নীলিমার দিগন্তে তুলার মতো ভেসে বেড়ানো শুভ্র মেঘের মেলা দেখেই উপলব্ধি করা যায় শরতের ছোঁয়া। সকালের স্নিগ্ধ ঘাসের ডগায় জমে থাকা শিশিরবিন্দু আর তার ওপর সূর্যালোকের প্রথম কিরণ যখন প্রতিফলিত হয়, তখন এক অনবদ্য দৃশ্যের অবতারণা হয়। এ সময় হাওর–বাঁওড়গুলো ভরে ওঠে শত শত শ্বেত শাপলার প্রস্ফুটনে। নদীর দুই কূল কাশফুলের বন, যার সাদা শুভ্রতায় প্রকৃতি পায় এক ভিন্ন রূপ। এমন মনোমুগ্ধকর সময়ে প্রকৃতিপ্রেমীর মন কার না চায় প্রেমিকের হাত ধরে এই পথে হাঁটতে! শরৎ তার প্রাচুর্য দিয়ে প্রকৃতিকে সাজিয়ে তোলে অপরূপ সাজে। উপহার দেয় নানা বর্ণ ও সুবাসের ফুল, যেমন শিউলি, কাশফুল, মাধবী, চন্দ্রমল্লিকা ইত্যাদি। শিউলি আর কাশফুল এই ঋতুর অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। শিউলিকে কেন্দ্র করে রচিত হয়েছে কত শত কাব্য। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মুগ্ধ হয়ে লিখেছিলেন, ‘এসেছে শরৎ, হিমের পরশ / লেগেছে হাওয়ার পরে। সকাল বেলায় ঘাসের আগায় / শিশিরের রেখা ধরে’। এই কবিতায় তিনি শরতের স্নিগ্ধ বাতাস আর শিশিরভেজা ঘাসের সৌন্দর্য চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামও শরতের বন্দনায় লিখেছেন, “এসো শারদ প্রাতের পথিক এসো শিউলি বিছানো পথে / এসো ধুইয়া চরণ শিশিরে এসো অরুণ –কিরণ–রথে’। এখানে কবি ভোরের পবিত্রতা, শিউলিফুলের বিছানা এবং নবোদিত সূর্যের প্রথম রশ্মির কথা বর্ণনা করেছেন।
বর্ষার ঘন মেঘ সরে গিয়ে শরৎ প্রকৃতিকে করে তোলে শান্ত ও নির্মল। শরতের স্নিগ্ধতা সবার মনে এক নতুন প্রশান্তি ছড়িয়ে দেয়। এক কথায় বলা যায়, শরৎ শুধু একটি ঋতু নয়, বরং কাব্য, ছন্দ, গীত, সুবাস আর নির্মলতায় এক অনন্য ‘রূপের রানি’।












