প্রথম দুই ম্যাচ জিতে আগেই সিরিজ নিশ্চিত করে নিয়েছিল বাংলাদেশ। এবার হোয়াইটওয়াশ মিশনের লক্ষ্যও পূরণ করলো তারা। গতকাল রোববার শারজায় টি–টোয়েন্টি সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে বাংলাদেশ ৬ উইকেটে হারায় আফগানিস্তানকে। এতে করে বাংলাদেশ পূর্ণ করলো তিনে তিন ম্যাচ জয়ের কীর্তি। টস জিতে গতকাল রোববার বাংলাদেশ প্রথমে ব্যাট করতে পাঠায় আফগানিস্তানকে। নির্ধারিত ২০ ওভার খেলে তারা ৯ উইকেটে ১৪৩ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়ে তোলে বাংলাদেশের সামনে। বাংলাদেশ তা পেরিয়ে যায় ১২ বল বাকি থাকতেই ৪ উইকেটে ১৪৪ রান তুলে। আগের দুই ম্যাচে আফগানদের বিপক্ষে লড়াই কিছু জমেছিল। বাংলাদেশের নড়বড়ে ব্যাটিংয়ে জেগে উঠেছিল রোমাঞ্চ। এবার তেমন কিছু হতে দেননি সাইফ হাসান। এশিয়া কাপ দিয়ে দলে ফেরার পর নিজেকে নতুনভাবে মেলে ধরেছেন তিনি। সেটাকে আরও উজ্জ্বল করে ফুটিয়ে তুললেন গতকাল দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে। তার ছক্কার পর ছক্কায় চূর্ণ হয়ে গেল আফগানিস্তানের সব প্রচেষ্টা। ২টি চার এবং ৭ ছক্কায় ৩৮ বলে ৬৪ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে বাংলাদেশের নায়ক সাইফ হাসান। এশিয়া কাপে শ্রীলংকা ও ভারতের বিপক্ষে দারুণ দুটি ইনিংস খেলা ব্যাটসম্যান উপহার দিলেন আরেকটি মনে রাখার মতো ইনিংস। তবে শারজাহ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের জয়ের ভিত গড়ে দেন যথারীতি বোলাররাই। এবার আফগানদের ইনিংস শেষ হয় ১৪৩ রানে। এই দুই দলের চারটি দ্বিপাক্ষিক সিরিজে বাংলাদেশের জয় এখন দুটি, আফগানিস্তানের একটি, আরেকটি ড্র্।
বাংলাদেশের রান তাড়ার শুরুটা ছিল ভালো মন্দে মেশানো। প্রথম ২ ওভারে রান আসে কেবল ৩, পরের ২ ওভারে ২১। এরপরই শেষ হয় পারভেজ হোসেন ইমনের অস্থির ইনিংস। ১৬ বলে ১৪ রান করে রশিদ খানের হাতে ধরা পড়েন তিনি আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের বলে। সাইফ ক্রিজে যাওয়ার পরপরই দেখাতে শুরু করেন হাতের জোর। তার প্রথম চার স্কোরিং শটের তিনটিই ছক্কা। তানজিদের শুরু ছিল কিছুটা অস্বস্তিময়। ৭ রানে ক্যাচ দিয়ে রক্ষা পান এক দফায়। সাইফের সঙ্গে গড়ে তোলেন ৫৫ রানের জুটি। তবে আরেকবার জীবন পেয়েও ইনিংসটা বড় হয়নি তার। সহজ ক্যাচ দিয়ে বেঁচে গিয়েও পরের বলেই আউট হয়ে যান এই ওপেনার ৩৩ বলে ৩৩ রান করে। তবে বাংলাদেশকে চাপে পড়তে দেননি সাইফ। তানজিদের বিদায়ের পর চোখধাঁধানো এক শটে বল আছড়ে ফেলেন তিনি স্টেডিয়ামের বাইরে। মুজিবের স্পেলের শেষ দুটি বলে পরপর বিদায় নেন জাকের আলি (১০) ও শামীম হোসেন (০)। সাইফ তখন বুদ্ধিদীপ্ত ব্যাটিংয়ে রাশিদ খানের শেষ ওভার পার করে দেন মেডেন খেলে। এরপর বাশির আহমেদকে টানা দুটি বিশাল ছক্কায় পঞ্চাশে পৌঁছে যান ৩২ বলে। সেখানেই না থেমে আরেকটি ছক্কায় তিনি বল ফেলেন গ্যালারিতে। নুরুল হাসান সোহানের ছক্কায় শেষ হয় ম্যাচ। সোহান ৯ বলে ১০ রান করে ম্যাচ শেষ করে আসেন। ম্যাচ সেরা হয়েছেন সাইফ হাসান তার অনবদ্য ব্যাটিংয়ের জন্য।
ম্যাচের শুরুতে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা আফগানিস্তান এ দিন ফিরে যায় তাদের আগের উদ্বোধনী জুটিতে। ইনিংস শুরু করেন রাহমানউল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান। তাতেও ফেরেনি ভালো শুরুর স্বস্তি। প্রথম দুই ওভারে ২০ রান তোলার পর পরপর দুই ওভারে বিদায় নেন দুজনই। ইব্রাহিম জাদরানকে ফেরান শরিফুল ইসলাম। এই নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দুজনের আটবারের লড়াইয়ে এই ব্যাটসম্যানকে ছয়বারই আউট করলেন বাংলাদেশের এই বাঁহাতি পেসার। নাসুম আহমেদের বলে শামীম হোসেনের দুর্দান্ত ক্যাচে কাটা পড়েন গুরবাজ। একটু পর সাইফ উদ্দিনের ফুল টসে বোল্ড হয়ে যান ওয়াফিউল্লাহ তারাখিল। পাওয়ার প্লেতে ৩ উইকেট হারিয়ে আফগানরা তোলে কেবল ৩৯ রান। তৃতীয় উইকেটে সেদিকউল্লাহ আটাল ও দারভিশ রাসুলি চেষ্টা করেন দলকে টেনে নেওয়ার। তবে সম্ভাবনাময় এই জুটি থামে ২৫ বলে ৩৪ রানে। সাইফ উদ্দিনের বলে ২৮ রানে উইকেট হারান আটাল। আফগান ইনিংস এরপর টালমাটাল হয়ে ওঠে আরও। আজমাতউল্লাহ ওমারজাইকে টিকতে দেননি রিশাদ হোসেন, মোহাম্মাদ নাবিকে দুর্দান্ত ডেলিভারিতে বোল্ড করে দেন নাসুম। রশিদ খান বিপজ্জনক হয়ে ওঠার চেষ্টা করলেও একটি ছক্কা ও চারের পরই তাকে থামান তানজিম হাসান। পরের বলে যখন আব্দোল্লাহ এহমেদজাই ফিরে যান, আফগানিস্তানের তখন একশ হওয়া নিয়েই শঙ্কা। ৯৮ রানে ৮ উইকেট হারানো দল ১৪০ পেরিয়ে যায় শেষ দুই জুটির লড়াইয়ে। দারভিশ রাসুলি ও মুজিব উর রাহমান নবম উইকেটে যোগ করেন ৩৪ রান। রাসুলি আউট হন ২৯ বলে ৩২ রান করে। শেষ জুটিতে আসে আরও ১১ রান। ক্যারিয়ার সেরা ২৩ রানে অপরাজিত থাকেন মুজিব। তাকে সঙ্গ দেন বশির আহমেদ অপরাজিত ২ রান করে। বাংলাদেশের পক্ষে সাইফুদ্দিন ১৫ রানে ৩টি উইকেট পান। ২টি করে উইকেট নেন নাসুম আহমেদ এবং তানজিম সাকিব। দুজনেই খরচ করেন ২৪ রান করে। ১টি করে উইকেট নেন শরিফুল ইসলাম এবং রিশাদ হোসেন। এ দু’জন যথাক্রমে ৩৩ এবং ৩৯ রান দেন।