শিক্ষার মান উন্নয়নে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন জরুরি

| রবিবার , ১৯ অক্টোবর, ২০২৫ at ৯:৩৯ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত এবারের উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমান পরীক্ষার ফলাফলে বিপর্যয় ঘটেছে। এটা অনেকের কাছে অনাকাঙ্ক্ষিত। এবারের ফলাফলে গতবারের তুলনায় পাসের হার যেমন কমেছে তেমনই জিপিএ৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কমেছে। এবার পাসের হার যেখানে ৫২ দশমিক ৫৭ শতাংশ, সেখানে গত বছর ছিল পাসের হার ৭০ দশমিক ৩২ শতাংশ। এবার ৬ হাজার ৯৭ জন জিপিএ৫ পেলেও গত বছর পেয়েছিল ১০ হাজার ২৬৯ জন শিক্ষার্থী। সেই হিসেবে গত বছরের তুলনায় প্রায় ১৮ শতাংশ কমেছে পাসের হার। আর জিপিএ৫ কমেছে প্রায় ৪ হাজার।

ফলাফল বিশ্লেষণ করে শিক্ষা বোর্ড সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবার অন্যান্য বিষয়ের তুলনায় ইংরেজিতে পাসের হার সবচেয়ে কম। মাত্র ৬৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ শিক্ষার্থী ইংরেজিতে পাস করতে পেরেছেন। বাকীরা অকৃতকার্য হয়েছেন। এরমধ্যে তিন পার্বত্য জেলার শিক্ষার্থীরা ইংরেজিতে বেশি অকৃতকার্য হয়েছেন। এর কারণে পুরো শিক্ষাবোর্ডের ফলাফলে প্রভাব পড়েছে। সারাদেশে পাসের হার ৫৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ হলেও চট্টগ্রাম বোর্ডে পাসের হার দাঁড়িয়েছে ৫২ দশমিক ৫৭ শতাংশ। আর সারাদেশে ৬৯ হাজার ৯৭ জন শিক্ষার্থী জিপিএ৫ পেলেও চট্টগ্রাম বোর্ডে জিপিএ৫ পেয়েছেন ৬ হাজার ৯৭ জন শিক্ষার্থী। অন্যদিকে তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে রাঙামাটিতে পাসের হার ৪১ দশমিক ২৪ শতাংশ, খাগড়াছড়িতে ৩৫ দশমিক ৫৩ এবং বান্দরবানে ৩৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ। এরমধ্যে রাঙামাটিতে ৩৯ জন, বান্দরবানে ৯৩ জন এবং খাগড়াছড়িতে ২৫ জন জিপিএ৫ পেয়েছেন। গত বছর রাঙামাটিতে ৬০ দশমিক ৩২, খাগড়াছড়িতে ৫৯ দশমিক ৬৩ এবং বান্দরবানে ৫৯ দশমিক ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছিল। আগে ওভার মার্কিং কার্যক্রম থাকলেও এবার তা বন্ধ ছিল। এ কারণটিও ফলাফল বিপর্যয়ে প্রভাব রেখেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। উল্লেখ্য, ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী চট্টগ্রাম নগরীতে পাসের হার ৭০ দশমিক ৯০ শতাংশ। আর নগরী বাদে চট্টগ্রাম জেলার পাসের হার ৪৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ। কক্সবাজার জেলায় পাসের হার ৪৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ।

পরীক্ষার ফলাফল যা’ই হোক না কেন শিক্ষার মানোন্নয়ন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষাবিদরা। তাঁরা বলেছেন, দেশে প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার সমপ্রসারণ হলেও শিক্ষার গুণগত মানের ক্রমাগত অবনতি লক্ষ করা যাচ্ছে। এ ছাড়া শিক্ষা ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট ও বিস্তৃত শিক্ষানীতির অভাব যেমন রয়েছে তেমনি সরকারের সঠিক পরিকল্পনা এবং দক্ষ শিক্ষকের অভাবও সুস্পষ্ট।

শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো দরকার বলে উল্লেখ করে তাঁরা বলেছেন, শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করা ছাড়া শিক্ষার আসলে কোনো অর্থ নেই। শিক্ষা ক্ষেত্রে মানের ক্রমাবনতি রোধ করতে না পারলে জাতির ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়বে। গুগণত শিক্ষা অর্জনে টেকসইকরণসহ বিশ্বমানের শিক্ষা এবং যুগোপযোগী শিক্ষার জন্য যুগোপযোগী নীতি এবং এর যথাযথ বাস্তবায়ন প্রয়োজন।

লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ফলাফল মোটামুটি ভালো হলেও অনেক ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত মান অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাস্তব পরিস্থিতিও কিছুটা দায়ী বলে মনে করেন শিক্ষাবিদরা। শিক্ষার মান বৃদ্ধির ক্ষেত্রে শিক্ষকশিক্ষার্থী অনুপাত একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হিসাবে কাজ করে। শিক্ষার মান বাড়াতে যা যা করণীয়, সময়মতো প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিতে হবে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, শিক্ষার মান এককভাবে শিক্ষার্থীদের ফলাফলের ওপর নির্ভরশীল নয়। দেশের সব শিক্ষার্থী পরীক্ষায় কৃতকার্য হলেও বলা যাবে না যে, দেশের শিক্ষাব্যবস্থা গুণগতমানের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছেছে। শিক্ষার মান নির্ভর করে শিক্ষাক্রমের সফল বিস্তারণ, শিক্ষাদান পদ্ধতি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভৌত অবকাঠামো সুযোগসুবিধা, মানসম্মত শিক্ষক, গুণগত শিক্ষা ও সে শিক্ষার ফলাফলের ওপর। তাই বলা যায়, কেবল ফল বা জিপিএ বৃদ্ধি অথবা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শতভাগ পাসের হিসাব দিয়ে দেশের শিক্ষার মান কোনোভাবেই বিচার করা যায় না। পাস করা বিদ্যার প্রতি আমাদের যত আগ্রহ। নাম্বারের সূচকে আমরা শিক্ষার্থীর মেধা যাচাই করি। বেছে বের করি কে মেধাবী, কে মেধাশূন্য। এই মানদণ্ড এখন সর্বব্যাপী কার্যকর। এর ফলে একজন শিক্ষার্থীর যাবতীয় ধ্যানজ্ঞান, কর্মকাণ্ড সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে নির্দিষ্ট পরিমাণ মার্কস অর্জনের মধ্যে। ফলে ছাত্রছাত্রীর মেধা, চিন্তাচেতনা, মননশীলতা ও মূল্যবোধ বিকশিত হবার সুযোগ পাচ্ছে না। এ অবস্থায় শিক্ষার মান উন্নয়নে ভবিষ্যতে কীভাবে এগিয়ে যেতে হবে তার একটি কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ আবশ্যক বলেও মনে করেন শিক্ষাবিদরা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে