মূল বেতনের ২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন ভাতা বাড়ানোর দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান নেওয়া এমপিওভুক্ত শিক্ষক–কর্মচারীদের লক্ষ্য করে সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে পুলিশ। গতকাল রোববার দুপুর ২টার দিকে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দিয়ে পরপর কয়েকটি সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়া হয়। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী একজন জানিয়েছেন, আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হওয়ার মধ্যে প্রেস ক্লাবের সামনে জলকামানও ব্যবহার করা হয়। ঘটনার পর সকাল থেকে আটকে থাকা সড়কটি সচল হয়। এদিকে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচির অংশ হিসাবে রাতেও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান করেছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক–কর্মচারীরা। আর আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদে কর্মবিরতি কর্মসূচি একদিন এগিয়ে আজ সোমবার থেকে পালন করার ঘোষণা দিয়েছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক–কর্মচারীরা। শিক্ষকরা বলছেন, কর্মবিরতির সঙ্গে ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তাদের লাগাতার অবস্থান কর্মসূচিও চলবে। খবর বিডিনিউজের।
দুপুর ১টা ৫৫ মিনিটে পুলিশের তরফে আন্দোলনকারীদের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে চলে যেতে বলা হয়। তখন আন্দোলনকারীদের একটি অংশ তা মানতে রাজি হয়নি। তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ‘ভুয়া, ভুয়া’ স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায় পুলিশ ধাওয়া দিয়ে সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদুনে গ্যাস ছোড়ে। এরপর সেগুনবাগিচা সড়ক, তোপখানা সড়ক, সার্ক ফোয়ারাতে পুলিশ অবস্থান নেয়।
পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মো. মাসুদ আলম বলেন, আন্দোলনকারীদের মূল অংশ শহীদ মিনারে চলে গেলেও একটি অংশ সড়ক বন্ধ করে অবস্থান করছিল। তাদেরকে বারবার সড়ক ছেড়ে দিতে অনুরোধ করলেও তারা সড়ক ছাড়ছিল না। এ কারণে আমরা তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছি। কাউকে আটক করা হয়েছে কিনা, এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কয়েকজন উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করছিল, এমন ৩–৪ জনকে আমরা আটক করেছি। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদেরকে ছেড়ে দেব।
আন্দোলনকারীদের নেতা এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব দেলাওয়ার হোসেন আজিজী দুপুরে বলেন, প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে আমরা প্রেস ক্লাবের সামনের সড়ক ছেড়ে দিয়েছি। আমরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি চালাব। সব শিক্ষক–কর্মচারীকে শহীদ মিনারে এসে অবস্থান নেওয়ার অনুরোধ করছি।
আজ থেকেই কর্মবিরতির ডাক : কর্মবিরতি কর্মসূচি একদিন এগিয়ে আজ সোমবার থেকে পালন করার ঘোষণা দিয়েছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক–কর্মচারীরা। আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদে এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলছেন তারা। শিক্ষকরা বলছেন, কর্মবিরতির সঙ্গে ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তাদের লাগাতার অবস্থান কর্মসূচিও চলবে।
গতকাল বিকালে শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচিতে এ ঘোষণা দেন এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী। তিনি বলেন, ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া, ১ হাজার ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা এবং ৭৫ শতাংশ উৎসব ভাতার প্রজ্ঞাপন না হওয়া পর্যন্ত শ্রেণিকক্ষে ফিরব না। আজ যে পুলিশি হামলা হয়েছে, আমরা তার তীব্র নিন্দা জানাই। আমাদের কয়েকজন সহকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, আমরা অবিলম্বে তাদের নিঃশর্ত মুক্তি চাই।
রাতেও শহীদ মিনারে শিক্ষকরা : লাগাতার অবস্থান কর্মসূচির অংশ হিসাবে গতকাল রাতেও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান করেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক–কর্মচারীরা। আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদে আজ থেকে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লাগাতার কর্মবিরতি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের ব্যানারে শিক্ষক–কর্মচারীরা এ কর্মসূচি পালন করছেন। দাবি মেনে নিলে রাতেই শহীদ মিনার ছেড়ে চলে যাবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়।
শিক্ষকদের বাড়ি ভাড়া মূল বেতনের ২০ শতাংশ করা, শিক্ষক–কর্মচারীদের চিকিৎসা ভাতা ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫০০ টাকা করা এবং কর্মচারীদের উৎসব ভাতা মূল বেতনের ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭৫ শতাংশ করার দাবিতে গতকাল সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষক–কর্মচারীরা। ৩০ সেপ্টেম্বর এমপিওভুক্ত শিক্ষক–কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ৫০০ টাকা বাড়িয়েছে সরকার। তবে ৫ অক্টোবর এই ঘোষণা প্রকাশ্যে এলে শিক্ষকরা তা প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনের ডাক দেন। এরপর ৬ অক্টোবর এমপিওভুক্ত শিক্ষক–কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া ভাতা অন্তত দুই হাজার বা তিন হাজার টাকা করার প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এমপিওভুক্ত শিক্ষক–কর্মচারীরা জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী বেতন পান। তারা মূল বেতনের সঙ্গে মাসে ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান। আর ১ হাজার টাকা বাড়িভাড়া ভাতা পেতেন, যা বাড়িয়ে ১৫০০ টাকা করা হয়েছে। এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা আগে বছরে ২৫ শতাংশ হারে বছরে দুটি উৎসব ভাতা পেলেও গত মে মাসে বাড়ানোর পর তারা ও এমপিওভুক্ত কর্মচারীরা মূল বেতনের ৫০ শতাংশ হারে উৎসব ভাতা পাচ্ছেন।