প্রশাসনে দলীয়করণ বন্ধ করে নিরপেক্ষদের পদায়নের দাবি জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। অন্তর্বর্তী সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান রাখছি, আপনি বিশ্বব্যাপী একজন গ্রহণযোগ্য মানুষ। যারা আপনাকে ব্যবহার করে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে, তাদেরকে সরিয়ে দিন। নতুবা আপনার গ্রহণযোগ্যতা বজায় থাকবে না। আপনি যদি তাদেরকে চিহ্নিত করতে না পারেন, আমাদের কাছে তালিকা আছে আপনি চাইলে আমরা তালিকা দিতে প্রস্তুত আছি। নতুবা আমরা জাতির সামনে তাদের মুখোশ উন্মোচন করতে বাধ্য হবো। পরবর্তীতে আপনাকেই এর সকল দায়–দায়িত্ব নিতে হবে। খবর বিডিনিউজের।
গতকাল মঙ্গলবার পিআর পদ্ধতিতে জুলাই জাতীয় সনদের অন্তর্ভুক্ত করে গণভোটের দাবিসহ পাঁচ দফা দাবিতে ঢাকায় মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। রাজধানীর মৎস্য ভবন মোড়ে ওই মানববন্ধনে অংশ নিয়ে তাহের কথা বলছিলেন। সেখানে তিনি বলেন, যারা ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোটে দাবি রেখেছে তাদের উদ্দেশ্য খারাপ। তিনি বলেন, কারণ গণভোটে জুলাই সনদ পাস হয়ে গেলে জাতীয় নির্বাচন ব্যবস্থায় অনেক পরিবর্তন আসবে। নতুন ব্যবস্থায় নির্বাচন হলে তারা ভোট চুরি করতে পারবে না, কেন্দ্র দখল করতে পারবে না। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি হয়ে গেলে তারা ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে পারবে না, একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না। এজন্য তারা জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ঠেকাতে নানাভাবে ষড়যন্ত্র করছে।
তাহের বলেন, আমরা সোজা ভাষায় বলতে চাই, গণভোট জাতীয় নির্বাচনের টেস্ট ম্যাচ হতে পারে। যারা জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি চায় না, মেনে নিতে পারছে না তারা যুক্তি দেখাচ্ছে, জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট হলে যদি কোনো সমস্যা হয়, তাহলে জনগণ ভোটের প্রতি আস্থা হারাবে, যার প্রভাব জাতীয় নির্বাচনে পড়বে।
কোনো দলের নাম না নিয়ে তিনি বলেন, তারা বলছে, গণভোট আগে করলে সমস্যা হবে। কারা সমস্যা কারা করবে? আমরা মনে করি, জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট হওয়া জরুরি। কারণ যারা সমস্যা সৃষ্টি করবে, তারা জনগণ ও সরকারের কাছে চিহ্নিত হবে। তাদেরকে চিহ্নিত করতে হলেও গণভোটকে জাতীয় নির্বাচনের টেস্ট ম্যাচ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। আমাদের দাবি স্পষ্ট, নভেম্বরের মধ্যে গণভোট এবং ফেব্রুয়ারিতে জুলাই সনদের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে।
জুলাই সনদের আইনি ভিত্তিসহ ৫ দফা দাবিতে জামায়াত রাজধানীতে যাত্রাবাড়ী থেকে গাবতলী পর্যন্ত মানববন্ধন কর্মসূচি করে। এই কর্মসূচিতে বিভিন্ন পয়েন্টে জামায়াতের নেতা–কর্মীরা রাস্তার এক পাশে দাঁড়িয়ে মানববন্ধনে অংশ নেন। সকাল ১১টা থেকে দুপুর পর্যন্ত এই কর্মসূচিতে সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা মৎস্যভবনের কাছে মানববন্ধনে অংশ নেন।
তাহের এ সময় পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন। সেগুলো হল– জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি; পিআর পদ্ধতিতে সংসদের উভয় কক্ষের নির্বাচন; অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতকরণ; ফ্যাসিস্ট সরকারের জুলুম–নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা এবং স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা। এই ৫ দাবিতে গণমানুষের মুক্তির দাবি বর্ণনা করে তাহের বলেছেন, এই দাবি বাস্তবায়িত হলে মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে।
তাহের বলেন, জামায়াতে ইসলামী রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন চায়, তারা ব্যক্তি বা পরিবারতন্ত্রের বা দলীয় স্বার্থের রাজনীতি করে না। তিনি বলেন, একটি দল ক্ষমতায় যাওয়ার আগেই জনগণ তাদের পতন চায়। ৫ অগাস্ট পরবর্তী ওই দল ক্ষমতায় না থেকেও নিজেদেরকে ক্ষমতাসীন মনে করে সারাদেশে দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, লুটপাট ও দখলদারিত্ব শুরু করেছে। তাদের অত্যাচারে মানুষ অতিষ্ঠ। তিনি বলেন, ওই দলটি কথায় বলে তারা সংস্কার চায়। কিন্তু ঐকমত্য কমিশনে বসলে নানা রকম টালবাহানা করে। দলীয় স্বার্থ হাসিলের জন্য তারা হাসিনা মার্কা প্রহসনের নির্বাচন চায়। মনে রাখতে হবে, এ দেশে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো আর কোনো নির্বাচন হতে পারবে না। জনগণ এখন সজাগ ও সতর্ক রয়েছে।