ঋতু পরিবর্তনের সাথে খাগড়াছড়িতে ঠাণ্ডা জনিত রোগের প্রকোপ বাড়ছে। চলতি মাসের প্রথম দুই সপ্তাহে নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৪ শিশু। মারা যাওয়া শিশুরা হল– অনেষ্কা চাকমা, এসান ত্রিপুরা, মনিকা ত্রিপুরা ও মানতা চাকমা। তাদের বয়স দুই থেকে আট মাস। খাগড়াছড়িতে দিনের বেলা গরম আর রাতে ঠাণ্ডা পড়ছে। আবহাওয়ার এমন পরিবর্তনে বাড়ছে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, জ্বর, সর্দিসহ শীতজনিত রোগ। আক্রান্ত রোগীদের বেশির ভাগই শিশু।
জানা যায়, শিশু ওয়ার্ডে ধারণ ক্ষমতার চার গুণ বেশি ভর্তি হওয়ায় চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা। ১৫ শয্যার শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছে অন্তত ৬২ জন। প্রতিদিন বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছে কয়েকশ রোগী। ভর্তিকৃত রোগীদের বেশিরভাগই ডায়রিয়া–বমি ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। হাসপাতালের শয্যা সংকটের কারণে ফ্লোরেও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর স্বজনরা বলেন, ঠাণ্ডা জনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর এখন বাচ্চাকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছি। এখানে চিকিৎসা সেবা চলছে। তবে হাসপাতালের ভেতরে জায়গা খুব কম হওয়ায় অনেককে ফ্লোরে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। পাশের হাসপাতাল ভবনের কাজ ছয় বছরেও শেষ হয়নি। আমাদের চিকিৎসা নিতে অসুবিধা হচ্ছে। দ্রুত নির্মাণ কাজ শেষ হলে আমরা স্বাচ্ছন্দ্যে চিকিৎসা নিতে পারতাম।
হাসপাতালের শয্যা সংকটের কারণে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে নার্স ও চিকিৎসকরা। কাগজে কলমে ২৫০ শয্যার হাসপাতালে জনবল রয়েছে ১০০ শয্যার। ধারণ ক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি রোগী সামাল দিতে দ্রুত নির্মাণাধীন ভবনের কাজ শেষ করার দাবি জানিয়েছে খাগড়াছড়ি শিশু ওয়ার্ডের সিনিয়র স্টাফ নার্স প্রিয়াঙ্কা রানী ভৌমিক। তিনি বলেন, এখানে রোগীর চাপ বেশি। প্রতিদিন প্রচুর রোগী আসছে। স্থান সংকুলান না হওয়ায় চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আমাদের এখানে ১৫ বেডের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছে ৬২ জন। বাধ্য হয়ে অনেককে ফ্লোরে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। নতুন ভবনের কাজ দ্রুত শেষ হলে আমরা রোগীদের সেবা দিতে পারব।
দিন দিন নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে জানিয়ে খাগড়াছড়ি জেলা সদর হাসপাতালের জুনিয়র কনসালন্টেট (শিশু) ডা. মো. ওমর ফারুক বলেন, আমাদের এখানে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চলতি মাসের প্রথম দুই সপ্তাহ (১৪ অক্টোবর পর্যন্ত) ৪ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। শিশুদের এখন বাড়তি যত্ন নিতে হবে। খাগড়াছড়ি আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক রিপল বাপ্পী চাকমা, দিনে ও রাতের বেলায় আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। আতংকিত না হয়ে অভিভাবকদের শিশুদের বাড়তি যত্ন নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক। বাচ্চাদের শরীর কুসুম গরম পানি দিয়ে মুছে দিতে হবে। ঠাণ্ডা জনিত রোগে আক্রান্ত হলে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসা উচিত।