বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে তিনি অংশ নেবেন। আর ভোটের সময় তিনি দেশেই থাকবেন বলে আশা করছেন। বিবিসি বাংলার এক সাক্ষাৎকারে তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তিনি কবে দেশে ফিরছেন? উত্তরে তিনি বলেন, দ্রুতই মনে হয়। দ্রুতই ইনশাআল্লাহ। তার কাছে আবারও জানতে চাওয়া হয়েছিল, নির্বাচনের আগে তিনি দেশে থাকবেন কিনা? তারেক রহমান উত্তরে বলেন, রাজনীতি যখন করি, একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে স্বাভাবিক, নির্বাচনের সাথে রাজনৈতিক দল, রাজনৈতিক কর্মীর ওতপ্রোত সম্পর্ক। কাজেই যেখানে একটি প্রত্যাশিত, জনগণের প্রত্যাশিত নির্বাচন হবে, সেই নির্বাচনের সময় কেমন করে দূরে থাকব? আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে, ইচ্ছা থাকবে, আগ্রহ থাকবে সেই প্রত্যাশিত, যে প্রত্যাশিত নির্বাচন জনগণ চাইছে, সেই প্রত্যাশিত নির্বাচন যখন অনুষ্ঠিত হবে, জনগণের সাথে জনগণের মাঝেই থাকব ইনশাআল্লাহ।
বিবিসি বাংলা জানতে চেয়েছিল, নির্বাচনে তারেক রহমান অংশ নেবেন কিনা? এবারও তিনি বলেন, জি, ইনশাআল্লাহ। তারেক রহমানের সঙ্গে বিবিসি বাংলার সাক্ষাৎকারের প্রথম পর্ব গতকাল সোমবার সকালে প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমটি। এতে দেশে ফেরা, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব, নির্বাচনি কৌশল, বিএনপির মনোনয়নের মানদণ্ড, জামায়াতের সম্ভাব্য জোট, আওয়ামী লীগের রাজনীতির মতো বিষয়ের পাশাপাশি চাঁদাবাজি, দখলের মতো অভিযোগ নিয়ে কথা বলেছেন এ তিনি। সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় পর্ব প্রকাশ হবে আজ মঙ্গলবার সকালে। ২০০৮ সাল থেকে লন্ডনে নির্বাসিত তারেক রহমান দেড় যুগের মধ্যে এই প্রথম কোনো সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিলেন। তারেক রহমানের কাছে বিবিসি বাংলার একটি প্রশ্ন ছিল, গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পেরোলেও তিনি দেশে ফেরেননি কেন? উত্তরে তিনি বলেন, কিছু সঙ্গত কারণে হয়তো ফেরাটা হয়ে উঠেনি এখনো। তবে সময় তো চলে এসেছে মনে হয়। ইনশাআল্লাহ দ্রুতই ফিরে আসব।
তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, আপনি কি কোনো ধরনের শঙ্কা বোধ করেছেন এর মধ্যে? উত্তরে তারেক বলেন, বিভিন্ন রকম শঙ্কার কথা তো আমরা অনেক সময় বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে শুনেছি। সরকারেরও বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে তো অনেক সময় অনেক শঙ্কার কথা বিভিন্ন মাধ্যমে, বিভিন্ন মিডিয়াতে প্রকাশিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর পদ, বিএনপির ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব প্রসঙ্গ : তারেক রহমানের কাছে প্রশ্ন ছিল, এবারের নির্বাচনে তিনি কি প্রধানমন্ত্রী পদ প্রত্যাশী? উত্তরে তিনি বলেন, আমার মনে হয় আপনি প্রথম দিকে বোধ হয় একটা প্রশ্ন করেছেন, আমি ওখানে বলেছিলাম আমি রাজনৈতিক দলের একজন সদস্য। একজন রাজনৈতিক কর্মী আমি। নির্বাচনের সাথে তো রাজনৈতিক দল এবং রাজনৈতিক কর্মীর ওতপ্রোত সম্পর্ক। একটি নির্বাচন হবে, সেখানে তো অবশ্যই আমি নিজেকে দূরে রাখতে পারব না। আমাকে আসতেই হবে। স্বাভাবিকভাবেই মাঠে ইনশাআল্লাহ থাকব আমি। আপনার প্রশ্নের পরের যে অংশটি ছিল, দেখুন আমি মনে করি এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জনগণের। এটি তো আমার সিদ্ধান্ত না।
তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেন? উত্তরে তারেক বলেন, এটি আমি এখনো বলতে পারছি না। আমি মাত্রই বললাম যে উনার শারীরিক বা ফিজিক্যাল এবিলিটির উপরে বিষয়টি কিছুটা হলেও নির্ভর করছে। তারেক রহমানের কাছে জানতে চেয়েছিল, আপনার বাবা সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আপনার মা সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া তিনি চার দশক বিএনপির নেতৃত্ব দিয়েছেন। এখন আপনি কার্যত দলের নেতৃত্বে রয়েছেন। বিএনপির ভবিষ্যৎ নেতৃত্বে পরিবারের প্রভাব কতটা থাকবে?
উত্তরে তিনি বলেন, দেখুন, বিষয়টিকে আমি একটু অন্যভাবে উপস্থাপন করি। সব রকম, সকলের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই আমি বলতে চাইছি। দেখুন, একজন চিকিৎসকের সন্তান যখন চিকিৎসক হয় তখন সে ভালোও করে, খারাপও করে। একজন লয়ারের সন্তানও দেখা যায় যে অনেক সময় বাবা–মায়ের মতন ভালো লয়ার (আইনজীবী) হয় অথবা হয় না। রাজনীতিবিদদের ক্ষেত্রে অনেকের সন্তান পলিটিক্সে এসেছে। সবাই কি ভালো করেছে? সবাই ভালো করেনি। কেউ কেউ করেছে কেউ কেউ করতে পারেনি ভালো। আপনি যদি আমাকে ইঙ্গিত করে থাকেন, তাহলে এভাবে আমি বলব যে, দেখুন আমরা দেখেছি বাংলাদেশের মতন দেশে রাজনীতি যারা করেন বিগত ১৭ বছরে দেখেছি। আমরা দেখেছি রাজনীতিবিদরা রাজনীতি করতে গিয়ে বিভিন্নভাবে হ্যারাসমেন্টের শিকার হন। মিথ্যে মামলার শিকার হন। আমাদের বহু নেতাকর্মী শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। জেল জুলুম খেটেছেন। ঘরবাড়ি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। আপনি কি বলতে পারবেন এর কোনটার মধ্য দিয়ে আমি যাইনি? এর প্রতিটার ভেতর দিয়ে আমি গিয়েছি। আমি শারীরিকভাবে নির্যাতিত হয়েছি। যে নির্যাতনের চিহ্ন এখনো কখনো কখনো আমাকে সহ্য করতে হয়। জেল জুলুম খেটেছি আমি। বিভিন্নভাবে মিথ্যা অপপ্রচারের শিকার হয়েছি। সবকিছুর ভিতর দিয়েই আমি পেরিয়ে এসেছি। কাজেই এজন্য এই কথাগুলো বললাম যে, রাজনীতি পরিবারকরণ হয় না। এটি সমর্থনের ভিত্তিতে হয়। কাজেই যে অর্গানাইজ করে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে দলকে ঐক্যবদ্ধ করে সামনে এগিয়ে যেতে পারবে সে এগিয়ে যেতে পারবে। কেউ যদি এগিয়ে যেতে না পারে তাহলে সে এগিয়ে যেতে পারবে না। সময়, পরিস্থিতি সবকিছু প্রমাণ করে দিবে।
ভোট নিয়ে পরিকল্পনা কী : তারেক রহমানের কাছে প্রশ্ন ছিল, বিএনপি দলগতভাবে নাকি জোটবদ্ধভাবে আসন ভাগাভাগির মাধ্যমে নির্বাচন করবে? উত্তরে তিনি বলেন, খুব ট্রিকি কোশ্চেন একটু। দেখুন আমরা প্রায় ৬৪টি রাজনৈতিক দল বিগত স্বৈরাচারের সময় যার যার অবস্থান থেকে রাজপথে আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। আমরা চেষ্টা করেছিলাম কম–বেশি একসাথে কাজ করার জন্য। এমনকি আমরা যে ৩১ দফা দিয়েছি রাষ্ট্র পুনর্গঠনের, এটি প্রথমে ২০১৬ সালে দিয়েছিলাম শুধু বিএনপির পক্ষ থেকে। পরবর্তীতে ভিশন টুয়েন্টি ছিল। যেটা পরবর্তীতে কিছুটা ডেভেলপ করে আমরা ২৭ দফা দিয়েছিলাম। পরবর্তীতে আমরা আমাদের সাথে যে রাজনৈতিক দলগুলো আছে তাদের সাথে পরামর্শ করে সকলের মতামত নিয়ে ৩১ দফা দিয়েছি। কারণটি হচ্ছে, যে দলগুলোকে আমরা পেয়েছি আমাদের সাথে রাজপথের আন্দোলনে, আমরা চাই সকলকে সাথে নিয়ে রাষ্ট্র পুনর্গঠন করতে। সকলের মতামতকে সাথে নিয়ে আমরা রাষ্ট্র পুনর্গঠন করতে চাই।
তখন জানতে চাওয়া হয়, তাহলে যারা আন্দোলন করেছে তারাই মিত্র হচ্ছে? বিএনপি নেতা বলেন, ওই যে বললাম, কম–বেশি সকলকে নিয়ে আমরা রাষ্ট্র গঠন করতে চাই। বিবিসি বাংলার প্রশ্ন ছিল, বিভিন্ন নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে পেশিশক্তির প্রভাব, টাকার প্রভাব, পারিবারিক বিষয়কে আমলে নেওয়ার অভিযোগ আছে। এবার আসলেই কি ভিন্ন কিছু হবে?
উত্তরে তারেক বলেন, আপনি যে বিষয়গুলো বললেন, এইসব বিবেচনায় নিয়ে কখনোই আমার দল নমিনেশনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়নি। আমাদের নমিনেশনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত সবসময় কম–বেশি যা ছিল বা ভবিষ্যতে আমরা যেটিকে মূল্যায়ন করব সেটি হচ্ছে অবশ্যই কোনো একটি পার্টিকুলার এলাকা থেকে আমরা আমাদের দলের এমন একজন ব্যক্তিকে নমিনেশন দিতে চাইব, যে ওই এলাকার সমস্যা সম্পর্কে সচেতন আছে, যার সাথে ওই এলাকার মানুষের সম্পৃক্ততা আছে, ওঠাবসা আছে, যে ওই এলাকার মানুষের সমস্যা সমাধান করতে সক্ষম। এই ধরনের মানুষকেই আমরা প্রায়োরিটি দিব, খুবই স্বাভাবিক। জনগণের যার প্রতি সমর্থন আছে সে রকম মানুষকে দেখেই আমরা নমিনেশন দেব।
প্রসঙ্গ জামায়াতের সম্ভাব্য জোট : বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে প্রশ্ন ছিল, কিছু দলকে নিয়ে বিএনপি বিরোধী একটি জোট করার ইঙ্গিত দিচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। সেটিকে কি উদ্বেগ হিসেবে দেখেন? তারেক রহমান বলেন, দেখুন, কোনো দল বা সমষ্টিগতভাবে কোনো দল যদি বাংলাদেশের যে আইন আছে, বৈধ আইন আছে, বাংলাদেশের যে সংবিধান এখনো যেটি আছে এই সবকিছুর ভেতরে থেকে অর্থাৎ মানুষের সমর্থন, গ্রহণযোগ্যতা সবকিছুর ভেতরে থেকে যারা রাজনীতি করবে তারা করতেই পারে। এটাতে তো কোনো সমস্যা বা উদ্বেগের কোনো কারণ আমি দেখি না।
আরেকটি প্রশ্ন ছিল, জামায়াত আলাদা জোট করলে তা বিএনপির জন্য কি কোনো চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে? বিএনপি নেতা বলেন, না, কেন? ইলেকশন হলে তো ইলেকশনে প্রতিযোগিতা থাকতেই পারে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকতেই পারে। এতে উদ্বেগের কি আছে? বিএনপি তো আগেও নির্বাচন করেছে। বিভিন্ন সময় বিএনপি নির্বাচন করেছে। কম্পিটিশন করেই বিএনপি নির্বাচন করেছে। প্রতিযোগিতা করেছে। উদ্বেগের কিছু নেই।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে জামায়াতের বিরোধী ভূমিকা নিয়ে বিএনপি নেতারা এখন অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন। কিন্তু বিএনপি আবার তাদের সাথে সরকারও গঠন করেছিল একটা সময়? উত্তরে তারেক বলেন, ২০২৪ সালে স্বৈরাচার যে হত্যাগুলো করেছে দেশ স্বাধীনের পরে যখন তারা সরকার গঠন করেছিল, ক্ষমতায় ছিল, তখনো যে সকল লুট তারা করেছে, খুন–গুম তারা করেছে। বিগত ১৭ বছর গুম খুন যারা করেছে, এর জবাব যে রকম তাদেরকেই দিতে হবে, ঠিক একইভাবে ৭১ সালে কোনো রাজনৈতিক দলের যদি বিতর্কিত ভূমিকা থেকে থাকে, তাহলে তাদের জবাব তারাই দিবেন। ওটা তো আর আমি দিতে পারব না। আমারটা আমি দিতে পারব।
আওয়ামী লীগের রাজনীতি প্রসঙ্গে : তারেক রহমানকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, জুলাই গণ অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের ব্যাপারে বিএনপির অবস্থান আসলে কী? উত্তরে তিনি বলেন, দেখুন, আমি ১৭ বছর যাবত প্রবাস জীবনে আছি। ওয়ান ইলেভেন, তথাকথিত ওয়ান ইলেভেন সরকারের সময় যে শারীরিক নির্যাতন আমার উপরে হয়েছিল, তারপরে চিকিৎসার জন্য আমি এই দেশে আসি। আমি যখন এখানে আসি, আমার ভাইকে আমি রেখে এসেছিলাম, ছোট ভাইকে। আমি যখন এই দেশে আসি আমার সুস্থ মাকে রেখে এসেছিলাম। একটি ঘর রেখে এসেছিলাম। যে ঘরে আমি এবং আমার ছোট ভাই বড় হয়েছি। যে ঘরে আমার বাবার স্মৃতি ছিল। যে ঘরে আমাদের দুই ভাইয়ের সন্তানরা জন্মগ্রহণ করেছিল। যে ঘরে আমার মায়ের বহু স্মৃতি ছিল। সেই স্মৃতিগুলোকে ভেঙেচুরে ধুলায় মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। যে ভাইকে আমি রেখে এসেছিলাম সেই ভাই এখন আর নেই। যে সুস্থ মাকে রেখে এসেছিলাম সেই সুস্থ মা এখন সুস্থ নেই। শুধু অসুস্থই নন, উনার উপরে মানসিক এবং শারীরিক নির্যাতনও করা হয়েছে। আমি আমার পরিবারের যে কাহিনি আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম, এটিকে আপনারা কাহিনি বলুন বা সংগ্রাম বলুন, যেটাই বলুন না কেন, এটি শুধু আমার কাহিনি না বা আমার পরিবারের কাহিনি না। এ রকম কাহিনি বাংলাদেশের শত না, হাজার হাজার পরিবারের। যে পরিবারের বাবা, যে পরিবারের ভাই, যে পরিবারের স্বামী তার ঘরবাড়ি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে, হ্যান্ডকাফ পরা অবস্থায় হাসপাতালের বারান্দায় মারা গিয়েছে, তা না হলে হ্যান্ডকাফ পরা অবস্থায় জেলের ভিতরে মারা গিয়েছে, সহায় সম্পত্তি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। এই সকল অন্যায়, এই সকল হত্যা, এই সকল নির্যাতনের জন্য যারা দায়ী, যারা এসবের হুকুম দিয়েছে, তাদের প্রত্যেকের বিচার হতে হবে। এটি প্রতিশোধের কোনো বিষয় নয়। এটি ন্যায়ের কথা। এটি আইনের কথা। অন্যায় হলে তার বিচার হতে হয়। কার সম্পর্কে কী মনোভাব সেটি গুরুত্বপূর্ণ নয়।
আওয়ামী লীগ রাজনীতি করতে পারবে কি পারবে না? উত্তরে তারেক বলেন, দল হিসেবে তারা যদি অন্যায় করে থাকে তাহলে দেশের আইন অনুযায়ী তার বিচার হবে। দেশের আইন সিদ্ধান্ত নেবে। আবারও জানতে চাওয়া হয়, আওয়ামী লীগের কি বাংলাদেশের রাজনীতিতে থাকা উচিত নাকি না? বিএনপি নেতা বলেন, আপনার কোনো কোনো প্রশ্নের উত্তরে আমি মনে হয় বলেছিলাম যে, আমরা রাজনীতি করি জনগণের জন্য। আমরা বিশ্বাস করি এবং বিভিন্ন সময় বলিও, আমরা বিএনপি যারা করি আমাদের রাজনৈতিক সকল ক্ষমতার উৎস জনগণ। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এবং বিশ্বাস করতে চাই, যে দলের ব্যক্তিরা বা যে দল মানুষ হত্যা করে, মানুষ গুম করে, মানুষ খুন করে, দেশের মানুষের অর্থসম্পদ লুটপাট করে বিদেশে পাচার করে, জনগণ তাদেরকে সমর্থন করতে পারে বলে আমি মনে করি না। জনগণ যদি সমর্থন না করে কোনো রাজনৈতিক দল বা রাজনৈতিক সংগঠনকে, তাদের টিকে থাকার তো কোনো কারণ আমি দেখি না। যেহেতু জনগণের শক্তিতে আমরা বিশ্বাস করি, জনগণের সিদ্ধান্তে আমরা বিশ্বাস করি, জনগণের সিদ্ধান্তের উপরে আমরা আস্থা রাখতে চাই। এ বিষয়ে সবচেয়ে বড় বিচারক আমি মনে করি জনগণ।
অভ্যুত্থানের কৃতিত্ব কার? : প্রশ্ন ছিল, জুলাই অভ্যুত্থান কৃতিত্ব কার? সেটা নিয়ে বিভিন্ন পক্ষ দাবি করেছে। তাতে বিভিন্ন পক্ষের সংকীর্ণ স্বার্থ পূরণের চেষ্টাই কি প্রকট হয়েছে; এখানে বিএনপির আসলে কোনো দায় আছে কিনা? উত্তরে তারেক বলেন, দেখুন ব্যাপারটা আমরা যদি একটু অন্যভাবে দেখি, বাংলাদেশের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত এটি একটি অবিস্মরণীয় ঘটনা–এই আন্দোলন, মানুষের এই আত্মত্যাগ। সাধারণত কোনো রাজনৈতিক আন্দোলনে বা স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে শিশু হত্যা হয় না, শিশু শহীদ হয় না, শিশু মৃত্যুবরণ করে না। বাট আমরা দেখেছি এই আন্দোলনে যতটুকু আমার মনে আছে প্রায় ৬৩ জন শিশু শহীদ হয়েছে। আমি আগেই বলেছি, এই আন্দোলনের ক্রেডিট দল–মত নির্বিশেষে বাংলাদেশের জনগণের, কোনো একটি রাজনৈতিক দলের নয়। অনেকে হয়তো অনেক কিছু বলে থাকতে পারেন, ডিমান্ড করতে পারেন, সেটি তাদের অবস্থান। আমি বা আমার দলের অবস্থান হচ্ছে আন্দোলন হয়ে গিয়েছে। আন্দোলনের জনগণ সফলতা লাভ করেছেন। আন্দোলনে স্বাভাবিকভাবেই দুটো পক্ষ আছে। একটি পক্ষ হচ্ছে মানুষ শহীদ হয়েছে। দুই হাজারের মতো মানুষকে হত্যা করা হয়েছে আন্দোলনে। আবার আরেকটি পক্ষ হচ্ছে প্রায় ত্রিশ হাজারের মতন মানুষ বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন, অন্ধ হয়ে গিয়েছেন। আমার মনে হয়, আমাদের উচিত হবে রাষ্ট্রসহ, সরকারসহ রাজনৈতিক দলগুলোর যার যতটুকু সম্ভব সেই পরিবারগুলোর পাশে গিয়ে দাঁড়ানো। তাদের এই আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানানো।
চাঁদাবাজি, দখলের অভিযোগ থামছে না কেন : তারেক রহমানের কাছে জানতে চেয়েছিল, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিএনপির অনেক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, দখলবাজির অভিযোগ উঠছে। এসব থামানো যাচ্ছে না কেন? তারেক বলেন, আপনার প্রতি সম্মান রেখে আপনার সাথে এগ্রিও যেমন করব, আবার এখানে অন্য একটি বিষয় আমি তুলে ধরতে চাইব। এর মধ্যে নিশ্চয়ই আপনারা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে দেখেছেন যে, প্রায় ৭ হাজারের মতন আমাদের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে কিছু সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। কিন্তু এই সাত হাজারে সবাই কিন্তু আপনি যে অভিযোগ করলেন এই অভিযোগের সাথে জড়িত নয়। এর মধ্যে এমন অনেক বিষয় আছে যারা অন্য সাংগঠনিক বিষয়ের সাথে জড়িত। এটি গেল একটি বিষয়। দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে আমাদের কাছে এ রকম যখন অনেক অভিযোগ এসেছে, আমরা অভিযোগগুলো তদন্ত করেছি। তদন্ত করার পরে বেশ কিছু বিষয় পেয়েছি। যেমন আমি দুই–একটি উদাহরণ দিয়ে আপনাকে বলি। ধরেন কোনো একটি এলাকায় দুই ভাই আছে। দুই ভাইয়ের মধ্যে পারিবারিক সহায় সম্পত্তি নিয়ে একটি সমস্যা আছে। এক ভাই বিগত যে স্বৈরাচার, পলাতক স্বৈরাচার, তাদের কারো সাথে এক ভাইয়ের খুব ভালো সম্পর্ক। সে তার ইনফ্লুয়েন্সটি ব্যবহার করে অন্য ভাইয়ের সম্পত্তি জোর করে দখল করে রেখেছে। এখন পাঁচ তারিখের পরে যে ভাই স্বৈরাচারের দোসরকে ব্যবহার করেছিল সেই দোসরও তো পালিয়ে গিয়েছে। তো স্বাভাবিকভাবেই সেই ভাই এখন আর শেল্টার পাচ্ছে না। তো যার সম্পত্তি জোর করে রেখে দিয়েছিল অন্য ভাইটি, সেই অন্য ভাইটি স্বাভাবিকভাবে তার হক আদায় করতে গিয়েছে বা হক বুঝে নিতে গিয়েছে। এখন এক্সিডেন্টলি বা ইনসিডেন্টলি যে ভাই এতদিন বঞ্চিত ছিল সম্পত্তি থেকে সেই ভাই বিএনপি করে। বিএনপির কোনো একজন কর্মী বা স্ট্রং সমর্থক বা নেতা যেটাই হোক, চাপিয়ে দিল, অভিযোগ তুলে দিল অন্যজন যে বিএনপি দখল করতে গিয়েছে। এ রকম ঘটনা আমরা প্রচুর পেয়েছি। আবার আরেকটি উদাহরণ দেই যা সত্য, যা বাস্তব। স্বৈরাচারের সময় সারা বাংলাদেশে আমাদের প্রায় ৫০ লাখের বেশি নেতাকর্মীর নামে বিভিন্ন রকম গায়েবি মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছিল। আমাদের বহু নেতাকর্মী তাদের ঘর–বাড়িতে থাকতে পারত না। তাদেরকে বিভিন্নভাবে পালিয়ে থাকতে হতো। এই সুযোগে স্বৈরাচার তাদের ব্যবসা–বাণিজ্য, দোকান–পাট, ঘর–বাড়ি, জমি–জমা–পুকুর দখল করে নিয়েছিল। পাঁচ তারিখে যখন স্বৈরাচার পলাতক হয়ে গিয়েছে, তখন স্বৈরাচারের যারা দখল করেছে তারাও সাথে সাথে পালিয়ে গিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই আমাদের নেতাকর্মীরা তাদের নিজেদের যেগুলি বৈধ সম্পত্তি, পৈত্রিক সম্পত্তি সেগুলো আবার ফিরে পেতে গিয়েছে। তখন আবার কিছু সংখ্যক লোক প্রচার করেছে যে বিএনপির লোকজন দখল করতে গিয়েছে। এ রকম ঘটনা প্রচুর ঘটেছে। আপনি যে কথাটি বললেন সে রকমও কিছু ঘটেছে। সে কারণেই আমরা আমাদের অবস্থান থেকে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। তবে এখানে আমার একটি প্রশ্ন আছে, যে প্রশ্নটি আমরা পাবলিকলিও করেছি। দেখুন আমরা একটি রাজনৈতিক দল। কিছু ঘটনা ঘটেছে। আমরা অস্বীকার করছি না। ঘটেছে যেমন, আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি তাদের বিরুদ্ধে। যতটুকু আমরা জেনেছি, যতটুকু আমরা তদন্তের পরে পেয়েছি, যখন সত্যতা পেয়েছি, আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। কিন্তু পুলিশিং করা তো আমাদের কাজ না। রাজনৈতিক দলের কাজ অবশ্যই পুলিশিং করা না। আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা কখনো বলিনি সরকারকে যে অমুককে ধরতে পারবে না, তমুককে ধরতে পারবে না, এই করতে পারবে না। আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, যাদের কাজ পুলিশিং করা তারা কেন তাদের কাজটি করছে না? তারা কেন তাদের কাজে ব্যর্থ? এটি আমাদের প্রশ্ন।