কেন শাপলাই চায়, ব্যাখ্যা দিল এনসিপি

| শনিবার , ৪ অক্টোবর, ২০২৫ at ৫:৫৮ পূর্বাহ্ণ

দলীয় প্রতীক হিসেবে কেন ‘শাপলা’ চাওয়া হচ্ছে, তার একটি ব্যাখ্যা হাজির করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টিএনসিপি। গতকাল শুক্রবার দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের নামে প্রকাশ হওয়া প্রায় ১৩০০ শব্দের ব্যাখ্যাটি নিজেদের ফেসবুক পেইজে শেয়ার করছেন এনসিপির একাধিক নেতা। মুখ্য সংগঠক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ও যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীবের ফেসবুকে ওই পোস্ট দেখা গেছে।

ব্যাখ্যায় গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আত্মপ্রকাশের পর থেকে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে দলটির নেতাদের সময়ে সময়ে বৈঠক ও যোগাযোগের সূত্র তুলে ধরা হয়। নাহিদ ইসলাম বলেন, নির্বাচন কমিশনের তালিকায় প্রতীক যুক্ত করতে কমিশন একটি কমিটি গঠন করে এবং সংশ্লিষ্ট কমিটি মোট ১৫০টি প্রতীক অন্তর্ভুক্ত করার জন্য চূড়ান্ত খসড়া প্রস্তুত করে। কমিটির একজন সদস্যের সঙ্গে এনসিপির একটি প্রতিনিধি দল গত ৪ জুন নির্বাচন কমিশনে বৈঠক করেন। বৈঠকে তিনি চূড়ান্ত তালিকায় শাপলা প্রতীক থাকার বিষয়টি আশ্বস্ত করেন। ব্যাখ্যায় বলা হয়, গত ২২ জুন এনসিপি রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের আবেদন করে এবং শাপলা প্রতীক সংরক্ষণের আবেদন জানায়।

দেশের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মাঝে শাপলা এনসিপির সুপরিচিত প্রতীক হয়ে উঠেছে দাবি করে নাহিদ বলেন, অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, হঠাৎ করে গত ৯ জুলাই গণমাধ্যমের খবরে এনসিপি জানতে পারে যে, নির্বাচন কমিশন শাপলাকে নির্বাচনী প্রতীক হিসেবে তফসিলভুক্ত না করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শাপলা জাতীয় প্রতীক হওয়ায় নির্বাচনের প্রতীক হিসেবে এটি বিধিমালার তফসিলভুক্ত না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে বলে সংবাদ মাধ্যমকে জানায় নির্বাচন কমিশন।

এনসিপির যুক্তি : . সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪(), জাতীয় সংগীত, জাতীয় পতাকা ও প্রতীক আদেশ ১৯৭২ এর ধারা ৪, বাংলাদেশ জাতীয় প্রতীক বিধিমালা ১৯৭২ এর বিধি ৩ এবং অন্যান্য আইন অনুসারে ‘শাপলা’ প্রতীক তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করা এবং রাজনৈতিক দলকে বরাদ্দ দিতে কোনো আইনি বাধা নেই।

. ১৯৭২ সালের আদেশের ৩য় তফসিল এবং ১৯৭২ সালের বিধিমালার পরিশিষ্ট ক তে জাতীয় প্রতীকের নকশা অংকিত আছে। নকশা অনুযায়ী জাতীয় প্রতীক হচ্ছে লালচে এবং হলুদ রঙের যুগল বৃত্তের ভেতরে লালচে এবং হলুদ রঙে অংকিত পানির ওপর ভাসমান শাপলা ফুল, দুপাশে দুটি ধানের শীষ, উপরে তিনটি সংযুক্ত পাট পাতা, যার ঠিক দুই পাশে দুটি করে চারটি তারকার সন্নিবেশ ও সামষ্টিক রূপ। ৩. অর্থাৎ জাতীয় প্রতীকের নকশা এবং রঙ ১৯৭২ সালের অর্ডারের ৩য় তফসিল ও বিধিমালার পরিশিষ্ট ক দ্বারা সুনির্দিষ্ট। তাছাড়া জাতীয় প্রতীকের শাপলাটি পানিতে ভাসমান, কিন্তু ‘ভাসমান শাপলা’ নামে কোনো প্রতীক তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করার আয়োজন ছিল না। ৪. শাপলা জাতীয় প্রতীকের চারটি স্বতন্ত্র উপাদানের একটি মাত্র উপাদান। নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে বিএনপিকে জাতীয় প্রতীকের চারটি উপাদানের একটি উপাদান ‘ধানের শীষ’ বরাদ্দ দিয়েছে এবং বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলজেএসডিকে আরেকটি উপাদান ‘তারা’ প্রতীক হিসেবে বরাদ্দ দিয়েছে। সেহেতু নির্বাচন কমিশন ‘শাপলাকে’ প্রতীকের তালিকাভুক্ত করে রাজনৈতিক দলকে বরাদ্দ দিতে পারে।

. নির্বাচন কমিশন জাতীয় ফল ‘কাঁঠালকে’ ইতোমধ্যে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির প্রতীক হিসেবে বরাদ্দ দিয়েছে এবং তৃণমূল বিএনপি নামের আরেকটি দলকে ‘সোনালী আঁশ’ প্রতীক বরাদ্দ দিয়েছে। সুতরাং ‘শাপলা’ জাতীয় ফুল হলেও দলের প্রতীক হিসেবে তালিকাভুক্ত হতে আইনি বাধা নেই। ৬. ধানের শীষ, শাপলা, পাটপাতা এবং তারকা আলাদা আলাদা করে চারটি ভিন্ন ভিন্ন বিষয়। আর এই চারের সমষ্টিই হচ্ছে জাতীয় প্রতীক। ৭. জাতীয় প্রতীকের উপাদানের মধ্যে দুটি উপাদান ইতোমধ্যে দুটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের প্রতীক হিসেবে বরাদ্দকৃত। সর্বোপরি, ‘শাপলাকে’ প্রতীকের তালিকায় না রাখার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের নীতিগত সিদ্ধান্ত ভুল আইনি ভিত্তি ও বোঝাপড়ার ওপর দাঁড়িয়ে আছে। ৮. গত ১৩ জুলাই আবেদনের অগ্রগতি জানতে চাইলেও কমিশন উক্ত কোনো ব্যাখ্যা ও অবস্থান স্পষ্ট করেনি। ১৩ জুলাইয়ের বৈঠকের পরবর্তী কোনো বৈঠকে নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে শাপলা প্রতীক বিধিমালায় অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে কোনো ধরনর আইনি বাধার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি। ৯. অর্থাৎ শাপলাকে প্রতীক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত না করার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত কোনো আইনি ভিত্তি দ্বারা গঠিত হয়নি। বরং এনসিপির প্রতি বিরূপ মনোভাব ও স্বেচ্ছাচারী দৃষ্টিভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ বলে প্রতীয়মান হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাঁতার অনুশীলন করতে গিয়ে দিঘিতে ডুবে কলেজ ছাত্রের মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধজাতিসংঘে গণতন্ত্র ও মানবিক সংহতির অঙ্গীকার তুলে ধরেছেন ড. ইউনূস : প্রেস সচিব