অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য চাই ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়ন

| শনিবার , ৪ অক্টোবর, ২০২৫ at ৬:০৮ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের অর্থনীতি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে এখনো শঙ্কামুক্ত নয়। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫২৬ অর্থবছরে সেই পুনরুদ্ধারের গতি দৃশ্যমান হতে পারে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) প্রকাশিত সর্বশেষ এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক (এডিও) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৬ সালে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি বেড়ে প্রায় ৫ শতাংশে পৌঁছাতে পারে। একই সময়ে মূল্যস্ফীতি নেমে দাঁড়াতে পারে ৮ শতাংশে, যা দক্ষিণ এশিয়ার গড় প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৭ শতাংশের তুলনায় দ্বিগুণের কাছাকাছি। তবে এই সম্ভাবনাকে ম্লান করতে পারে দেশে বিদ্যমান চার বড় চ্যালেঞ্জরাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, ঘন ঘন বন্যা, শ্রমিক অস্থিরতা ও উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি। গত মঙ্গলবার এডিবির সেপ্টেম্বর এডিও প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে, ২০২৪২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ৪ শতাংশ, আর তার আগের বছর ৪ দশমিক ২ শতাংশ। তৈরি পোশাক খাত রপ্তানিতে শক্ত অবস্থান ধরে রাখলেও অভ্যন্তরীণ চাহিদা দুর্বল হয়ে পড়েছে। তবু শক্তিশালী রেমিট্যান্সের প্রবাহ এবং জাতীয় নির্বাচনসংশ্লিষ্ট ব্যয় বৃদ্ধির কারণে আগামী দিনে ভোগব্যয় বাড়বে, যা প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হয়ে উঠবে। এ প্রসঙ্গে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর হো ইউন জিয়ং বলেন, ‘বাংলাদেশের বাণিজ্যে মার্কিন শুল্কের প্রভাব এখনো স্পষ্ট নয়, আর ব্যাংক খাতের দুর্বলতাও কাটেনি। ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধি নির্ভর করবে ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নয়ন, বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা ও নির্ভরযোগ্য জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করার ওপর। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা গেলে উচ্চ প্রবৃদ্ধির পথে হাঁটবে বাংলাদেশ।’

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরে সরকারি হিসাবের ভারসাম্য উন্নতির পথে। ঘাটতি থেকে বেরিয়ে প্রায় শূন্য দশমিক ০৩ শতাংশ উদ্বৃত্তে পৌঁছাতে পারে, যেখানে আগের বছর ঘাটতি ছিল ১ দশমিক ৫ শতাংশ। এই উত্তরণের মূল কারণ বাণিজ্য ঘাটতি সংকোচন ও প্রবাসী আয় বৃদ্ধি। তবে কঠোর রাজস্ব ও মুদ্রানীতি এবং বিনিয়োগকারীদের সতর্ক মনোভাব নতুন বিনিয়োগকে দমিয়ে রাখতে পারে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ঝুঁকির দিকটিও স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করেছে এডিবি। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক এবং ইউরোপীয় বাজারে বাড়তি প্রতিযোগিতা বাংলাদেশের শিল্প খাতকে চাপে ফেলবে। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে রপ্তানিকারকদের পণ্যের দাম কমাতে হতে পারে, যা শিল্প প্রবৃদ্ধি সীমিত করবে। এর বিপরীতে গৃহস্থালি ব্যয়ক্ষমতা বাড়লে সেবা খাত সমপ্রসারিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধি নির্ভর করবে অনুকূল আবহাওয়া ও সরকারি সহায়তার ওপর।

অর্থনীতিবিদদের মতে, অর্থনীতির জন্য সরকার বেশকিছু সংস্কারের উদ্যোগ নিলেও সমন্বিত উদ্যোগ এখনো দেখা যাচ্ছে না। আর এসব প্রচেষ্টা কোনো কার্যকর ফল বয়ে আনছে না বলেও জানান তারা। যেমন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে ২০২৪ সালে পাঁচবার নীতিহার বাড়িয়েছে। তবে কাঁচাবাজারে সরবরাহ ব্যবস্থায় সমস্যাগুলো সমাধানে দৃঢ় উদ্যোগ নেই। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা ছাড়লেও চাঁদাবাজি এখনো নিত্যপণ্যের বাড়তি দামের কারণ বলে স্বীকার করেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ। তার ভাষ্য, ‘দীর্ঘদিনের ক্ষমতাধর সরকার এখন ক্ষমতায় না থাকলেও বাজারে অপ্রয়োজনীয় মধ্যস্বত্বভোগীরা এখনো আছেন।সুতরাং, সুদের হার বাড়ানো ও আমদানি পণ্যের ওপর শুল্ক কমানো হলেও কার্যত বর্তমানের দুই অঙ্কের মূল্যস্ফীতি কমছে না।

অর্থনীতিবিদরা বলেন, আমাদের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় সংকট হচ্ছে অনিশ্চয়তা। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা, নির্বাচনকেন্দ্রিক অনিশ্চয়তা আছে, রাজনৈতিক অস্থিরতা আছে, রাজনৈতিক সংঘাতের আশঙ্কা আছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোটেও ভালো নয়। এ রকম পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করতে খুব দ্বিধাবোধ করেন। স্বভাবতই বিনিয়োগে আমরা তার প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছি। তাঁরা বলেন, অর্থনৈতিক সূচকগুলোর পতন থামানো এবং অর্জনগুলোকে সংহত করার প্রক্রিয়া চলছে। কিন্তু সেখানে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। অনিশ্চিত অবস্থার মধ্যে কেউ বিনিয়োগ করতে চাচ্ছে না। বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় বেকারত্বের হার বাড়ছে। করজিডিপির হার কম। নাজুক অবস্থা বিরাজ করছে ব্যাংক ও আর্থিক খাতে। বিদেশি ঋণের দায়দেনা বেশি। রপ্তানি ক্ষেত্রে শুধুমাত্র গার্মেন্টসের ওপর নির্ভর করলে হবে না। রপ্তানি বহুমুখীকরণ করতে হবে। এ জন্য বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। রপ্তানির নতুন নতুন বাজার বের করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে