে, গাড়িচালক হিসেবে আমাদের দুজনের ট্রাফিকলাইট বিষয়ক পারস্পেক্টিভের ফেরকাটি টের পেয়ে ঘাবড়ে গিয়েছিলাম বড়ই। গাডিচালক আমার কাছে, সবুজ ট্রাফিকলাইট মানে, নো চিন্তা! যেতে থাকো, যাচ্ছো যে গতিতে, তাতেই। হলুদ মানে, সাবধান! গতি সামলাও। লাল মানে ‘হল্ট’। সেখানে সালমান, সবুজ লাইটের ব্যাপারে আমার পারস্পেক্টিভে থকালেও, হলুদ হলেই দেখি সে দিচ্ছে গতি বাড়িয়ে! এমন কী লাল লাইট জ্বলে উঠবার প্রথম কয়েক সেকেন্ডে গতি সে আরো বাড়িয়ে পার হয়ে যায় সিগনাল অবলীলায়। এমতাবস্থায় রাস্তাগুলো সব ওয়ান ওয়ে এই বলে নিজেকে নিজে আশ্বস্ত করলেও, ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে ভাবছিলাম সর্বক্ষণ, বের তো হয়েছিলাম এর সাথে, সৌদির খাঁচা থেকে বেরুবার পথ খুঁজতে, এখন তো দেখছি যে কোন মুহূর্তেই চলে যেতে পারি সোজা ঐ পর পাড়েই!
নাহ, এরপর আর কখনো কপালের দোষ দেয়া যাবে না, কারণ মিনিট চল্লিশেক প্রবল গতিতে, বেপরোয়া ঢঙ্গে গাড়ী চালিয়ে অবশেষে সহিসালামতেই ঢেঙ্গা সালমান রিয়াদ শহরের একপ্রান্তের মরুতে, একটি আরেকটি থেকে বেশ দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকটা একতলা দালানের একটির সামনে গাড়ী থামিয়ে, গাড়ী থেকে নামতে নামতে ‘কাম’ বলতেই তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে ঐ দালানে ঢুকেই খেয়েছিলাম জোর ধাক্কা! কারণ হাতে হাতকড়া ও পায়ে শিকল বাঁধা অবস্থায় যে সাত আটজনকে দেখেছিলাম মলিন চেহারায় দাঁড়িয়ে থাকতে ঐ ঘরটির দেয়াল ঘেঁষে, তাদের মধ্যে কাউকে দেশী ভাই মনে না হলেও তারা যে নিশ্চিত উপমহাদেশীয় বিশেষত পাকিস্তানি, এ নিয়ে ছিলাম নিশ্চিত! কতো বড় দাগি আসামী যে তারা? বা কী যে অপরাধ এদের? তা তো জানি না। কিন্তু আমাকেও যেহেতু ঢোকানো হয়েছে সেই একই রুমে, ধরে নিয়েছিলাম যে তারাও আমার মতোই হয়তোবা ওভারস্টে করার দোষেই দোষী।
হাতকড়া পরা শিকল বাঁধা ঐ কয়েকজন ও তাদের পাহারায় নিয়োজিত তিন গার্ড ছাড়া, ঐ রুমের তিন টেবিলে কম্পিউটার সামনে নিয়ে নিজেদের মধ্যে খোসগল্পরত তিন সাউদিকেও দেখলাম। রুমে ঢুকতে ঢুকতে সালমানের সালামের জবাবে সমস্বরে তিনজন সালামের উত্তর দেবার সাথে, একজন কে দেখলাম সরু চোখে আমার দিকে তাকিয়ে, আরবিতে কিছু একটা বলতে বলতে, রুমের এক কোনায় রাখা একটা চেয়ারের দিকে ইশারা করলো। একই সাথে সালমানও আমাকে “সিট” বলার সাথে ইশারা করতেই, থ্যাংকু ও শোকরান বলে চেয়ারে বসতেই, রুমের উল্টা দিকের দরজা গলে অফিসটির ভেতরের কোন একটা রুমে হাওয়া হয়ে গিয়েছিল সালমান।
এভাবে মিনিট বিশ কি পঁচিশ পর সালমান ভেতর থেকে ফিরে আসার আগ পর্যন্ত ঐ রুমে যা ঘটতে দেখেছিলাম, তা হল নিজেদের মধ্যে গুলগাপ্পি, হাসাহাসি, রং তামাশা করতে করতে তিন টেবিলে কম্পিউটার নিয়ে বসা জনাবেরা আরবিতে কিছু একটা বলে হুকুম দিলেই, গার্ডত্রয় হাতকড়া পরা পায়ে শিকল বাঁধা লোকজনদের মধ্য থেকে তিনজনকে নিয়ে তিন টেবিলের পাশে দাঁড় করিয়ে দিলে, এক টেবিলে যখন একজনের হাতে আঙ্গুলের ছাপ নেয়া হয়, অন্যটেবিলে সে সময় আরেকজনের ছবি তোলা হয়। আর তৃতীয় টেবিল নেয়া হয় তৃতীয়জনের ডকুমেন্টস থেকে তথ্য। মেরী গো রাউন্ডের মতো এক টেবিলের কাজ শেষ হতেই গার্ড ধাক্কা দিয়ে সংশ্লিষ্টকে হাজির করে অন্য টেবিলে । মানে যার হাতের ছাপ নেয়া হয়ে গেছে, তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ছবি তোলার টেবিলে, নয়তো ডাটা এন্ট্রির টেবিলে।
অতীব গুরুত্বপূর্ণ এই কাজটি যে রকম হেলাফেলায় করছে এরা, তা দেখে সারাক্ষণই মনে হচ্ছিল তিন কম্পিউটারের মগজে জমা হওয়া তিন জিনিষ, সার্ভারে একীভূত করার সময় বোতাম টেপার সামান্য ভুলে, লেগে যেতে পারে বিরাট ভজঘট। শিকলবাঁধা এবেচারাদের একাধিক জনের মাথায় পড়তে পারে তাতে বাজ, নির্ঘাত, বিনামেঘেই। মানে একজনের আঙ্গুলের ছাপের সাথে আরেকজনের ছবি ঢুকে গেলে, বা তথ্যের ঘোট লাগলেই তো হয়ে যাবে সর্বনাশ!
কায়মনে প্রার্থনা করছিলাম জোর তাই, একই কাজ যদি আমারও করতে হয়, তা যেন এদের হাতে না হয়। অবশ্য এরই মধ্যে কল্পনায় নিজেকেও বেশ কবারই দেখতে পেয়েছি ঐ শিকলপড়াদের মতই দাঁড়িয়ে থাকতে। কারণ, এরা যদি ইকামা বা ভিসার সময় পার করে সৌদিতে থাকার কারনে অবৈধ হয়ে থাকে, অবস্থা তো আমারও ছিল তাই, তখনো। কপাল ভাল যে সেদিন জিয়া আমাকে ঐ ভয়ানক ঘটনাটি শুনিয়ে এবং গিউসিও এমনিতেই সাবধান করেছিল, যেন কমপাউণ্ড ছেড়ে বের না হই। না হয়, হয়তো আমিও থাকতাম এদের সাথে হাতকড়া ও শিকল পরে।
ভাগ্যের কিম্বা প্রার্থনার কোনটারই যে জোর নাই আমার, বারে বারে তা প্রমাণিত হয়েছে এ জীবনে। কিন্তু সেদিন গিয়েছিলাম যে সালমানের সাথে, জোর যে তার ভালই, বোঝা গিয়েছিল তা। ঐ দালানের ভেতরের কোন অফিসের মাঝারি বা বড়কর্তার সাথে কথাবার্তা পাক্কা করে, ফিরে এসে হাসিমুখে আমার কাছে ‘পাসপোর্ট’ উচ্চারণ করতেই সেটি তার দিকে এগিয়ে দিলে, তা হাতে নিতে নিতে রুমের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে সালমান মাতৃভাষায় কিছু একটা বলতেই
উত্তরে ওরা হাসিমুখে ‘মা সালামা’ ও প্রতিউত্তরে সালমানও “মা সালামা” বলায় আরবি না জানা সত্ত্বেও এরই মধ্যে এখানকার আদব কায়দা ও টুক টাক শব্দ যতোটা আয়ত্ব করতে পেরেছি, তার নিরিখে বুঝেছিলাম, খবর ভাল। তাতে কিছুটা হাঁফ ছাড়লেও, মনে তখনও সন্দেহ রয়ে গিয়েছিল যে আমাকে না শেষ পর্যন্ত এই তিন টেবিলেই যেতে হয়! কিন্তু নাহ, মিনিট পাঁচেকের মধ্যে ভেতর থেকে সালমান পাসপোর্টসহ ফিরে আমাকে “কাম” বলে সবাইকে সালাম দিয়ে, গাড়ীর দিকে এগুতে শুরু করলে হাফ ছেড়েছিলাম পুরোপুরি।
তারপর সালমানের গাড়িতে সৌদি গতিতে অফিসে ফিরে, সেদিনই মানে পরশুদিন গিউসির রুমে চা খেতে খেতে তার দেয়া বয়ানের অনুবাদ গিউসির মুখে শুনে যখন বুঝলাম, আর ঝামেলা নাই, সাথে সাথেই অফিসের ট্রাভেলডেস্কে জানিয়েছিলাম যত দ্রুত সম্ভব ফিরতে চাই দেশে।
সেদিনকার অফলোড করে দেয়া ব্যাগ সুটকেসতো তৈরিই ছিল। শুধু দুবাই মিটিংয়ের জন্য যে সুটকেসে খানদুয়েক স্যুট টাই শার্ট জুতো ঢুকিয়েছিলাম সেটি থেকে ওগুলো বের করে সেই শুন্যস্থান পূরণ করার জন্য বাসার কাছের “টয়স আর আসে” গিয়ে অভ্রর জন্মদিনের উপহার হিসেবে নিয়েছিলাম ওর পছন্দের লেগোসেট, খেলনা বোল্ডডোজার, ক্রেন এসব। তারপর আজ ঘণ্টা তিনেক আগে রিয়াদ থেকে ছেড়ে ঘণ্টা খানেক দুবাই নামার পর, বসেছিলাম এসে এমিরেটস লাউঞ্জের স্মোকিং এরিয়ার এই জায়গাটায়, যেখানে চোখের সামনেই আছে, ফ্লাইট উঠানামার ডিজিটাল বোর্ডটি।
রিয়াদে গত তিন মাসের নানান সময়ে ঢক ঢক করে সৌদি শ্যাম্পেন গিললেও, ছোট ছোট চুমুকে করছি পান এখন খাঁটি ফরাসি শ্যাম্পেন। সাথে আছে একবাটিভর্তি নানান রঙয়ের জয়তুন আরেক বাটিভর্তি কাজু বাদাম, আলমণ্ড আর পেস্তা। হ্যাঁ, এই লাউঞ্জে মুফতে আর যে সব আমিরি সুবিধা আছে, তার মধ্যে এই সুবিধাটি বরাবরই উপভোগ করি তাড়িয়ে তাড়িয়ে। এইমাত্র শ্যাম্পেনের গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে ডিজিটাল বোর্ডের দিকে নজর যেতেই দেখি ঢাকাগামী ফ্লাইটের বোর্ডিং শুরু হয়েছে। দ্রুত তাই একটা সিগারেটে ধরিয়ে জোর সুখটান দিতে দিতে ভাবলাম, আহ! আর ঘণ্টা পাঁচেকের মধ্যে ফেলবো পা, আমার সোনার বাংলায়। তারপর আরো চার পাঁচ ঘণ্টার মতো লাগবে ঢাকা এয়ারপোর্টের ইমগ্রেশন শেষ করে, সুটকেস নিয়ে জ্যাম উজিয়ে দারাপুত্র পরিবারের কাছে পৌঁছুতে! আর ঐ সময়ের মধ্যে ক্ষণে ক্ষণে ফোন করে তাড়া দেবে অভ্র ‘বাবা, তুমি এখন কোথায়? দেরী করছ কেন? এক্ষুনি চলে আসো।’
লেখক : ভ্রমণসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক।