দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আমেরিকা থেকে সরকারিভাবে আমদানিকৃত ১ লাখ টনের বেশি গম নিয়ে দুটি জাহাজ চট্টগ্রামের পথে রয়েছে। চলতি মাসের শেষ দিকে জাহাজ দুটি চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছাবে। ইতোপূর্বে রাশিয়া ও ইউক্রেনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে গম আমদানি করা হলেও আমেরিকা থেকে এবারই প্রথম গম আমদানি করছে সরকার। আমেরিকার সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমানোসহ ট্রেড ব্যালেন্সের জন্য এই গম আমদানি করা হচ্ছে। দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার গম আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে। আমেরিকা থেকে ২ লাখ ৪২ হাজার টন গম আমদানির ব্যাপারে চুক্তি হয়েছে।
সূত্রে জানা গেছে, দেশে গমের বিপুল চাহিদা রয়েছে। আটা–ময়দা নির্ভর খাবারের কদর বাড়ার সাথে সাথে গমের চাহিদাও প্রতিনিয়ত বাড়ছে। বর্তমানে দেশে বছরে গড়ে ৮০ লাখ টনের বেশি গমের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে ১১ লাখ টন গম দেশে উৎপাদিত হয়। বাকি গম আমদানি করতে হয়। বাংলাদেশ তার চাহিদার অর্ধেকের বেশি গম আমদানি করে রাশিয়া থেকে। গত অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল প্রায় ৫৪ শতাংশ। এরপর রয়েছে ইউক্রেন। গত অর্থবছরে ইউক্রেন থেকে গম আমদানির পরিমাণ ১৪ শতাংশ। এছাড়া ব্রাজিল, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, রোমানিয়া, বুলগেরিয়া, উরুগুয়ে থেকে বাংলাদেশের আমদানিকারকগণ গম কিনে থাকেন।
সরকারিভাবে আমদানিকৃত গমের অধিকাংশ আসে রাশিয়া থেকে। এছাড়া ইউক্রেন, রোমানিয়া, বুলগেরিয়া ও উরুগুয়ে থেকেও সরকার গম আমদানি করে।
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শুল্ক নিয়ে একটু চাপে পড়ে। আমেরিকা বাংলাদেশের সাথে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে ট্রেড ব্যালেন্সের জন্য চাপ দেয়। আরোপ করে বাড়তি শুল্ক। এরই প্রেক্ষিতে সরকার আমেরিকা থেকে আমদানি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। বিশেষ করে গম আমদানির মাধ্যমে ঘাটতি কিছুটা কমিয়ে ট্রেড ব্যালেন্স রক্ষা করার উদ্যোগ নেয়। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে সরকার আমেরিকা থেকে প্রতি টন ৩০২ ডলার দরে ২ লাখ ২০ হাজার টন গম আমদানির চুক্তি করে। চুক্তিতে দশ শতাংশ প্লাস মাইনাসের শর্ত থাকায় আমেরিকা থেকে মোট ২ লাখ ৪২ হাজার টন গম আসছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। এই গম আমদানিতে রাশিয়ার চেয়ে দাম কিছুটা বাড়তি পড়লেও পণ্যের মান ভালো এবং দূরত্বের কারণে সেটা হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
আমেরিকা থেকে আমদানিকৃত ২ লাখ ৪২ হাজার টন গমের প্রথম ১ লাখ ১৮ হাজার ৭৫২ দশমিক ৮২৩ টন নিয়ে দুটি জাহাজ চট্টগ্রামের পথে যাত্রা করেছে। এর মধ্যে প্রথম জাহাজে ৫৭ হাজার ৯৫০ দশমিক ২৭৩ টন এবং দ্বিতীয় জাহাজে ৬০ হাজার ৮০২ দশমিক ৫৫ টন গম রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম জাহাজটি আগামী ২৫ অক্টোবর এবং দ্বিতীয় জাহাজটির ২৯ অক্টোবর চট্টগ্রাম পৌঁছানোর কথা রয়েছে। পরের মাসে আরো দুটি জাহাজে বাকি গম চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছাবে বলে জানা গেছে।
চলতি মাসে দুই জাহাজ গম আসার বিষয়টি নিশ্চিত করে খাদ্য অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা আজাদীকে বলেন, দেশে খাদ্যের প্রচুর মজুদ রয়েছে। গমেরও অভাব নেই। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতেও গমের প্রচুর মজুদ রয়েছে। তবুও খাদ্য নিরাপত্তার ওপর গুরুত্ব দিয়ে সরকার আমেরিকা থেকে এই গম আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে।
সরকারি গম খালাসের সাথে জড়িত সেভেন সীজ শিপিং লাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমডি আলী আকবর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত জানাতে অপারগতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমেরিকা থেকে গম আসবে শুনেছি। তবে কত টন বা কবে আসবে সেই প্রোগ্রাম আমরা এখনো পাইনি।