দীর্ঘ সময় পর অবশেষে স্বাভাবিক হয়েছে রেডিও আয়োডিন ক্যাপসুলের সরবরাহ। গত প্রায় চার সপ্তাহ ধরে সরবরাহ স্বাভাবিক হওয়ায় থাইরয়েড ক্যান্সারের রোগী ও স্বজনদের মধ্যে স্বস্তি এসেছে। এর আগে রেডিও আয়োডিন ক্যাপসুলের সংকটের কারণে চট্টগ্রাম ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড অ্যালায়েড সায়েন্সে (ইনমাস) এসে ফেরত যেতেন রোগীর স্বজনেরা। তবে ইনমাস চট্টগ্রামের চিকিৎসকরা বলছেন, রেডিও আয়োডিন ক্যাপসুলটি বাংলাদেশ পরামাণু শক্তি কমিশন আমদানি করে। আমরা তাদের চাহিদা দিয়ে থাকি। তবে দীর্ঘ সময় ধরে আমদানিতে জটিলতা থাকার কারণে রোগীদের চাহিদা মতো সেই ক্যাপসুলটি দেয়া সম্ভব হয়নি। তবে এখন সেই সংকট কেটে গেছে। এখন রোগীদের প্রয়োজন মতো আমরা ক্যাপসুলটি আমরা দিতে পারছি।
জানা গেছে, থাইরয়েডের সার্জারির পর রোগীরা ইনমাসে নিবন্ধন করে। পরে চিকিৎসকরা যাচাই বাছাই করে ওষুধটি খেতে দেন। ওষুধটির খাওয়ার পর রোগীকে হাসপাতালে পাঁচদিন একটি আবদ্ধ কক্ষে থাকতে হয়। সেখানে কেউ প্রবেশ করতে পারে না। কারণ এই ওষুধের মধ্যে রেডিয়েশন থাকার কারণে অন্যরাও আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের এই ধরনের রোগীদের জন্য কেবিন আছে মাত্র একটি। যার কারণে অনেক দরিদ্র রোগীদের পক্ষে ১৫–২০ হাজার টাকা খরচ করে বেসরকারি হাসপাতালে ওষুধটি নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে সময় মতো ওষুধটি নিতে না পারায় অনেক রোগীদের মধ্যে পুনরায় ক্যান্সার ফিরে আসার ঝুঁকি রয়েছে বলেও জানান নাক, কান ও গলা রোগ বিভাগের চিকিৎসকরা।
চমেক হাসপাতালের নাক, কান ও গলা রোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সঞ্জয় দাশ দৈনিক আজাদীকে বলেন, থাইরয়েডের সার্জারির পর এক ডোজের এই রেডিও আয়োডিন ক্যাপসুলটি রোগীদের দিতে হয়। মাঝখানে অনেকদিন ক্যাপসুলের সংকটের কারণে রোগীরা এই থেরাপি নিতে পারেনি। তবে এখন ক্যাপসুলের সরবরাহ স্বাভাবিক হওয়ায় রোগীরাও উপকৃত হবে। আমাদের ওয়ার্ডে প্রতি মাসে গড়ে ১০ থেকে ১৫ জন থাইরয়েড ক্যান্সারের রোগী ভর্তি থাকে। থাইরয়েড ক্য্যান্সারের রোগীদের সার্জারির পর এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে রেডিও আয়োডিন ক্যাপসুলটি দিতে হয়। চিকিৎসা অসম্পূর্ণ হলে এই ক্যান্সার পুনরায় ফিরে আসতে পারে।
নগরীর মুরাদপুর এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ সোলায়মান বলেন, আমার স্ত্রীর থাইরয়েডের ক্যান্সার হয়েছিল। সার্জারির পর অনেকদিন পর অপেক্ষা করে এই রেডিও আয়োডিন ক্যাপসুলটি নিতে পারিনি। গত সপ্তাহে আমার স্ত্রী ক্যাপসুলটি পেয়েছে। শেষ পর্যন্ত ক্যাপসুলটি পেয়েছি– এতে আমাদের স্বস্তি।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ইনমাসের পরিচালক অধ্যাপক ডা. পবিত্র ভট্টাচার্য্য দৈনিক আজাদীকে বলেন, গত চার সপ্তাহ ধরে আমাদের কাছে পর্যাপ্ত রেডিও আয়োডিন ক্যাপসুল আসছে। আমাদের এখন ক্যাপসুলের কোনো সংকট নেই। গত সপ্তাহেও ১২ জন রোগীকে দিয়েছি। এই সপ্তাহে আগামীকাল (আজ) ১০ জনকে দিব। আগামী এক বছরেও ক্যাপসুলের সংকট হবে না আশা করি।