দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবশেষে কক্সবাজার বিমান বন্দরকে ‘আন্তর্জাতিক’ ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। গতকাল সোমবার বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব আহমেদ জামিলের সই করা এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়। এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে চলতি মাসেই কক্সবাজার বিমান বন্দর থেকে সরাসরি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচল শুরু হবে বলে জানিয়েছে বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘দ্য সিভিল অ্যাভিয়েশন রুলস, ১৯৮৪’–এর রুল ১৬–এর সাব–রুল (১)-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার কক্সবাজার বিমানবন্দরকে ‘কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। জনস্বার্থে জারিকৃত এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।’ সরকারের এ ঘোষণার ফলে দেশে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সংখ্যা দাঁড়ালো চারটিতে। বর্তমানে রাজধানী ঢাকা, বন্দরনগরী চট্টগ্রাম ও সিলেট বিমান বন্দর থেকে সরাসরি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচল করে।
বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মোস্তফা মাহমুদ সিদ্দিক জানান, এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে চলতি মাসেই কক্সবাজার বিমান বন্দর থেকে আন্তর্জাতিক রুটে বিমান চলাচল শুরু হবে। এনিয়ে একটি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানও হবে। অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস উপস্থিত থাকবেন।
বেবিচক এর একটি সূত্র জানিয়েছে, ২৪ অক্টোবর কিংবা এরপর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হতে পারে। আজ মঙ্গলবার বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। প্রাথমিকভাবে কক্সবাজার–ঢাকা–কলকাতা রুটে সরাসরি ফ্লাইট চালুর মধ্য দিয়েই কক্সবাজার বিমান বন্দরে আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল শুরু হবে। এরপর মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সাথে সরাসরি ফ্লাইট চালু হবে।
কক্সবাজার বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানান, ‘আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনার জন্য কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন সুবিধা প্রস্তুত রয়েছে। সামান্য কিছু কাজ বাকি থাকলেও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালুর জন্য কোনো সমস্যা হবে না।
কক্সবাজার শহরের কেন্দ্রস্থল পৌরসভা ও জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কক্সবাজার এয়ারপোর্ট থেকে রাজধানী ঢাকার দূরত্ব ৩৯৬ কিলোমিটার। আকাশপথে কক্সবাজার থেকে ঢাকায় যেতে সময় লাগে ৪০ থেকে ৫০ মিনিট আর স্থলপথে যেতে সময় লাগে ৯ থেকে ১০ ঘন্টা।
বর্তমানে ঢাকা থেকে কক্সবাজার বিমানবন্দরে দিনে ১৯টি ফ্লাইট পরিচালিত হয়। এর মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ৪টি, ইউএস–বাংলা এয়ারলাইন্স ৭টি, নভোএয়ার ৩টি এবং এয়ার অ্যাস্ট্রা ৫টি ফ্লাইট পরিচালনা করে। বিমানবন্দরে প্রথম ফ্লাইটটি অবতরণ করে সকাল ৮টা ৩৫ মিনিটে। কক্সবাজার থেকে ঢাকার উদ্দেশে সর্বশেষ ফ্লাইটটি রাত ৮টা ৩৫ মিনিটে ছেড়ে যায়।
উল্লেখ্য, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে জরুরি যুদ্ধ বিমান ওঠা–নামার জন্য তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদী ও সাগর তীরবর্তী ২৩০ একর জমিতে গড়ে তোলে কক্সবাজার বিমান বন্দর। পরে ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান আমলে কক্সবাজার বিমান বন্দরকে অভ্যন্তরীন বিমান চলাচলের উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়। স্বাধীনতার পরে কয়েক ধাপে উন্নয়নের পর এই বিমান বন্দরকে ২০১৭ সালে ‘আন্তর্জাতিক’ মানে উন্নীত করা হয়। ২০১৯ সালে সরকার ১ হাজার ৫৬৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকার দ্বিতীয় পর্যায়ের একটি প্রকল্প হাতে নেয়। এরপর ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে রানওয়ের দৈর্ঘ্য সম্প্রসারণ করে ১০,৭০০ ফুটে উন্নীত করার জন্য বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) চীনের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডের (সিসিইসিসি) সঙ্গে চুক্তি করে। প্রকল্পের আওতায় রানওয়ের জন্য সমুদ্র থেকে প্রায় ৫২০ মিটার (১৭০৬ ফুট) ভূমি পুনরুদ্ধার করতে হয় এবং বিমানের অবতরণের সুবিধার্থে আরও ৬০০ মিটারে (১৯৬৮ ফুট) লাইট স্থাপন করা হয়।
বর্তমানে দেশের দীর্ঘতম রানওয়ে রয়েছে কক্সবাজার বিমানবন্দরে। রানওয়েটির দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ১০ হাজার ৭০০ ফুট। আর রাজধানী ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ের বর্তমান দৈর্ঘ্য প্রায় ১০ হাজার ৫০০ ফুট।