বিএনপি নেতাকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় ৪ সন্দেহভাজন আটক

আক্রান্ত প্রাইভেট কার থেকে নগদ সাড়ে আট লাখ টাকা উদ্ধার

হাটহাজারী ও রাউজান প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ৯ অক্টোবর, ২০২৫ at ৬:১১ পূর্বাহ্ণ

হাটহাজারী উপজেলার মদুনাঘাট এলাকায় ফিল্মি স্টাইলে রাউজানের ব্যবসায়ী বিএনপি নেতা আব্দুল হাকিমকে (৫৪) গুলি করে হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ৪ জনকে আটক করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলের দিকে হাটহাজারী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনজুর কাদের ভূঁইয়া ৪ জনকে আটকের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করলেও তাদের পরিচয় জানাননি। তিনি জানান, মঙ্গলবার দিবাগত রাতে রাউজান উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে চার সন্দেহভাজনকে আটক করা হয়। তারা হত্যার ঘটনায় জড়িত কিনা তা জিজ্ঞাসাবাদ করে বের করার চেষ্টা চলছে। জড়িত থাকার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেলে তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হবে। গতরাত ১১টার দিকে এই প্রতিবেদন লেখার সময় মামলার ব্যাপারে জানতে চাইলে ওসি বলেন, থানায় এখনও মামলা হয়নি। তবে নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

জানা যায়, নিহত আবদুল হাকিম দুই কন্যা ও এক পুত্র সন্তানের বাবা ছিলেন। বিএনপি নেতা গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর আস্থাভাজন হিসাবে পরিচিত ছিলেন এই ব্যবসায়ী। ব্যক্তিগত যে গাড়িতে তাকে হত্যা করা হয়েছে ঘটনার পর সেখান থেকে পুলিশ নগদ সাড়ে আট লাখ টাকা উদ্ধার করেছে বলে জানা গেছে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্টিল শোরুমের মালিক দিদারুল আলম ও রেস্টুরেন্ট কর্মচারী আল আমিন জানান, হেলমেট পরা তিনজন অস্ত্রধারী যুবক হাকিমের গাড়িকে লক্ষ্য করে কয়েক মিনিট ধরে গুলি ছুঁড়ে মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ গুলির চিহ্নসহ আব্দুল হাকিমের প্রাইভেটকারটি উদ্ধার করেছে। দুর্বৃত্তরা আব্দুল হাকিমের গাড়িটিতে ২২টি গুলি করে তাকে হত্যা করে। এ ঘটনায় তার চালক মুহাম্মদ ইসমাইলও (৩৮) গুলিবিদ্ধ হন। তিনি বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

এদিকে নিহত হাকিম নিজেদের কর্মী কি না, তা নিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের মধ্যে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। হত্যাকাণ্ডের পর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এক বিবৃতিতে দাবি করেছেন, আব্দুল হাকিম বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন এবং ঘটনাটি দুষ্কৃতকারীদের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের ফল। তবে তার এই বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন স্থানীয় নেতারা। হাকিমকে নিজের সমর্থক বলে স্বীকার করেছেন বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী। হাকিমের ভাই মুহাম্মদ পারভেজও জানিয়েছেন, তার ভাই গিয়াস উদ্দিন কাদেরের সঙ্গেই রাজনীতি করতেন। রিজভীর বিবৃতির বিপরীতে হাকিম হত্যার প্রতিবাদে গতকাল বুধবার রাউজানের নোয়াপাড়া পথেরহাট ও মুন্সির ঘাটায় প্রতিবাদ মিছিল করেছে স্থানীয় বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।

দাফনকাফন : গত মঙ্গালবার সন্ধ্যার আগে মদুনাঘাটে নিজ গাড়ির ভিতর অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীদের ব্রাশ ফায়ারে নিহত হাকিম আলীকে গতকাল বুধবার বিকালে গ্রামের বাড়ি পাঁচখাইনে নামাজে জানাজার পর সামাজিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। জানাজায় অংশগ্রহণ করেন সাবেক সংসদ সদস্য বিএনপি নেতা গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী, তার ছেলে সামির কাদের চৌধুরীসহ বিএনপির অনেক নেতাকর্মী।

উল্লেখ্য, বিএনপি নেতা গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর আস্থাভাজন হিসাবে পরিচিত ব্যবসায়ী আব্দুল হাকিম গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার আগে নিজ প্রাইভেট গাড়িতে শহরে যাওয়ার পথে হেলমেট পরা অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীদের ব্রাশ ফায়ারে খুন হন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহাকিম কি বিএনপির কর্মী ছিলেন স্থানীয়রা কে, কী বলছেন
পরবর্তী নিবন্ধশিপিং এজেন্টস অ্যাসোর নির্বাচন ও প্রশাসক নিয়োগের ওপর হাইকোর্টের স্থিতাবস্থা