গত বৃহস্পতিবার নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে দারুণ বোলিং করে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন বাংলাদেশের পেসার মারুফা আকতার। তার বোলিং নজর কেড়েছে লঙ্কান কিংবদন্তি লাসিথ মালিঙ্গারও। এবারের উইমেন’স ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচে বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ওভারে আগুনে ডেলিভারি দুটি বের হয় মারুফার হাত থেকে। মারুফার সহজাত ডেলিভারি ইনসুইঙ্গার (ডানহাতি ব্যাটারের জন্য)। কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে ম্যাচের শুরু থেকেই সুইং ও মুভমেন্ট আদায় করে নিতে থাকেন তিনি। শুরুতে স্ট্রাইকে ছিলেন ওপেনার মুনিবা আলি। বাঁহাতি ব্যাটারের জন্য ডেলিভারিগুলো ছিল আউটসুইঙ্গার। টানা তিনটি বেরিয়ে যাওয়া বল অস্বস্তিতে ফেলে মুনিবাকে। চতুর্থ বলে ব্যাটের কানায় লেগে একটি রান পান তিনি। এবার স্ট্রাইকে আসের ডানহাতি ওমাইমা সোহেল। মারুফা সুযোগ পেয়ে যান নিজের সহজাত শক্তির জায়গা কাজে লাগানোর। প্রথম ডেলিভারিটিই বাতাসে সুইং করে অফ স্টাম্পের বেশ বাইরে পিচ করে আরও ভেতরে ঢুকে মুনিবার ব্যাট–প্যাডের ফাঁক গলে ছোবল দেয় লেগ–মিডল স্টাম্পের ওপরে। নতুন ব্যাটার ক্রিজে নামে সিদ্রা আমিন। পাকিস্তানের সেরা ব্যাটার তিনি। সবশেষ ছয় ইনিংসে যার সেঞ্চুরি দুটি, ফিফটি তিনটি। অসাধারণ ফর্মে থাকা সেই ব্যাটার কুপোকাত মারুফার প্রথম বলেই। মারুফার উইকেট নেওয়া ডেলিভারি দুটির ভিডিও আইসিসির সামাজিক মাধ্যমের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে ভাইরাল হয়ে যায় দ্রুতই। তেমনই একটি ভিডিও ফেইসবুকে শেয়ার দিয়েছেন মালিঙ্গা। সাবেক লঙ্কান পেসার সুইং করাতে পারতেন দুই দিকেই। তার ইনসুইঙ্গিইং ইয়র্কার ছিল ভয়ঙ্কর। এছাড়াও নানারকম স্কিলে তিনি ছিলেন সমৃ্দ্ধ। মারুফার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে তিনি লিখেছেন নিখাদ স্কিল। অসাধারণ নিয়ন্ত্রণ। এখনও পর্যন্ত টুর্নামেন্টের সেরা ডেলিভারি। মারুফার জন্য অবশ্য এমন ডেলিভারি নতুন কিছু নয়। গত প্রায় তিন বছরে নানা সময়েই তিনি এসব দেখিয়েছেন। বাংলাদেশের ক্রিকেটে তিনি প্রথম আলোচনায় উঠে এসেছিলেন ২০২১ সালের শুরুতে। মারুফা তখন অনূর্ধ্ব–১৯ দলের ক্রিকেটার। কিন্তু জীবনের কঠিন বাস্তবতায় ক্রিকেটের পথে ছোটার স্বপ্ন দেখাই তার জন্য ছিল কঠিন। নিজেদের গরু–মহিষ নেই বলে চাষের জমিতে নিজেই জোয়াল টেনে সহায়তা করতেন হতদরিদ্র বাবাকে। তার সেসব ছবি সামাজিক মাধ্যম ও সংবাদ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর দেশের ক্রিকেট কর্তাদেরও বাড়তি নজর পড়ে। তার প্রতিভার আলোও ছড়িয়ে পড়ে দ্রুতই। বয়সভিত্তিক দল হয়ে জাতীয় দলে চলে আসেন পরের বছরই। শুরুর কিছুদিন পরই দলে নিয়মিত হয়ে ওঠেন। এখন তো তিনি দেশের পেস বোলিংয়ের একমাত্র ভরসা।