খাগড়াছড়িতে ৮ দিন পর ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার

স্থায়ীভাবে প্রত্যাহার হলো স্থগিত অবরোধ কর্মসূচিও

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি | রবিবার , ৫ অক্টোবর, ২০২৫ at ৪:৫২ পূর্বাহ্ণ

খাগড়াছড়িতে চলমান ১৪৪ ধারা ৮ দিন পর প্রত্যাহার করেছে জেলা প্রশাসন। গতকাল শনিবার রাত পৌনে ৯টায় এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার নিজ ক্ষমতাবলে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ মোতাবেক ১৪৪ ধারা জারির আদেশ প্রত্যাহার করেন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, খাগড়াছড়ি পৌরসভা ও সদর উপজেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটায় এবং জনগণের জান ও মালের ক্ষতিসাধনের আশঙ্কা থাকায় গত শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুর ২টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত খাগড়াছড়ি পৌরসভা ও সদর উপজেলায় ফৌজদারী কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছিল। বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার খাগড়াছড়ি পৌরসভা ও সদর উপজেলায় ১৪৪ ধারা জারির আদেশ প্রত্যাহারের চাহিদা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছ থেকে পাওয়া যায়। সেই হিসেবে রোববার সকাল ৬টা থেকে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার খাগড়াছড়ি পৌরসভা ও সদর উপজেলায় ১৪৪ ধারা জারির আদেশ প্রত্যাহার করা হল। এর আগে সকালে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে স্থগিত অবরোধ কর্মসূচি পুরোপুরি প্রত্যাহার করে নেয় জুম্ম ছাত্রজনতা।

এদিকে খাগড়াছড়ির গুইমারায় চলমান ১৪৪ ধারা ৭ দিন পর প্রত্যাহার করেছে উপজেলা প্রশাসন। শনিবার রাত সাড়ে ৯টায় গুইমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ১৪৪ ধারা জারির এ আদেশ প্রত্যাহার করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, খাগড়াছড়ির গুইমারায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটায় এবং জনগণের জান ও মালের ক্ষতিসাধনের আশঙ্কা থাকায় গত রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত গুইমারায় উপজেলায় ফৌজদারী কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছিল। বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার গুইমারা উপজেলায় সে আদেশ প্রত্যাহারের চাহিদা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থেকে পাওয়া গিয়েছে। সেই হিসেবে রোববার সকাল ৬টা থেকে গুইমারায় ১৪৪ ধারা জারির আদেশ প্রত্যাহার করা হল।

স্থগিত অবরোধ’ স্থায়ীভাবে প্রত্যাহার : খাগড়াছড়িতে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত ঘোষিত ‘স্থগিত অবরোধ’ কর্মসূচি পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হয়েছে। গতকাল শনিবার সকালে জুম্ম ছাত্রজনতার মিডিয়া সেল থেকে এক প্রেস বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, শহীদদের ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী পুণ্যকর্ম সম্পাদন, আহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি মানবিক সহায়তা প্রদান এবং প্রশাসনের আশ্বাসকে বিবেচনায় রেখে এই সিন্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বিবৃতিতে আরো বলা, খাগড়াছড়ি ও গুইমারায় সংঘটিত সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষিতে গত ১ অক্টোবর প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে জুম্ম ছাত্রজনতার পক্ষ থেকে দ্বিতীয় দফা আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে স্পষ্টভাবে ৮ দফা দাবি বাস্তবায়ন, ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার এবং সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানানো হয়। আলোচনায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাবিসমূহ বাস্তবায়নের আশ্বাস প্রদান করা হয় এবং শহীদ পরিবারের প্রতি নগদ ৫০ হাজার টাকা প্রদান করার বিষয়টি জানানো হয়।

ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা দিল জেলা পরিষদ : খাগড়াছড়ি সদর উপজেলায় সাম্প্রতিক সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত ২৮টি পরিবার ও ব্যবসায়ীদের মাঝে ত্রাণ ও আর্থিক সহায়তা বিতরণ করেছে পার্বত্য জেলা পরিষদ। গতকাল শনিবার সকালে জেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ত্রাণ বিতরণ করেন পরিষদের চেয়ারম্যান শেফালিকা ত্রিপুরা। এদিন ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেকে ১০ হাজার টাকা করে নগদ অর্থ ও ১ বস্তা চাল বিতরণ করা হয়।

প্রসঙ্গত, গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে মারমা কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ এনে জুম্ম ছাত্রজনতার সড়ক অবরোধ কর্মসূচিতে উত্তাল হয়ে উঠে খাগড়াছড়ি। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা সহিংসতায় মারা যায় তিনজন, আহত হয় অর্ধশতাধিক। এসময় সদর উপজেলায় স্বনির্ভর ও আশপাশের বেশকিছু দোকানে লুটপাট চালানো হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমুরাদপুরে কিশোর গ্যাং লিডার ব্ল্যাক মঈনসহ ৮ জন গ্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামের ১৫ পৌরসভা পেল ৩ কোটি ৯২ লাখ টাকা