গত ১ জুলাই মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আকতার প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র হালদা নদী পরিদর্শনে এসে ঘোষণা দিয়েছিলেন হালদা নদীর জীববৈচিত্র্যের নিরাপত্তা বিধানে নদীতে ড্রোন উড়িয়ে নজরদারি করা হবে। তিনি ওই দিন হালদা পাড়ে (রাউজানের মোবারকখীলে) অংশীজনদের সমাবেশ শেষে একটি ড্রোন উড়িয়ে এই কর্মসূচির উদ্বোধনও করেছিলেন। উপদেষ্টার এই ঘোষণা অনুসারে নদীতে নজরদারিতে রাখার কথা চারটি ড্রোন। নদীর পাড়ের মানুষ ও মৎস্যজীবীদের অভিযোগ উপদেষ্টার ঘোষণার তিন মাসের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও নদীতে ড্রোন উড়িয়ে নজরদারির কোনো দৃশ্য তাদের চোখে পড়েনি। অভিযোগ উঠেছে উপদেষ্টা যাওয়ার পর থেকে নদীতে আগের তুলনায় আরো বেড়ে গেছে চুরি করে জালপেতে মাছ মারার ঘটনা। এখন নদীতে মাছ শিকারে ব্যবহার করা হচ্ছে কারেন্ট জাল। হালদার মৎস্যজীবী ও নদী পাড়ের মানুষের এমন অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে হালদা পাড় মাদার্শা এলাকায় স্থাপিত নৌপুলিশের সাথে কথা বলে। পুলিশের দেয়া তথ্যানুসারে শুধুমাত্র গত সেপ্টেম্বর মাসে নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে অভিযান চালিয়ে জব্দ করা হয়েছে ৩৫ হাজার মিটার জাল।
জানা যায়, নৌ পুলিশকে সাথে নিয়ে অবৈধভাবে জালপাতার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছে রাউজান ও হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন।
হাটহাজারী উপজেলার সিনিয়র মৎস্যকর্তা মোহাম্মদ শওকত আলী অভিযান পরিচালনা প্রসঙ্গে বলেন, মৎস্য বিভাগের নিজস্ব কোনো স্পিড বোট নেই। নৌপুলিশের স্পিড বোট নিয়ে তাদের অভিযান পরিচালনা করতে হয়। এই কর্মকর্তার মতে লজিস্টিক সাপোর্টের অভাবে তারা কার্যকর অভিযান পরিচালনা করতে পারছেন না। রাউজান উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন ফাহিম বলেন, হাটহাজারীর দিকে নদীর কিছু এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় রয়েছে। নদীর পাড়ের রামদাসহাট মুন্সির হাটে নৌপুলিশ এসব ক্যামেরায় নজরদারি করছে। ক্যামেরার কারণে সেখানে মাছ চোরদের উৎপাত বন্ধ রয়েছে। এই কর্মকর্তার মতে অবৈধভাবে মাছ শিকারীদের উৎপাত রয়েছে মদুনাঘাট থেকে মোহরা এলাকা ও সর্তার ঘাট থেকে নিচের দিকে নোয়াজিশপুর ইউনিয়নের ইন্দরাঘাট পর্যন্ত। এসব এলাকায় অভিযানে নেমে বেশির ভাগ জাল ধরা পড়ে। জব্দ করা জাল নদীর তীরে এনে পুড়িয়ে দেয়া হয়। হালদা নৌপুলিশ ক্যাম্পের কর্মকর্তা এ এস আই রমজান আলী বলেন, হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলা প্রশাসনের সাথে তারা অভিযানে গিয়ে গত এক মাসে ৩৫ হাজার মিটার নানা শ্রেণির জাল নদী থেকে জব্দ করে পুড়িয়ে ফেলা হয়। নদীর পাড়ে কিছু এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকায় সেখানে কোনো ধরনের জাল পাতা হচ্ছে না।
জানা যায়, নদীর কয়েক কিলোমিটার এলাকায় সক্রিয় আছে ১২টি ক্যামেরা। ‘ড্রোন দিয়ে হালদায় নজরদারি’ মৎস্য উপদেষ্টার এ ঘোষণা কতটুকু বাস্তবায়ন করা হচ্ছে এমন প্রশ্নের উত্তরে ‘হালদা নদী প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প দ্বিতীয় পর্যায়’ এর প্রকল্প পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, ড্রোনগুলো কেনা হয়েছে। এখন এসব ড্রোন উড়ানোর সার্বিক প্রস্তুতি নেয়ার প্রশিক্ষণ চলছে। তিনি অতিদ্রুত এই কর্মসূচি চালু করা হবে বলে জানান। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে হালদার নজরদারিতে প্রতিটি ড্রোন সাত লাখ টাকায় কেনা হয়েছে ঠিকাদারের মাধ্যমে।
উল্লেখ্য, বর্তমানে হালদা প্রকল্পের আওতায় ৪৬ কোটি ৩৭ লাখ ৭২ হাজার টাকার কাজ চলছে। এই প্রকল্পের আওতায় হালদার দুই পাড়ে রাউজান ও হাটহাজারীর ৬টি পুরাতন হ্যাচারি সংস্কার করে সুযোগ–সুবিধা বৃদ্ধি, হ্যাচারির পুকুর সংস্কার, ডিমসংগ্রহকারী ও মৎস্য কর্মকর্তা–কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ প্রদান, হালদার মৎস্য সম্পদ রক্ষায় অভিযান পরিচালনা ও আইন বাস্তবায়ন, দরিদ্র জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান এবং ওয়ার্কশপ, সেমিনার ও গবেষণার কর্মসূচি রয়েছে।