জুলাই সনদের ভিত্তিতে ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য অধ্যাপক জাফর সাদেক। এসময় জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দেয়া ছাড়া নির্বাচন হলে তা হবে ফ্যাসিবাদকে পুনর্বাসন করার নির্বাচন হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। গতকাল রোববার বাংলাদেশ ইসলামী একাডেমি (বিআইএ) মিলনায়তনে চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের উদ্যোগে ৫দফা গণদাবি আদায়ের লক্ষ্যে সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিদের নিয়ে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। নগর জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমীর মুহাম্মদ নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মাওলানা খাইরুল বাশার ও মোহাম্মদ উল্লাহ সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন নগর জামায়াতের সেক্রেটারির অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমিন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গোলাম মোস্তফা, এনামুল হক ও কবি আব্দুল গফুর।
জামায়াতে ইসলামীর চট্টগ্রাম অঞ্চল টিম সদস্য অধ্যাপক জাফর সাদেক বলেন, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি হলো– রাজনৈতিক দলসমূহ ও অন্তর্বর্তী সরকারের জনগণের কাছে একটি কমিন্টমেন্ট ও অঙ্গীকার। নির্বাচনের পূর্বেই এই কমিন্টমেন্টে আসতে হবে, আমরা ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ চাই। এসময় দুইটি পদ্ধতিতে সমস্যা সমাধান করা যায় জানিয়ে তিনি বলেন, একটি হলো সংবিধানিক আদেশ ও গণভোট। জুলাই সনদ যদি আইনি প্রক্রিয়ায় চূড়ান্ত হয়ে না আসে তাহলে এটি স্টেট এভিডেন্স হিসেবে স্বীকৃতি পাবে না।
জাফর সাদেক বলেন, জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। জুলাই বিপ্লবের স্লোগান হচ্ছে– একটি বৈষম্যহীন ইনসাফ ভিত্তিক ও জবাবদিহিমূলক বাংলাদেশ গঠন করা; যেখানে দুর্নীতি, সন্ত্রাস, স্বজনপ্রীতি চাঁদাবাজ ও টেন্ডারবাজি থাকবে না। সরকার ইতোমধ্যে জুলাই জাতীয় সনদ ও জুলাই ঘোষণাপত্র তৈরি করেছে। দেশের একটি বৃহৎ দল হিসেবে জামায়াত জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই জাতীয় সনদ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সংশোধনীনহ তাদের পরামর্শ সরকারের নিকট উপস্থাপন করেছে। তাই জুলাই সনদকে আইনগত ভিত্তি দেওয়া এবং জুলাই সনদের ভিত্তিতে ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে হবে।
মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, জুলাই সনদ, স্বৈরাচারের দোসরদের রাজনীতি নিষিদ্ধ, লুটেরা ও খুনিদের দৃশ্যমান বিচার, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে পিআর সিস্টেমে জাতীয় নির্বাচন ছাড়া লক্ষ্য অর্জন অসম্ভব। এজন্য সকলকে আন্দোলনে সোচ্চার থাকতে হবে।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার এ সদস্য বলেন, ১৪ জুলাই শেখ হাসিনার বিদ্রুপাত্মক মন্তব্যের জবাবে ‘তুমি কে, আমি কে? রাজাকার, রাজাকার! কে বলেছে, কে বলেছে, স্বৈরাচার, স্বৈরাচার’ শ্লোগান ছিলো তীব্র প্রতিরোধের সাংস্কৃতিক অস্ত্র। জুলাই আন্দোলন এগিয়েছে উত্থান–পতনের মধ্য দিয়ে। ১৬ জুলাই রংপুরের আবু সাঈদ, চট্টগ্রামের ফয়সল শান্ত, ওয়াসিম ও ফারুক এবং ঢাকার সুজন ও শাহজাহানের শাহাদাতের পর ১৯ জুলাইয়ের কারফিউ, ডিবি’র দপ্তর থেকে সরকারপ্রণীত বিবৃতি, আন্দোলনকে কিছুটা শ্লথ করলেও জুলাই যোদ্ধা সমন্বয়কদের ঐকান্তিক প্রতিজ্ঞা ও জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ আন্দোলনকে আবার জ্বালিয়ে তোলে। তখন দেশের রাজপথে, অলিগলিতে, ভার্চুয়াল জগতে সবখানে উচ্চারিত হতে থাকে একটিই অদম্য দাবি ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন। অবশেষে সাফল্যের দিন আসে ৩৬ জুলাই।
তিনি বলেন, দেয়াল লিখন–গ্রাফিতি, স্যাটায়ার কার্টুন ফিরে এসেছিল নতুন রূপে প্রতিবাদী কণ্ঠে। প্রিন্ট মিডিয়ার ঘাটতি পূরণে পুর্নজন্ম হয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুক–টুইটার–ইনস্টাগ্রাম। স্লোগানে– স্লোগানে ছড়িয়েছিল বিপ্লবের নতুন বার্তা, যার শুরু ‘কোটা না মেধা? মেধা, মেধা’ দিয়ে।
মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নগর জামায়াতের এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মোহাম্মদ মোরশেদুল ইসলাম চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. এ কে এম ফজলুল হক, নগর কর্মপরিষদ সদস্য ডা. সিদ্দিকুর রহমান, আবু হেনা মোস্তফা কামাল, হামেদ হাসান ইলাহী, প্রফেসর মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ, আমির হোছাইন।