বছর ঘুরে ব্যক্তির আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার নির্ধারিত সময়সীমা আবার সমাগত প্রায়। এখন সেই প্রস্তুতি নেওয়ার পালা। মাস খানেক পরে জোরেশোরে শুরু হবে সেই তোড়জোড়। এরই মধ্যে কেউ কেউ কাগজ কলম নিয়ে খসড়া হিসাব করতে বসে গেছেন, নতুন আয়কর হার অনুযায়ী নিজের আয় থেকে কর দিতে হবে কত? বিশেষ করে যাদের মাসিক আয় কিছু বেশি। কোনো ব্যক্তির মাসিক আয় আগের মত এক লাখ টাকা থাকলে চলতি অর্থবছরে (আয়বর্ষ) নতুন হিসাবে তাকে কত টাকা আয়কর দিতে হবে, বাড়ল কত?
চলতি ২০২৫–২৬ অর্থবছরের বাজেটে করমুক্ত আয়সীমায় পরিবর্তন ও আয়ের স্তর অনুযায়ী নতুন হার নির্ধারণের পর ব্যক্তি করদাতাদের মধ্যে এমন আলোচনা সামনে এসেছে। হিসাব করে দেখা যায়, গত অর্থবছরে (আয়বর্ষ) যার মাসিক আয় ১ লাখ টাকা ছিল এবং দুই ঈদে যদি তার বোনাস হয় আরও ১ লাখ টাকা; তাহলে তার বার্ষিক আয়ের ওপর আয়কর আসে ৪৭ হাজার ৫০০ টাকা। চলতি অর্থবছরে (আয়বর্ষ) এ পরিমাণ আয়ের ওপর নতুন বিধান অনুযায়ী আয়কর আসবে ৫৮ হাজার ৭৫০ টাকা। খবর বিডিনিউজের।
অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের জন্য যে অর্থ আইন করা হয়েছে, তাতে একই বেতন বা আয় থাকা সত্ত্বেও তার আয়কর বাড়বে ১১ হাজার ২৫০ টাকা বা ২৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ। কর রেয়াতের হিসাব যুক্ত করলে দেখা যায়, নতুন বিধান অনুযায়ী আয়কর বেড়েছে ৫২ দশমিক ৩২ শতাংশ। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ করছাড় নেওয়ার পর গত অর্থবছরের (আয়বর্ষ) আয়ের ওপর আয়কর দিতে হয়েছে ২১ হাজার ৫০০ টাকা। আর চলতি অর্থবছরের আয়ের ওপর আয়কর আসবে ৩২ হাজার ৭৫০ টাকা।
২০২৫ সালের জুলাই থেকে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে একজন ব্যক্তি যে আয় করবেন, তার ওপর তাকে নতুন হারে কর দেওয়ার বিধান করায় তার কর বেড়েছে। করমুক্ত আয়সীমার নতুন বিধান অনুযায়ী, এই সময়ে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা আয়ের জন্য তাকে কোনো কর দিতে হবে না। এর বেশি আয়ের জন্য তাকে কর দিতে হবে বাজেটে ঘোষিত নতুন করধাপ অনুযায়ী। সেক্ষেত্রে ৫ শতাংশ করে থাকা কর হারও তুলে দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
তবে একজন করদাতা তার আয় থেকে যথার্থ বিনিয়োগ পরিকল্পনা করলে বড় অঙ্কের কর ছাড় পেতে পারেন। এক্ষেত্রেও দেখা যায়, নতুন বিধান অনুযায়ী কেউ সর্বোচ্চ ছাড় নিলেও তার করের পরিমাণ বাড়ার হারও আগের বারের চেয়ে আরও বেশি বাড়বে।
আয়ের ওপর যেভাবে কর হিসাব করা হয়, সেটি প্রথমে একটু দেখা যাক। একজন সাধারণ ব্যক্তি করদাতা যদি এক লাখ টাকা মাসিক বেতন এবং উৎসব বোনাস হিসেবে আরও ১ লাখসহ মোট ১৩ লাখ টাকা আয় করেন তাহলে প্রথমেই তার আয়ের এক তৃতীয়াংশ বা ৫ লাখ টাকা, যেটি কম হবে তা করমুক্ত। এক্ষেত্রে তার করমুক্ত আয় হচ্ছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার ৩৩৪ টাকা; অর্থাৎ করযোগ্য আয় হচ্ছে ৮ লাখ ৬৬ হাজার ৬৬৬ টাকা। এর মধ্যে প্রথম সাড়ে ৩ লাখ টাকার ওপর আয়কর শূন্য। পরের এক লাখ টাকা আয়ের ওপর ৫ শতাংশ হারে কর হবে ৫ হাজার টাকা। পরবর্তী ৪ লাখ টাকার ওপর ১০ শতাংশ হারে কর ৪০ হাজার টাকা। এবং বাকি ১৬ হাজার ৬৬৬ টাকার ওপর ১৫ শতাংশ হারে করের পরিমাণ ২ হাজার ৫০০ টাকা। অর্থাৎ আয়কর দিতে আসবে ৪৭ হাজার ৫০০ টাকা। নতুন বিধানেও একইভাবে তার আয়ের এক তৃতীয়াংশ বা ৫ লাখ টাকা, যেটি কম হবে তা হবে করমুক্ত। এক্ষেত্রেও তার করমুক্ত আয় হচ্ছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার ৩৩৪ টাকা; অর্থাৎ করযোগ্য আয় হচ্ছে ৮ লাখ ৬৬ হাজার ৬৬৬ টাকা। সেক্ষেত্রে প্রথম ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকার ওপর কর শূন্য। পরবর্তী ৩ লাখ টাকার ওপর কর ১০ শতাংশ হারে ৩০ হাজার টাকা। এবং পরের স্তরে বাকি থাকা ১ লাখ ৯১ হাজার ৬৬৬ টাকার ওপর ১৫ শতাংশ হারে কর ২৮ হাজার ৭৫০ টাকা। অর্থাৎ নতুন বিধানে আয়কর আসবে ৫৮ হাজার ৭৫০ টাকা।
রিটার্ন দেওয়া যাবে কবে : চলতি অর্থবছরের আয়ের ওপর আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন দিতে হবে আগামী অর্থবছরে। অর্থাৎ ২০২৬ সালের জুলাই থেকে পরবর্তী সময়ে। সাধারণত ৩০ নভেম্বরের মধ্যে পরিশোধ করতে হয়। এবং এ সময়কে বলে করবর্ষ। উৎসে কর কাটা হলে সাকুল্যে যত আয়কর হবে তার বাকি অর্থ তখন পরিশোধ করতে হবে।
গত ২০২৪–২৫ অর্থবছরের আয়ের ওপর চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে আয়কর রিটার্ন দেওয়া যাচ্ছে। চলতি অর্থবছরের আগস্ট থেকে এটি বিশেষ কয়েক শ্রেণির করদাতা ছাড়া সবার জন্য অনলাইনে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এদিকে ২০২৬–২৭ অর্থবছরের জুলাই–নভেম্বর সময়ে আয়কর রিটার্ন জমার সময় করছাড় পেতে হলে বিনিয়োগ ও আয়ের পরিকল্পনা শুরু করতে হবে এখনই।