শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা শিক্ষার উন্নয়নে বড় চ্যালেঞ্জ

| রবিবার , ৫ অক্টোবর, ২০২৫ at ৫:২৭ পূর্বাহ্ণ

আজ বিশ্ব শিক্ষক দিবস। ১৯৯৫ সাল থেকে প্রতি বছর ৫ অক্টোবর এ দিবস বিশ্বব্যাপী পালন করা হয়। ইউনেস্কোর মতে, বিশ্ব শিক্ষক দিবস শিক্ষা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ পালন করা হয়ে থাকে। বর্তমানে বিশ্বের ১০০টি দেশে এই দিবসটি পালিত হয়। এই দিবসটি পালনে এডুকেশন ইন্টারন্যাশনাল ও তার সহযোগী ৪০১টি সদস্য সংগঠন মূল ভূমিকা রাখে। দিবসটি পালনের উদ্দেশ্য হচ্ছেজাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের শিক্ষকদের মর্যাদা ও মানসম্মত শিক্ষা বাস্তবায়নে শিক্ষকের গুরুত্ব সম্পর্কে অবহিত করা, মানসম্মত শিক্ষা তথা সকল শিশুর জন্য প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণে শিক্ষকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে আলোকপাত করা এবং প্রবীণ শিক্ষকদের অভিজ্ঞতাকে জানা ও কাজে লাগানো। ইউনেস্কোর মতে, শিক্ষা ও উন্নয়নে শিক্ষকরা বিশেষ ভূমিকা রাখছেন। মানুষের মধ্যে সচেতনতা, উপলব্ধি সৃষ্টি ও শিক্ষকদের ভূমিকার স্বীকৃতিস্মারক হিসেবে দিবসটি গুরুত্বপূর্ণ। মানবিক বিপর্যয় বা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটে আক্রান্ত হয়েও সামাজিক, অর্থনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক সমাজ বিনির্মাণে শিক্ষকরা তাদের ভূমিকা রেখে চলেছেন।

যিনি শেখান তিনিই শিক্ষক, সেই তিনি যে পর্যায়েরই হোন। ম্যাক্সিম গোর্কি ডাস্টবিনের কুকুরকেও তার শিক্ষক মানতেন। পেটের ক্ষুধা সবারই সমান। পৃথিবীর ১২৭ ভাষায় অনূদিত গোর্কি কোনো শ্রেণিকক্ষে শিক্ষালাভ করেননি। বিশ্বজোড়া পাঠশালারই ছাত্র তিনি। শিক্ষকেরা হচ্ছেন মানুষ গড়ার কারিগর। একজন আদর্শ মানুষ গড়তে আদর্শ শিক্ষকের কোনো বিকল্প নেই। শিক্ষকের স্থান ঈশ্বর ও মাবাবার পরেই। এটি চাকরি নয়। শিক্ষকের জয় সবসময়। যদিও নিবেদিত প্রাণ শিক্ষকদের হৃদয়ের রক্তক্ষরণে, দীর্ঘশ্বাসে, বোবাকান্নায় আজ চারপাশ। তাই শিক্ষকদের দক্ষতা উন্নয়ন, স্বাধীনতা, মর্যাদা বৃদ্ধি, আবাসন, যুগোপযোগী ও বিশ্বমানের প্রশিক্ষণ, সিম্পোজিয়াম ও কর্মশালার ব্যবস্থা করতে হবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি জাতির উন্নতি ও অগ্রগতিতে শিক্ষকের ভূমিকা অপরিসীম। শিক্ষার্থীর কাছে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে শিক্ষকের। একজন শিক্ষককে শিক্ষার্থী অনুকরণ করে। যোগ্যতা, দেশপ্রেম দায়িত্ববোধের সাথে যদি শিক্ষকগণ যথাযথ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হন তবে সমগ্র জাতিই হয়ে পড়ে বিপন্ন। একজন শিক্ষককে শিক্ষার্থীর নিকট হতে হয় আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী। একজন শিক্ষার্থীর সুপ্ত গুণাবলীর বিকাশ ঘটাতে পারে একজন শিক্ষক। শিক্ষার্থীর মধ্যে যে গুণাবলী বিদ্যমান সেভাবে শিক্ষার্থীকে দিক নির্দেশনা দিয়ে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে একজন শিক্ষকের সমকক্ষ অন্য কেউ হতে পারে না। যিনি শিক্ষকতা পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করেন তার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য থাকতে হবে শিক্ষার্থীর সার্বিক উন্নতি সাধন কিভাবে করা যায়। সুশিক্ষার জন্য সুশিক্ষক প্রয়োজন। সুশিক্ষককে অনেক গুণাবলীর অধিকারী হতে হবে। এজন্য মেধাবীদের শিক্ষকতা পেশায় আকৃষ্ট করতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, শিক্ষা খাত সময়ের সেরা বিনিয়োগের ক্ষেত্র। দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়নের জন্য শিক্ষায় বিনিয়োগের কোনো বিকল্প নেই। ভারতের নোবেল বিজয়ী শিক্ষাবিদ কৈলাশ সত্যার্থী বলছেন, শিক্ষায় ১ ডলার বিনিয়োগ করলে আগামী ২০ বছরের মধ্যে ১৫ গুণ রিটার্ন পাওয়া সম্ভব। ফলে শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়িয়ে শিক্ষকতা পেশায় মেধাবীদের আগ্রহ বাড়াতে হবে। আগ্রহী শিক্ষার্থীদের স্বচ্ছ ও যুগোপযোগী মূল্যায়নের মাধ্যমে এই পেশায় আসার জন্য আমন্ত্রণ জানাতে হবে। শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা শিক্ষার উন্নয়নে এখন বড় চ্যালেঞ্জ। তথ্যপ্রযুক্তির বদৌলতে পৃথিবী প্রতিনিয়ত বদলে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে শিক্ষকদেরও বদলাতে হবে প্রতিনিয়ত। এ ক্ষেত্রে আমাদের শিক্ষকরা কতটা পিছিয়ে সেটা দেশে মহামারি করোনা আসার পর আমরা লক্ষ করেছি। একজন শিক্ষক আজকেই আগামী দশকের সুযোগ ও সমস্যা মোকাবিলার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করছেন। শিক্ষকদের আত্মোন্নয়নের জন্য প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে গুরুত্ব দিতে হবে। শিক্ষকদের গড়ে তুলতে হবে আন্তর্জাতিক মানের।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্রজনতার আন্দোলনে দেশের মানুষ স্বৈরশাসকের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছে। সবাই এখন ন্যায় বিচার পাবে, থাকবে না কোনো ভেদাভেদ। এমনটাই প্রত্যাশা কোটি মানুষের মনে। সকলের প্রত্যাশা এবার শিক্ষকদের মধ্যে বৈষম্য যেন দূর হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে