বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, কোনো রাজনৈতিক দলের নামের সঙ্গে ইসলাম শব্দ থাকলেই তারা ইসলামের মালিক হয়ে যায় না। রাজনৈতিক কারণে ধর্মের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। কেউ যেন ক্ষমতার জন্য বা দুনিয়াবি উদ্দেশ্যে ধর্মকে ব্যবহার না করে। কেউ কেউ বলে, অমুক দল পরাজিত হলে ইসলাম পরাজিত হবে। নাউজুবিল্লাহ্! এটি ভ্রান্ত ধারণা। কোনো দলের নামে ইসলাম শব্দ থাকা মানেই সেই দলই ইসলাম নয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে পটিয়ার ঐতিহ্যবাহী দুইটি দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আল জামিয়াতুল আরাবিয়া ইসলামিয়া জিরি মাদ্রাসা ও দুপুরে আল জামিয়া আল ইসলামীয়া (জমিরিয়া) মাদ্রাসা পরিদর্শনে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় তিনি মাদ্রাসার শিক্ষক–শিক্ষার্থী ও আলেম–ওলামাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং জিরি মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা আল্লামা শাহ মোহাম্মদ তৈয়ব (রহ.) ও পটিয়া মাদ্রাসায় মাদ্রাসার মাকামে আজিজিয়াতের প্রতিষ্ঠাতা মুফতি আজিজুল হক (রহ.) সহ মুরব্বিদের কবর জেয়ারত করেন।
তিনি বলেন, এ দেশে আমরা যারা জনগোষ্ঠী বসবাস করি তার মধ্যে শতকরা ৯০–৯২ ভাগ মুসলমান। আমাদের মধ্যে যারা অন্য ধর্মাবলম্বী ভাই বোনেরা আছেন, আমাদের সবারই নাগরিক অধিকার সমান। সম্প্রীতির সাথে আমাদের সবাইকে এ দেশে, এ ভূখণ্ডে বসবাস করতে হবে। তাদের নিরাপত্তা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। সাংবিধানিক অধিকার আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে আমাদের বিভক্তির সুযোগ নিয়ে এখানে সম্প্রীতি নষ্ট করে অনেক শক্তি বাংলাদেশে অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করবে। সেটা গত বছরেও দেখেছি, এ বছরও দেখেছি। এ ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হবে। সেটা আমরা চাই না।
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, আমাদের দল ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাসী, ইসলামবিদ্বেষী নই। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে সংবিধানে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম সংযোজন করা হয় এবং আল্লাহর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাসকে রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। সুতরাং বিএনপি ইসলামবিদ্বেষী এই অভিযোগ নিছক রাজনৈতিক অপপ্রচার। তিনি আরো বলেন, ইসলামবিদ্বেষী শক্তির পতন ঘটেছে, আওয়ামী লীগের পতন ঘটেছে। আল্লাহ যার যার কর্ম অনুযায়ী বিচার করবেন। আমরা বহু আগেই বলেছিলাম, ইসলাম বিদ্বেষী ও আলেম বিদ্বেষী আওয়ামী লীগ কখনো শান্তি আনতে পারবে না, ক্ষমতাও ধরে রাখতে পারবে না। শাপলা চত্বরে অসংখ্য আলেম–ওলামা শাহাদাত বরণ করেছেন। তাদের রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত গণতন্ত্র আমাদের রক্ষা করতে হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন গণতন্ত্রের জন্য আর জীবন না দেয়, সে জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। রাজনৈতিক কারণে যেন কেউ সামাজিক ও ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট করতে না পারে, সেদিকে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। তিনি বলেন, ভোটের রাজনীতির উদ্দেশ্যে আমরা আলেম–ওলামাদের সঙ্গে দেখা করছি না, বরং একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের উদ্দেশ্যে। যেখানে সব শ্রেণি–পেশার মানুষ একসাথে বসে নীতি ও আইন নির্ধারণ করবে। এতে আইন সবার জন্য প্রযোজ্য হবে, বাস্তবায়নও সহজ হবে।
দুপুর ১টার দিকে তিনি দেশের বৃহত্তর কওমী মাদ্রাসা আল জামিয়া আল ইসলামিয়া জমিরিয়া কাসেমুল উলুম মাদ্রাসা পরিদর্শন করেন। পরে তিনি মাদ্রাসার শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। আল জামিয়া মাদ্রাসার মহাপরিচালক আল্লামা আবু তাহের নদভীর (রহ.) সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ–সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দীন, পটিয়ার সাবেক সংসদ সদস্য গাজী মো. শাহজাহান জুয়েল, জিরি মাদ্রাসার মহাপরিচালক আল্লামা খোবাইব বিন তৈয়ব (রহ.), হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব আজিজুল হক ইসলামাবাদী, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ইদ্রিস মিয়া, সাবেক আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব লায়ন হেলাল উদ্দিন, যুগ্ম আহ্বায়ক রেজাউল করিম নেছার, আলী আব্বাস, সাইফুদ্দীন সালাম মিঠু, সদস্য এনামুল হক এনাম, জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি বদরুল খায়ের চৌধুরী, পটিয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র নুরুল ইসলাম, উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব খোরশেদ আলম, চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম, পৌরসভার সদস্য সচিব গাজী আবু তাহের, আবদুল মোনাফ, চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন মাস্টার, শামসুল আনোয়ার খান, হাজী নজরুল ইসলাম, পৌরসভা বিএনপি নেতা মফিজুর রহমান, ছাত্রদল নেতা গাজী মনির, আবছার উদ্দীন সোহেল, তারেক রহমান, আবু শহীদ রমজান, এস এম নয়ন, যুবদল নেতা মোহাম্মদ আজাদ ও আজাদ হোসেন রিপন।