‘মেটাল–অর্গানিক ফ্রেমওয়ার্ক’ বা এমওএফ–এর উন্নয়ন ঘটিয়ে রসায়নের নিয়ম ‘নতুন করে লিখে’ তিন বিজ্ঞানী পাচ্ছেন চলতি বছরের রসায়নের নোবেল। রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস গতকাল বুধবার এ পুরস্কারের জন্য জাপানের সুসুমু কিতাগাওয়া, অস্ট্রেলিয়ার রিচার্ড রবসন এবং যুক্তরাষ্ট্রের ওমর এম ইয়াগির নাম ঘোষণা করে।
এমন এক ধরনের আণবিক কাঠামো তারা তৈরি করেছেন, যার ভেতরে রয়েছে বিশাল ফাঁকা স্থান, যার মধ্য দিয়ে গ্যাস ও অন্যান্য রাসায়নিক প্রবাহিত হতে পারে। এই গঠনগুলোকে বলা হয় মেটাল–অর্গানিক ফ্রেমওয়ার্ক। নোবেল কমিটির ভাষায়, তাদের কাজ রসায়নের ব্যাকরণ ‘নতুন করে লেখার’ সমতুল্য। এ ধরনের রাসায়নিক কাঠামোর মাধ্যমে মরুভূমির বাতাস থেকে পানি আহরণ করা যায়, কার্বন ডাই–অঙাইড শোষণ করা যায়, বিষাক্ত গ্যাস সংরক্ষণ করা যায় কিংবা রাসায়নিক বিক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করা সম্ভব। খবর বিডিনিউজের।
নোবেল কমিটি বলছে, এই তিন নোবেলজয়ীর যুগান্তকারী আবিষ্কারের পর রসায়নবিদরা হাজার হাজার ভিন্ন ধরনের মেটাল–অর্গানিক ফ্রেমওয়ার্ক বা এমওএফ তৈরি করেছেন, যেগুলো মানবজাতির বড় কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। নোবেল পুরস্কারের সংবাদ সম্মেলন থেকে যোগাযোগ করা হলে কিতাগাওয়া তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এই পুরস্কার পেয়ে ‘অত্যন্ত সম্মানিত’ বোধ করছেন তিনি। বলেন, আমার স্বপ্ন, বাতাসকে ধরে তা থেকে কার্বন ডাই–অঙাইড, অঙিজেন বা পানির মত উপাদান আলাদা করা এবং পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ব্যবহার করে সেগুলোকে কাজে লাগানো যায়–এমন উপাদানে রূপান্তর করা।
নোবেল কমিটি বলেছে, এমওএফ এর অতিরিক্ত কিছু ব্যবহার রয়েছে, যেমন–পানি থেকে ক্ষতিকর পিএফএএস বা ‘চিরস্থায়ী রাসায়নিক’ পদার্থ আলাদা করা এবং পরিবেশে থাকা ওষুধজাত পদার্থের অবশিষ্টাংশ ভেঙে ফেলার মতো বিষয়। ‘পিএফএএস’ এক ধরনের মানবসৃষ্ট রাসায়নিক। এদেরকে ‘চিরস্থায়ী রাসায়নিক’ বলার কারণ, এগুলো রাসায়নিক পরিবেশে সহজে ভাঙে না এবং মানুষ ও প্রাণীদের দেহে জমা হয়। পাশাপাশি এগুলো খাবার, পানি ও বাতাসে ছড়িয়ে পড়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
তিন গবেষকের মধ্যে কিতাগাওয়া জাপানের ‘কিয়োটো ইউনিভার্সিটি’র অধ্যাপক। রবসন অস্ট্রেলিয়ার ‘ইউনিভার্সিটি অব মেলবোর্ন’–এর অধ্যাপক এবং ইয়াগি যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলে’–এর অধ্যাপক। রবসন ব্রিটেনে জন্মগ্রহণ করলেও পরে অস্ট্রেলিয়ায় চলে যান। আর ইয়াগি জর্ডান ও আমেরিকার দ্বৈত নাগরিক। নোবেল পুরস্কারের এক কোটি ১০ লাখ সুইডিশ ক্রোনার সমানভাবে ভাগ করে নেবেন তিন বিজ্ঞানী।
আজ বৃহস্পতিবার আসবে সাহিত্যের নোবেল ঘোষণা। এরপর শুক্রবার শান্তি এবং আগামী ১৩ অক্টোবর অর্থনীতিতে এবারের নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হবে।