নগরের আন্দরকিল্লার একটি প্রিন্টার্সে ছাপানো হয় ইউরো, ইউএস ডলার, আরব আমিরাতের দিরহাম, সৌদি আরবের রিয়াল ও মিয়ানমারের কিয়াটসহ দেশি–বিদেশি মুদ্রার জাল নোট। এরপর সেগুলো ছড়িয়ে দেয়া হয় সারা দেশে। আবার ই–কমার্স সাইট ‘দারাজ’–এর মাধ্যমেও এসব জাল নোট বিক্রি হয়। প্রতি বান্ডিল জাল নোট ছাপাতে খরচ পড়ে মাত্র ৩০ টাকা। যা বিক্রি হয় ১ হাজার টাকায়।
চট্টগ্রাম থেকে দীর্ঘদিন ধরে একটি সিন্ডিকেট এভাবে জাল নোট ছাপানো ও বেচাকেনার কাজ করে আসছিল। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে চান্দগাঁও থানার নূরনগর হাউজিং সোসাইটির সুলতান টাওয়ারের একটি বাসা থেকে ওই সিন্ডিকেটের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এ সময় তাদের কাছ থেকে ২০ কোটি টাকা মূল্যমানের দেশি–বিদেশি জাল মুদ্রা জব্দ করা হয়। ধৃতরা হচ্ছেন কঙবাজার চকরিয়া উপজেলার বিলছড়ির মো. তাজ উদ্দিনের ছেলে মো. তানবিজ উদ্দিন (২০) ও চন্দনাইশের বরমা এলাকার মো. আলাউদ্দিনের ছেলে মো. আসিফ। এর মধ্যে প্রথমে তানবিজকে আটক করা হয়। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে আসিফকে আটক করা হয়। তাদের কাছ থেকে ৫৫ বান্ডিল জাল ইউরো, ৪৫ বান্ডিল জাল ডলার, ২১ বান্ডিল দিরহাম, ৪৫ বান্ডিল জাল রিয়ালসহ বাংলাদেশি জাল টাকা জব্দ করা হয়। জব্দকৃত বাংলাদেশি মুদ্রার রয়েছে ১ হাজার টাকা, ২০০ টাকা ও ৫০ টাকার জাল নোটের বান্ডিল। এছাড়া তাদের কাছ থেকে ৯টি মোবাইল, সাতটি ক্রেডিট কার্ড, ল্যাপটপসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইসও জব্দ করা হয়েছে।
ধৃত তানবিজ উদ্দিন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র্যাবকে এবং উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, আন্দরকিল্লার অঙ্কুর প্রিন্টার্স থেকে জাল নোটগুলো সংগ্রহ করেছেন। শুটিংয়ের জন্য এগুলো ছাপানো। সম্প্রতি একটি চিপস কোম্পনির কাছে কিছু জাল নোট সরবরাহও করেছেন। বিক্রির জন্য দারাজে তার পণ্য (জাল নোট) লিস্টেড।
তবে র্যাব জানায়, জাল নোট ছাপানোর কোনো রুলস নেই। বড় একটি সিন্ডিকেট এ জাল নোট ছাপানো এবং ছড়িয়ে দেয়ায় জড়িত। সিলেট থেকে গতকাল এ রকম সিন্ডিকেটকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারাও চট্টগ্রামের বিষয়ে তথ্য দিয়েছে।
র্যাব–৭ এর অধিনায়ক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ধরা পড়ার পর একজন অপরাধী বিভিন্ন প্রকার ব্যাখ্যা দিয়ে থাকে। সে দাবি করছে, সে দারাজে (ই–কমার্স সাইট) দিত। শুটিংয়ের জন্য ছাপিয়েছে। তবে তাকে কোন নাটকে বা সিনেমায় এটা ব্যবহার হয়েছে বলতে বললে সে জানাতে পারেনি।
তিনি বলেন, এটা বড় একটা সিন্ডিকেটের কাজ। সকালে সিলেট থেকে এই সিন্ডিকেটের বড় একটা গ্রুপকে ধরা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদেও জানা যায়, চট্টগ্রামে আছে। অবশ্য এমনিতেই গোপন সূত্রে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এটা নিয়ে কয়েকদিন কাজ করছিলাম। এখন দুটো তথ্য যখন মিলে যায় তখন আরো কনফার্ম হয়ে অভিযান চালাই।
তিনি বলেন, জাল টাকা কোনো অবস্থাতেই তৈরি করতে পারে না। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন আছে কিনা বা এ সংক্রান্ত কাগজ আছে কিনা জানতে চাই। কিন্তু সে (তানবিজ) দেখাতে পারেনি। সে মানি এঙচেঞ্জের একটা লাইসেন্স নিয়েছে। কিন্তু মানি এঙচেঞ্জ হবে অরিজিনাল নোটের।
কী বলছেন আটক তানবিজ : আটক মো. তানবিজ উদ্দিন উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, আমি ছাপাতাম না। সবগুলো আন্দরকিল্লার অংকুর প্রিন্টার্স থেকে নেয়া। যেহেতু এখানে শুটিং পারপাস লেখা আছে তাই আমার কাছে এগুলো জাল টাকা নয়। তারপরও যেহেতু এগুলো ছাপানোর কোনো রুলস নেই, তাই এগুলোকে জাল টাকা বলা যেতে পারে। তিনি বলেন, প্রতিটি বান্ডিল ৩০ টাকা করে বানায়, ৬০০ টাকা করে বিক্রি করি। প্রতি বান্ডিল এক হাজার টাকা করেও লিস্ট করা আছে। এখানে প্রতি বান্ডিলে আমার ৯৭০ টাকা করে মার্জিন আছে।
তানজিব শুটিংয়ের কথা বললেও জব্দকৃত বেশিরভাগ জাল নোটে শুটিং লেখা ছিল না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এগুলো একটা চিপসের কোম্পানির অর্ডার ছিল। এখানে জাস্ট নমুনা টাকা দিয়ে একটা সিল হওয়ার কথা ছিল। অলরেডি ডেলিভারি দিয়ে দিয়েছি। এখানে ওয়েস্টেজগুলো রয়েছে। সামনে পেছনে দেখবেন প্রিন্ট কোয়ালিটি ঠিক নেই।