দক্ষ শ্রমশক্তি রপ্তানিতে মনোযোগ দিতে হবে

| শনিবার , ১১ অক্টোবর, ২০২৫ at ১০:৪৬ পূর্বাহ্ণ

দৈনিক আজাদীতে গত ৭ অক্টোবর প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে প্রথমবারের মত দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করল মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশ সৌদি আরব, যা বাংলাদেশের শ্রম বাজারের সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরবে ১৯৭৬ সাল থেকে অনানুষ্ঠানিকভাবে কর্মী নিয়োগ শুরু হলেও সাধারণ কর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত কোনো আনুষ্ঠানিক চুক্তি ছিল না। কেবল ২০১৫ সালে গৃহকর্মী নিয়োগ এবং ২০২২ সালে দক্ষতা যাচাই সংক্রান্ত দুটি বিশেষ চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল বলে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য।

নতুন এই চুক্তির ফলে বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে বিভিন্ন পেশায় দক্ষ কর্মী নিয়োগ বৃদ্ধি পাবে এবং কর্মী ও নিয়োগকর্তার অধিকার ও স্বার্থ ‘অধিকতর সুরক্ষিত’ হবে বলে আশা করছে সরকার। মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত সোমবার সৌদি আরবের রিয়াদে বাংলাদেশের পক্ষে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এবং সৌদি আরবের পক্ষে মানব সম্পদ ও সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রী আহমেদ বিন সোলাইমান আলরাজী চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তি ‘ভ্রাতৃপ্রতিম উভয় দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরো শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে’ বলে আশা করছে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়।

বর্তমানে সৌদি আরবে বিদেশিদের কর্মসংস্থানের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। সরকারি হিসেবে ৩০ লাখের বেশি বাংলাদেশি বর্তমানে সৌদি আরবের বিভিন্ন খাতে কাজ করছেন। তবে বৈধ অবৈধ মিলিয়ে এই সংখ্যা ৩৫ লাখের মত বলে ধারণা করা হয়।

দেশের অর্থনীতিতে প্রবাসী আয়ের গুরুত্ব ও অবদানের কথা সর্বজনবিদিত। এই প্রবাসীরাই দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছেন। এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ প্রবাসে রয়েছে। তাদের পাঠানো অর্থ দিয়েই বাংলাদেশ নতুন গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রে পণ্য রপ্তানি খাত সবার শীর্ষে থাকলেও সার্বিক বিচারে জাতীয় অর্থনীতিতে এ খাতের অবদান তথা মূল্য সংযোজনের হার তুলনামূলকভাবে কম। কারণ পণ্য রপ্তানি বাবদ যে অর্থ উপার্জিত হয় এর একটি বড় অংশই কাঁচামাল আমদানিতে চলে যায়। কিন্ত জনশক্তি রপ্তানি খাত এমনই এক অর্থনৈতিক খাত যার উপার্জিত বৈদেশিক মুদ্রার পুরোটাই জাতীয় অর্থনীতিতে মূল্য সংযোজন করে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, একটি দেশের অদক্ষ, অশিক্ষিত, বেকার ও কর্মক্ষম বিহীন জনগণকে উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরিত করে বহির্বিশ্বে অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা করার লক্ষ্যে প্রেরণ করা লোকেরা হলো দক্ষ জনশক্তি। দক্ষ জনশক্তি সৃজন একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া যা সংবিধিবদ্ধ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সুসম্পন্ন করা হয়। যেকোনো দেশের উন্নয়নের মূল ভিত্তি হচ্ছে দক্ষ জনশক্তি এবং দক্ষ জনশক্তিই পারে রাষ্ট্রের ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে অর্থনীতির চালিকাশক্তিকে সচল রাখতে। দক্ষ জনশক্তি প্রভূতভাবে রাষ্ট্রের উন্নয়ন কাজকে ত্বরান্বিত করতে যথেষ্ট সহায়তা করে। তাই একটি আদর্শ রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তুলতে দক্ষ জনশক্তির কোনো বিকল্প নেই। অদক্ষ জনগণের মাঝে কর্মক্ষম মনোবৃত্তি ও কর্ম স্পৃহা সৃষ্টি করে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন সাধন করাই হচ্ছে দক্ষ জনশক্তি গঠন করার মুখ্য উদ্দেশ্য।

বলা যায়, এখন শ্রমবাজার একে একে খুলতে শুরু করেছে। সৌদি আরব যদি আগের মতোই জমজমাট হয়, তাহলে এর ফল আশানুরূপ হবে বলে আশা করি। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর সংযুক্ত আরব আমিরাত শ্রমিক নেওয়া শুরু করেছে। সেখানে একটা বড় সুখের খবর। ফলে জনশক্তি রফতানির বাজার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বলা যায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরবসহ যে সব দেশে বাংলাদেশের শ্রমশক্তির চাহিদা বেশি, সেসব দেশে কূটনৈতিক যোগাযোগের মাধ্যমে দ্রুত আমলাতান্ত্রিক বাধাগুলো দূর করা জরুরি। তাছাড়া, আমাদের এখন নতুন শ্রমবাজার খুঁজে বের করতে হবে এবং দক্ষ শ্রমশক্তি রপ্তানিতে মনোযোগ দিতে হবে। তাঁরা বলছেন, বৈদেশিক কর্মসংস্থানের দিক থেকে পার্শ্ববর্তী অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ যথেষ্ট পিছিয়ে আছে। এর একটি প্রধান কারণ দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে আমাদের পিছিয়ে থাকা। এ ক্ষেত্রে আরো উদ্যোগী হতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে